সাজসারাই I ক্লান্তিহরা
সঠিক মেকআপ কৌশলই যথেষ্ট। রোজার দিনগুলোয় শ্রান্তি আড়ালের জন্য
দিনভর অভুক্ত থেকে নানান কাজের ঝক্কি সামলানো সহজ নয়। তার ওপর রোজার প্রতিদিন নিয়ম করে সারতে হয় ইফতারের প্রস্তুতি। আয়োজন করতে হয় সেহরি। নিয়মমাফিক ঘুমেও ঘটে ব্যাঘাত। বিশ্রাম অপূর্ণই থেকে যায়। এ ছাড়া ঈদের প্রস্তুতিজনিত ব্যস্ততাও থাকে। সবকিছু মিলিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে দেহমন। যার প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে ওঠে চেহারায়। মলিন দেখায়। রাতারাতি এটা মুছে ফেলা যায় না। তবে মেকআপে খানিকটা কৌশলী হলে চেহারার ক্লান্তি কিছুটা লুকানো সম্ভব।
প্রথমে প্রস্তুত করে নেওয়া চাই ত্বক। এ জন্য গোলাপজল বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে হাইড্রেটিং এবং ব্রাইটেনিং প্রোপার্টি। একটি তুলার বল গোলাপজলে ডুবিয়ে তা বুলিয়ে নেওয়া যায় অথবা স্প্রে বোতলে পুরে ব্যবহার করা যায়। চটজলদি ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে। তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে ফেসপ্যাক। দই আর মধু মিশিয়ে সেটি চেহারায় রাখতে হবে মিনিট পাঁচেক। ভিটামিন বি এবং সি সংবলিত প্যাকটি ত্বক সজীব করবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে তা তুলতে হবে। এ ছাড়া কফি স্ক্রাবও ব্যবহার করা যায়। মৃতকোষ দূর করবে, আর্দ্র রাখবে আর রক্তসঞ্চালন বাড়াবে এই স্ক্রাব। অলিভ অয়েলও ম্যাসাজ করে নেওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই তেল ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে দেখায় সজীব। তবে তেল মাখলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া দরকার। এ জন্য লেমনবেসডগুলোই বেছে নিলে ভালো। তারপর মেকআপের আগমুহূর্তে বরফ ঘষে নিতে হবে চেহারায়। চোখ ডি-পাফ হবে, লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। চটজলদি চাঙা হয়ে উঠবে ত্বক।
ক্লান্ত হলে ত্বক লিপিড হারাতে শুরু করে। অর্থাৎ জলীয় অংশগুলো হারিয়ে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, খসখসে। বাড়ে মলিনভাব। ক্লান্ত ত্বকে ময়শ্চারাইজার মাখতেই হবে। এসপিএফযুক্ত লাইটওয়েট টিন্টেড ময়শ্চারাইজার এ ক্ষেত্রে ভালো অপশন। হাতের কাছে না থাকলে চটজলদি বানিয়েও নেওয়া যায় এটি। ময়শ্চারাইজারের সঙ্গে সামান্য ফাউন্ডেশন মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয় টিন্টেড ময়শ্চারাইজার। চেহারায় আরও ব্যবহার করতে হবে ব্লাশ। নিয়মিত যে শেড ব্যবহৃত হয়, তার পাশাপাশি আরেকটি উজ্জ্বল শেড মাখতে হবে ক্লান্ত ত্বকে। গালের ফোলা অংশ থেকে নিয়ে হেয়ারলাইন অব্দি। আপওয়ার্ড, আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে। বিবর্ণ ত্বককে উজ্জ্বল দেখানোর জন্য।
ক্লান্তি লুকাতে বিশেষ যত্নে চোখের মেকআপ করতে হয়। প্রথমেই ডার্ক সার্কেল দূর করা দরকার। কারণ, এটা থাকলে চোখ দেখতে আরও ছোট আর ক্লান্ত লাগে। পিচ টোনের কনসিলার ডার্ক সার্কেল ঢাকতে সহায়ক। দুই চোখের কোণ থেকে শুরু করে একটি ভি শেপ তৈরি করে নিতে হবে, গালের হাড়ের ওপর অব্দি। তারপর ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে শিমার কিংবা ক্রিম শ্যাডোর বদলে বেছে নিতে হবে হালকা ম্যাট পাউডার শ্যাডো। তা স্কিন টোনের কাছাকাছি হলে সবচেয়ে ভালো। আইশ্যাডোর রং যত হালকা হবে, চোখ তত বড় দেখাবে। রাত জাগার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্লান্তির ছাপ পড়ে চোখের কোণে। এটি দূর করতে চোখের ভেতরের কোনায় (অর্থাৎ নাকের দিকে) ছোট ব্রাশ দিয়ে হাইলাইটার মেখে নিতে হবে। সোনালি আইশ্যাডো অথবা পাউডার হাইলাইটার ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রাওবোনেও মাখা যেতে পারে হাইলাইটার। কালো কাজল ব্যবহার করা যাবে না কোনোভাবেই। পেল পিঙ্ক অথবা ন্যুড আইপেনসিল ক্লান্ত চোখের জন্য বেশি জুতসই। নিচের পাতার ভেতরের দিকে (অর্থাৎ ওয়াটার লাইন বরাবর) এ রকম আইপেনসিলের টানে চোখ উজ্জ্বল দেখায়। ক্লান্ত চোখের লালচে ভাবও কম লক্ষণীয় হয় এতে। মাসকারা মাস্ট। এটি ক্লান্ত চোখকে সজীব দেখাতে সাহায্য করে। তবে তা ব্যবহারের আগে আইল্যাশ কার্ল করে নিতে হবে। তারপর মাখতে হবে ভলিউমনাইজিং এবং গাঢ় শেডের মাসকারা। লিপস্টিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হওয়া চাই কৌশলী। ডার্ক শেডগুলোর উজ্জ্বলতম রং ঠোঁটে পরে নিলে চেহারার ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমেষেই। ঠোঁটের কিউপিএস বোতে সামান্য গোল্ডেন হাইলাইটার মেখে নিলে তা পাবে পরিপূর্ণতা।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আন্নি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন