ইন্টারন্যাশনাল I ফ্যাশন কে-পপ ট্রেন্ড
দক্ষিণ কোরীয় পপতারকাদের ফ্যাশন। ব্যতিক্রমী ও এক্সপেরিমেন্টাল। সাড়া তুলেছে বিশ্বজুড়ে। লিখেছেন শিরীন অন্যা
শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। শুধু সংগীত-ধারা নয়, দক্ষিণ কোরীয়দের কাছে এটি একটি লাইফস্টাইল। সম্প্রতি এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। ফ্যাশনের জগতেও কে-পপ প্রতিনিয়ত জুড়ে দিচ্ছে নতুন আঙ্গিক। তবে কিছু ট্রেন্ড খুব পাকাপোক্তভাবেই জায়গা করে নিচ্ছে মিলেনিয়ালদের মধ্যে।
ভিভিড আউটফিট
অন স্টেজ পারফরম্যান্স হোক কিংবা মিউজিক ভিডিও, কে-পপ তারকারা বেশির ভাগ সময়েই পোশাক হিসেবে বেছে নেন বোল্ড আর ফাঙ্কি রং। পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে তারা খুব একটা বাছবিচার করেন না। হোক সেটা হট পিঙ্ক কিংবা উজ্জ্বল ক্যানবেরি রেড। পারফরম্যান্সের সঙ্গেও খাপ খাইয়ে যায় তাদের পোশাক। মূলত কে-পপ তারকাদের এমন শিল্পীগোষ্ঠী হিসেবে ধরে নেওয়া যায় যারা পোশাকের রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসেন। তারা অন্য সব গাঢ় কিংবা একেবারে হালকা রঙের পোশাকও পরেন কখনো কখনো। পুরোটাই নির্ভর করে গানের ধরন কিংবা ভাবের ওপর। বেশির ভাগ সময়ই পোশাকে কে-পপ ট্রেন্ড মানেই উজ্জ্বল ফাঙ্কি সব রং! তবে কেউ কেউ কে-পপ ফ্যান হয়েও এই ধরনের ট্রেন্ডে নিজেকে মানিয়ে নিতে ইতস্তত বোধ করেন। সমাধানও আছে। পুরো পোশাক বাহারি রঙের না পরে ছোট ছোট জিনিস দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। যেমন উজ্জ্বল রঙের জুতা কিংবা ফাঙ্কি কোনো জ্যাকেট হতে পারে কে-পপ ট্রেন্ডের স্টার্টার প্যাক।
ইনফরমাল হেয়ারকালার
কে-পপ তারকারা বরাবরই নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে আসেন। ঘন ঘন সেগুলো পাল্টে যায়, যেমন বদল ঘটে তাদের চুলের রঙে। শুধু পোশাকের ট্রেন্ডই নয়, নতুন অ্যালবামের উদ্বোধন কিংবা কোনো মিউজিক ভিডিও এবং গানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা চুলের রঙেও পরিবর্তন আনেন। গোলাপি, নীল, সবুজ কিংবা কমলার মতো ফাঙ্কি রংগুলোও তাদের সঙ্গে বেশ মানানসই। গানের ভাবের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাকের পাশাপাশি চুলে পরিবর্তনের এমন আসক্তি শুধু কে-পপেই দেখা যায়। তবে আসন্ন অ্যালবাম সামনে রেখে কিংবা নতুন মিউজিক ভিডিওর কাজ ছাড়া তারা ঘন ঘন চুলে রং করার পক্ষপাতী নন। এমনকি তারকাদের হেয়ার কালারের বদল দেখে ভক্তরা অনেক সময় ধারণা করতে পারে যে তাদের নতুন অ্যালবাম আসছে। এক্সপেরিমেন্ট করতে হলে শুরুতেই হালকা রং বেছে নেওয়া যায়। যেমন সিলভার কিংবা মৃদু সবুজ। প্রথমে পুরো চুলের পরিবর্তে খানিকটা অংশে রং করা যেতে পারে।
এমবেলিশমেন্ট অ্যান্ড জ্যাকেট
আবহাওয়া ঠান্ডা কিংবা গরম- যা-ই হোক, স্টেজ পারফরম্যান্সের সময় তাপমাত্রা তুঙ্গে চড়ে যায়। কিন্তু কে-পপ তারকারা ভক্তদের জন্য তৈরি হতে পারফেকশনের কোনো কমতি রাখেন না। কয়েক স্তরের পোশাক থেকে শুরু করে কারুকার্যখচিত জ্যাকেট, হাই নেক গেঞ্জি কিংবা এমবেলিশমেন্টে ভরপুর জামাকাপড়- সবকিছুই হতে হবে ‘অন পয়েন্ট’। এ ক্ষেত্রেও তারা মাথায় রাখেন আসন্ন কিংবা সম্প্রতি আসা অ্যালবামের আঙ্গিকের দিকে। নৈপুণ্যের দিক থেকে রং, প্যাটার্ন কিংবা কাপড়ের ধরন একই রকম মনে হলেও সব তারকার স্টাইলিং একটা অন্যটার থেকে নিজস্ব উপায়ে অনন্য। রাফল কিংবা ফ্রিল শুধু মেয়েদের পোশাকেই ব্যবহার করা হয়- এই ধারণাকে প্রতিনিয়তই সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করছেন কে-পপ তারকারা। তারা যেকোনো স্টাইলকে একদম নিজেদের মতো করেই মানিয়ে নিচ্ছেন নতুন নতুন উপায়ে। অনেক সময়ে তাক লাগানো গ্লিটারড জ্যাকেট, কিংবা বোল্ড সব এমবেলিশমেন্ট বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ড তৈরি করছে এভাবেই। এখন ফ্যাশনের এই ধারাগুলো ট্রেন্ডের প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে। আর বাকিটা নির্ভর করে এটি কতটা নিজের মতো করে বহন করা যাবে তার ওপর।
দ্য ডিজায়ারেবল মেকআপ
কেন কে-পপ তারকাদের পারফরম্যান্সে ফ্যানগার্লদের এত আসক্তি? কেন এই ধারার ভক্তদের মাঝে প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী? সম্ভবত সেক্সি আর সাল্ট্রি মেকআপ লুকের জন্য। কালো পোশাকের সঙ্গে ওয়েট হেয়ার লুক আর ডার্ক আই মেকআপ- এই তারকাদের খুব সাধারণ একটা লুক, বিশেষ করে স্টেজ পারফরম্যান্সের সময়। বডি শিমার, সিলভার কানের দুল, চোখে গাঢ় মেরুন আইশ্যাডো- সব মিলিয়ে এটা ছেলেদের জন্য ২০২১ সালের একটা অতুলনীয় ফ্যাশন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেকআপ প্রডাক্ট একেবারেই ব্যবহার করতে না চাইলে এই লুক আনা সম্ভব। সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউটফিটের সঙ্গে এক কানের পাশে একটা সিলভার দুল ঝুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে, আর ওয়েট হেয়ার লুকের জন্য ব্যবহার করা যায় পছন্দের হেয়ার জেল। পুরো চুলে জেল মাখিয়ে সামনের দিকের কিছু চুল কপালের ওপর ফেলে রাখা যেতে পারে।
বোল্ড অ্যাকসেসরিজ
এই ফ্যাশন ট্রেন্ডের মূল এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের ফ্ল্যাশি এবং বোল্ড অ্যাকসেসরিজ। প্রতিটা কনসার্টে কিংবা মিউজিক ভিডিওতে কে-পপের বিভিন্ন অ্যাকসেসরিজ ভক্তদের নজর কাড়ে। কখনোই কোনো কে-পপ তারকাকে অন্তত দুটো অ্যাকসেসরিজ ছাড়া দেখা যায় না। ড্যাঙ্গেল ইয়াররিং, হুপড, কিংবা দুলের মধ্যে স্টিল পাঙ্ক কিপ-অন- সবই দেখা যায় তাদের খুব মানানসইভাবে বহন করতে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা যেকোনো এক কানে দুল পরেন। এই ট্রেন্ড বেশ সরবেই ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। আরও অনেক স্টেরিওটাইপের পাশাপাশি, শুধু মেয়েরাই কানে দুল পরবে, তা ভাঙতে সক্ষম কে-পপ তারকারা। আমাদের দেশে ছেলেদের গলায় মোটা কিংবা চিকন চেইন বা আংটি পরার ট্রেন্ড অতি সাধারণ। অনেকেই এক কানে ম্যাগনেটিক দুল বা রিংও পরে অহরহ। তাই কে-পপ ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার শুরুতে খুব ফ্ল্যাশি কোনো অ্যাকসেসরিজ বেছে না নেওয়াই ভালো। প্রথমে খুব হালকা ঝোলানো কিছু দুল কিংবা কানের এক পাশে ক্লিপের মতো আটকে থাকা যেকোনো অ্যাকসেসরিজ বেছে নেওয়া যায়।
ছবি: ইন্টারনেট