skip to Main Content

ফিচার I জিরো ওয়েস্ট

সৌন্দর্যপণ্যের প্যাকেজিংয়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিকল্পের সন্ধান মিলছে। ফলে প্লাস্টিক বিতাড়িত হচ্ছে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার

কয়েক বছর ধরে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে জিরো ওয়েস্টের আধিপত্য। একে নো ওয়েস্ট বা সাব (সাসটেইনেবল) জিরো ওয়েস্ট কিংবা ক্লিন বিউটিও বলা যেতে পারে।
পরিবেশগতভাবে পৃথিবী বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য অনেকখানি দায়ী প্লাস্টিক। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এ সম্পর্কে সচেতন না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যা হবে বেশি। বিভিন্ন বিউটি ব্র্যান্ড প্রতিবছর ৭৭ বিলিয়ন ইউনিট প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের পণ্য উৎপাদন করে, যার ৭০ শতাংশই শেষমেশ আবর্জনার ভাগাড়ে পতিত হয়। সারা বিশ্বের প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৪০ শতাংশই আসে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। জিরো ওয়েস্টের মাধ্যমেই এর সংখ্যা কমানো যেতে পারে।
পরিবেশের কথা মাথায় রেখে মোড়কমুক্ত পণ্য ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু এটি এখনো পুরোপুরি সম্ভব নয়। তবে স্কিন কেয়ার বা মেকআপ প্রডাক্টের প্যাকেজিং হতে পারে মিনিমাল, সাসটেইনেবল এবং পরিবেশবান্ধব। অনেক এথিক্যাল ব্র্যান্ড এখন সেই পথে হাঁটছে। এমন ইনোভেটিভ প্যাকেজিং আইডিয়াগুলো হয়ে উঠেছে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির লেটেস্ট ট্রেন্ড।
ইকো ফ্রেন্ডলি কনটেইনার
বেশির ভাগ পার্সোনাল কেয়ার প্রডাক্ট ওয়াটার বেসড, সে জন্য প্রয়োজন হয় লিক প্রুফ কনটেইনার। এ কারণে কসমেটিক কোম্পানিগুলো বহু বছর ধরে প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে এখন তারা ধীরে ধীরে কনটেইনারের টেকসই বিকল্প ব্যবহার করছে। এগুলো সাধারণত জীবাণুবিয়োজ্য এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। পরিবেশবান্ধব উপাদানগুলোর শীর্ষে রয়েছে রিসাইকেবল গ্লাস বা কাচ, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সিলিকন, বাঁশ ইত্যাদি। অন্যদিকে, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে আরও ব্যবহৃত হচ্ছে পোস্ট-কনজ্যুমার রেসিন। জৈব যৌগের মিশ্রণে তৈরি একধরনের পলিমার। পোস্ট-কনজ্যুমার রেসিন রিসাইকেল প্লাস্টিক থেকে বানানো হয়। এটি খুবই টেকসই। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি উৎপাদনে ভার্জিন রেসিনের চেয়ে ২৫ ভাগ কম গ্রিনহাউস গ্যাস বা কার্বন নিঃসরিত হয়।
মিনিমাল প্যাকেজিং
বিউটি ইন্ডাস্ট্রি অতিরিক্ত প্যাকেজিং কমানোর মাধ্যমে পৃথিবী বাঁচানোর মিশনে নেমেছে। তারা এ জন্য ব্যবহার করছে জীবাণুবিয়োজ্য কাগজ, কাপড়, প্ল্যান্ট বেসড র‌্যাপ ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেখানে সম্ভব, সেখানে আউটার প্যাকেজিং যেমন বাবল র‌্যাপ, সেলোফেন বক্স বা অন্যান্য জাঁকালো র‌্যাপিং থেকে দূরে থাকছে। আর কিছু লেবেল পরিবেশ রক্ষার খাতিরে আরও এক ধাপ এগিয়ে ব্যবহার করছে সিড এমবেডেড কাগজ এবং ব্যাগ। পণ্য হাতে পাওয়ার পর এগুলো মাটিতে পুঁতে দিলেই হবে। কয়েক দিন পর সেখান থেকে বের হবে শাকসবজির চারা। পরিবেশবাদীদের মতে, এই অভিনব প্যাকেজিংয়ের চেয়ে পরিবেশবান্ধব আর কিছু হতেই পারে না!
লিকুইডের সলিড ফর্ম
অনেক স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে লিকুইড প্রডাক্টের সলিড ভার্সন উৎপাদন করছে। এসবের প্যাকেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জীবাণুবিয়োজ্য কাগজ। কোনো কোনো লেবেল তো মোড়কের ধারে-কাছেও যাচ্ছে না। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট থেকে শুরু করে ময়শ্চারাইজার, ফেসিয়াল স্ক্রাব এমনকি সানস্ক্রিনও পাওয়া যাচ্ছে বার আকারে। এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার যথেষ্ট হ্রাস করা সম্ভব। এবং এটি প্রকৃতপক্ষে প্লাস্টিকের সমস্যার সলিড সল্যুশন!
ন্যাকেড প্যাকেজিং
কিছু ব্র্যান্ড ন্যাকেড বা জিরো প্যাকেজিংয়ের মতো বেশ সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রদূত ইউকে বেসড ইকো ফ্রেন্ডলি কসমেটিক ব্র্যান্ড ‘লাশ’। তারাই প্রথম ১০০ ভাগ প্যাকেজিং ফ্রি প্রডাক্ট নিয়ে আসে বাজারে। এখন অনেক ব্র্যান্ডই নেকড প্রডাক্টের আলাদা রেঞ্জ আনছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে বাথ বোম্বস, বাথ অয়েল, ম্যাসাজ বার, শ্যাম্পু বার, বাবল বার, শাওয়ার জেল।
রিফিল স্টেশন
গ্রিন মুভমেন্টে সাড়া দিয়ে অনেক বিউটি ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে রিফিলেবল প্যাকেজিং সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে পণ্য ফুরিয়ে গেলে বোতল বা টিউবটি রিফিল স্টেশনে দিলে ব্র্যান্ডগুলো রিফিল করে দেবে। এটি এখন সবার কাছেই বেশ জনপ্রিয়। কারণ, এই প্যাকেজিং সিস্টেম শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, সাশ্রয়ী বটে। অনেক নামকরা লেবেল যেমন ব্লিচ লন্ডন, লে লাবো, এলিস ফাস, আওয়ারগ্লাস, আলিমা পিউর, কেয়া উয়েস, লকসিটান তাদের পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিয়ে আসছে। স্কিন কেয়ার বা মেকআপ প্রডাক্টই শুধু নয়, এখন অনেক পারফিউম, ডিওডোরেন্ট ব্র্যান্ডও রিফিলের ব্যবস্থা করেছে।
মাল্টিপারপাস প্রডাক্ট
বিউটি ট্রেন্ডে এখন খুবই জনপ্রিয়। অনেকগুলো আলাদা মেকআপ বা স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট না কিনে এগুলো ব্যবহার করা যায়। সৌন্দর্যচর্চা পণ্যে মাল্টিপারপাস কনসেপ্ট নতুন নয়। আগে থেকেই বিভিন্ন স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড এমন পণ্য উৎপাদন করছে। এসবের ভেতর রয়েছে শ্যাম্পু প্লাস কন্ডিশনার, ময়শ্চারাইজার প্লাস সানস্ক্রিন, হোল বডি (বডি, ফেস, হেয়ার) অয়েল, মাল্টিপারপাস সুদিং বাম ইত্যাদি। এখন অনেক মেকআপ ব্র্যান্ড এমন পণ্য আনছে। যেমন চ্যাপস্টিক ব্র্যান্ডের আছে টোটাল হাইড্রেশন, যা একই সঙ্গে ময়শ্চারাইজার এবং টিন্ট হিসেবে কাজ করবে। মিল্ক মেকআপের আছে লিপ প্লাস চিকস্টিক অর্থাৎ লিপ কালার কাম ব্লাশন। টারটে ফোর ইন ওয়ান সেটিং মিস্ট- যেটি প্রাইমার, সেটিং স্প্রে, হাইড্রেশন মিস্ট, স্কিন রিফ্রেশার হিসেবে কাজ করে। এমন আরও অনেক মাল্টিপারপাস প্রডাক্ট আছে বাজারে, যেগুলো পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সাশ্রয়ী।
রিইউজেবল রিমুভার
সৌন্দর্যচর্চায় মেকআপ রিমুভার জরুরি। এ জন্য ব্যবহৃত হতে দেখা যায় মাইসিলার ওয়াটার বা ক্লিনজিং মিল্ক। তবে এখন বিউটি ট্রেন্ডে রিমুভার হিসেবে টাওয়াল স্টাইল স্পেশাল ক্লথ বেশ জনপ্রিয়। এটি দিয়ে স্কিন এক্সফোলিয়েটও করা যায়। এ ছাড়া রিইউজেবল কটন প্যাডও আছে, যেগুলো কটন এবং টেরি ক্লথ দিয়ে তৈরি। এগুলো ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। সাশ্রয়ী, টেকসইও বটে।
নো প্লাস্টিক প্রডাক্ট
জিরো ওয়েস্ট বিউটি মুভমেন্টের লক্ষ্য শুধু ভাগাড় বা সমুদ্রেই নয়, সৌন্দর্যপণ্য থেকেও প্লাস্টিককে বিতাড়িত করা। অনেক মেকআপ ব্র্যান্ড নো প্লাস্টিক পণ্য আনছে। তবে সংখ্যাটি এখনো বেশ কম। ভালো উপায় হচ্ছে মেকআপ বা স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট কেনার আগে লেবেল পড়া। ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে পিইজি (পলিইথিলিন গ্লাইকোলস), সিলিকন, নাইলন, টলিউন, ডিমেইথিকন লেখা থাকলে অবশ্যই সেটি কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এগুলো প্লাস্টিক। এ ছাড়া আরও কিছু কেমিক্যাল আছে, যা ত্বক এবং পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যেমন পেট্রোলিয়াম ডিস্টিলেটস, প্যারাবেন, লিড, মার্কারি, ফিলেটস, ফরমালডিহাইড। এসব উপাদানযুক্ত পণ্যের ধারেকাছেও যাওয়া যাবে না। এর বদলে সাসটেইনেবল বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করছে এমন ব্র্যান্ড থেকে প্রডাক্ট কেনা দরকার।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top