skip to Main Content

ফিচার I পারজিং প্যারাবল

রূপরুটিনে নতুন পণ্য ব্যবহারের পর কী জানান দিচ্ছে ত্বক? কারণগুলোই-বা কী? বেরিয়ে এসেছে অভিনব সূত্র

প্রতি মৌসুমে নতুন সৌন্দর্যপণ্যে ভরে যায় বিউটি ব্র্যান্ডগুলোর সেলফ। চটকদার বিজ্ঞাপনে অনেকে মনে করে, সেসবের প্রথম ব্যবহারেই জাদুকরি পরিবর্তন আসবে ত্বকে। কিন্তু হিতে বিপরীত ঘটে প্রায়শই। উজ্জ্বল আর ঝকঝকে হয়ে ওঠার বদলে ব্রণ, অ্যাকনে, র‌্যাশে ভরে যায় মুখ। ফলে প্রডাক্টকেই দুষতে শুরু করে সবাই। সম্প্রতি ত্বকের ওপর সৌন্দর্যপণ্যের এমন বিরূপ প্রভাবের নতুন কারণ আবিষ্কার করেছেন সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞরা। নাম দিয়েছেন স্কিন পারজিং।
বিউটি প্রডাক্টে থাকা কোনো উপাদান যখন ত্বককোষে সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন ত্বকের প্রতিক্রিয়াকে বলা হচ্ছে স্কিন পারজিং। বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড আর রেটিনলের মতো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টের ফলে মূলত সৃষ্টি হয় এটি, যা ত্বকের এক্সফোলিয়েশন প্রসেসকে দ্রুত করে। পারজিংকে অনেকেই বলে থাকে ত্বকের পাইপলাইন পরিষ্কারক প্রক্রিয়া। সাধারণত ২৮ দিন পর পর নতুন ত্বককোষ তৈরি হয়। কিন্তু রেটিনল আর অ্যাসিড এই স্বাভাবিকতাকে প্রভাবিত করে। টাইমলাইনের চেয়ে দ্রুত মৃতকোষ সারায়। ফলে নতুন ত্বককোষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় হুড়োহুড়ি করে, সময়ের আগে। যাতে প্রভাবিত হয় ত্বকের ওপরের স্তর। ব্লকেজ সৃষ্টি হয়ে দেখা দেয় ব্রণ, র‌্যাশ আর ব্ল্যাকহেডসের মতো সমস্যা। তবে স্কিন পারজিংয়ের ফলে ত্বকে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয় তা নয়। ব্রণ, অ্যাকনে আর র‌্যাশ আগে থেকেই ত্বকের ভেতরের স্তরে লুকিয়ে থাকে। পারজিং শুধু সময়ের আগে সেগুলো ত্বকে দৃশ্যমান করে তোলে। নতুন কোনো পণ্য রূপরুটিনে যোগ করার পরই এই ঘটনা বেশি ঘটে। তাই বলে যে পণ্যটি খারাপ, তা একেবারেই নয়।
স্বাভাবিক সময়ের ত্বক সমস্যা আর পারজিংয়ের ফলে সৃষ্ট স্কিন ব্রেকআউট এক নয়। পারজিংয়ের কারণে সাধারণত ইনফ্ল্যামেটরি অ্যাকনে সৃষ্টি হয়। যেমন পুঁজে পূর্ণ ব্রণ হোয়াইটহেডস, ব্ল্যাকহেডস, সিস্টস, রেড বাম্প ইত্যাদি। সাধারণভাবে ত্বকে জমতে থাকা মৃতকোষ সিবামের সংস্পর্শে এলে যে জীবাণু সৃষ্টি করে, তাই ব্রণের প্রধান কারণ। ত্বক হোয়াইট ব্লাডসেল দিয়ে এ জীবাণু দমনের ফলেই জ্বালাপোড়া দেখা দেয়, লালচে হয়, ব্যথাও করে। স্কিন পারজিং প্রক্রিয়ায় এক্সফোলিয়েশনের জন্য ব্রণের জ্বালা আরও বাড়ে। এর পরেই ত্বক ঠিক হতে শুরু করে। তাই স্কিন পারজিং হচ্ছে বলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। এটা মূলত ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠার আগের অবস্থা।
সাধারণ ব্রেকআউট আর পারজিংয়ের পার্থক্য বোঝা যায় একটু খেয়াল করলেই। স্বাভাবিক সময়ের সমস্যাগুলো বছরের যেকোনো মৌসুমেই হতে পারে। এমনকি কোনো পণ্য যদি ত্বকের জন্য জুতসই না হয়, তাতে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় বা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে, এতে ব্রণ আর অ্যাকনের উপদ্রব দেখা দিতে পারে। পারজিং মূলত দেখা দেয় নতুন কোনো সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহারের পরপর। ত্বক সমস্যার স্থায়িত্ব দিয়েও বোঝা সম্ভব পারজিং আর নরমাল ব্রেকআউটের পার্থক্য। পারজিংয়ের ফলে সৃষ্ট ত্বক সমস্যা খুব দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু নতুন পণ্য ব্যবহারে উদ্ভূত ব্রণ আর অ্যাকনে যদি ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেও না সারে, বুঝতে হবে প্রডাক্টটি ত্বকের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে ত্বকের যেসব অংশে ব্রেকআউট হয়, সেখানেই পারজিং দেখা দেয়। কিন্তু নতুন কোনো জায়গায় ব্রণ বা ব্ল্যাকহেডস দেখলে বুঝতে হবে, তা পারজিং থেকে নয়, অন্য কোনো কারণে হচ্ছে। তবে এটি সৃষ্টি হয় এমন সব কেমিক্যাল থেকে যা ত্বকের এক্সফোলিয়েশনে সহায়তা করে, যেমন- রেটিনল, আলফা এবং বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। অ্যাকনে রোধের অ্যাকটিভ উপাদান স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং বেনজয়েল পার-অক্সাইড থেকেও এমনটি হতে পারে। কিন্তু এসব উপাদান বাদে তৈরি পণ্য দিয়ে যদি ত্বক-সমস্যা সৃষ্টি হয়, বুঝতে হবে সেগুলো ট্র্যাডিশনাল ব্রেকআউট।
স্কিন পারজিং এড়ানোর উপায় নেই বললেই চলে। তবে সঠিক যত্নে থাকলে এই প্রভাব দ্রুত কেটে যায়। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ধীরে ধীরে নতুন পণ্যের ব্যবহার শুরু করতে হবে রূপরুটিনে। যেমন প্রথম সপ্তাহে রেটিনল একবার দ্বিতীয় সপ্তাহে দুবার আর তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তিনবার ব্যবহার করে আস্তে আস্তে সে মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। তবে স্কিন পারজিং হলে অপেক্ষা করাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তা নিজেই সেরে উঠবে। সে সময় বালিশের কাভার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, খোঁটাখুঁটি না করার মতো সাবধানতা দরকার। এ ছাড়া যেসব সৌন্দর্য উপাদানে পারজিং হয়, সেগুলো ত্বককে সংবেদনশীল করে তোলে। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহারটাও জরুরি।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: মিলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top