skip to Main Content

ফিচার I ত্বক সুন্দর চৌদ্দ দিনে!

দু সপ্তাহের অভ্যাস চেহারায় এনে দেবে লাবণ্য। সে জন্য জানা চাই কিছু নিয়ম আর উপকরণের সঠিক ব্যবহার। লিখেছেন শিরীন অন্যা

মাত্র দু সপ্তাহে সুন্দর ত্বক! বিজ্ঞাপনের মতো শোনালেও কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে এটা আসলেই সম্ভব।
হাইজিন চেক
যতই সময় কিংবা টাকা ব্যয় করা হোক না কেন, পরিচ্ছন্নতার সঠিক নিয়ম মেনে না চললে কখনোই ত্বকের যত্ন পরিপূর্ণ হবে না। সে জন্য জেনে নেওয়া দরকার, কী করা যাবে না এবং কোনগুলো এড়াতে হবে। নইলে ময়লা, তেল কিংবা যত ধরনের ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তা নিজের অজান্তেই ত্বকে বাসা বাঁধবে। খুব সহজ তিনটি ধাপে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যেতে পারে:
ক্লিন পিলো কেস অ্যান্ড বেডশিট: ঘুমানোর সময় ত্বকের তাপমাত্রা স্বভাবতই বেড়ে যায় এবং ত্বক নিজে নিজেই মেরামত হতে থাকে। নিদ্রার সঙ্গে ত্বকের সুস্থতা সম্পৃক্ত। তবে এই প্রক্রিয়ার সময় ত্বকের ঘাম, অতিরিক্ত তেল আর মরা কোষের অবশেষ বালিশে লেগে যায়। নির্দিষ্ট দিন পর পর পিলো কভার পরিষ্কার না করলে এগুলো আবার ত্বকে ফেরত যাবে এবং একই সঙ্গে চুলে খুশকি দেখা দেবে। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বালিশের কভার ধোয়া জরুরি। সপ্তাহের মাঝে বালিশ উল্টে দিতে হবে।
ক্লিন মেকআপ ব্রাশেস: মেকআপ ব্রাশ সময়মতো পরিষ্কার না করলে এতে ধুলা-ময়লা আর ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। সপ্তাহে অন্তত এক দিন ব্রাশগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মেকআপ স্পঞ্জগুলো পরিচ্ছন্ন করতে হবে প্রতিবার ব্যবহারের পরেই। কারণ, এগুলোতে ময়লা কিংবা মেকআপের অবশিষ্ট বেশি জমে থাকে।
ক্লিন হ্যান্ডস বিফোর মেকআপ: খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেওয়ার মতোই মেকআপের শুরুতেও প্রতিবার তা ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মেকআপ ত্বকে অনেক বেশি সময় ধরে থাকে। হাতের ময়লা সেই মেকআপের সঙ্গে লেগে গিয়ে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
ডেইলি হ্যাবিটস
কিছু অভ্যাস যেমন সাপ্তাহিক, তেমনি প্রতিদিনের জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেগুলো হতে পারে সুন্দর ত্বকের ভিত্তি।
ক্লেঞ্জ: ত্বক পরিষ্কার রাখার কোনো বিকল্প নেই। ঠিকঠাকভাবে কাজটি না করলে পোরগুলোতে ময়লা জমাট বেঁধে থাকবে। ফলে খুব সহজেই ব্ল্যাকহেডস দেখা দিতে পারে। ক্লিনজার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে- ফোম, মিল্ক, জেল কিংবা অয়েল। ত্বক বুঝে বেছে নিতে হবে কোনটা বেশি মানানসই। মেকআপ ব্যবহারের দিন অবশ্যই ডাবল ক্লিনজিং করে নিতে হবে। প্রথমেই একটা ভালো ব্র্যান্ডের ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ত্বকে আলতো করে ঘষে মেকআপ তুলে ফেলতে হয়। এরপর টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে ত্বকে মানানসই একটা ক্লিনজিং মিল্ক বা ফোম দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
টোন: টোনিং ত্বকের পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। টোনিংয়ের ফলে পোরগুলো সংকুচিত হয়ে ত্বকে ময়লা জমতে দেয় না। সকালে খুব হালকা কোনো টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ত্বকে সারা দিন একটা হালকা অনুভূতি দেবে। রাতের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে অপেক্ষাকৃত ভারী কোনো টোনার, যাতে সারা রাত সেটা ত্বকে কাজ করতে পারে। তবে টোনার যেমনই হোক না কেন, ত্বকের ধরন অনুযায়ী তা বাছাই করা জরুরি।
ময়শ্চারাইজ: শরীরের মতো ত্বকেরও প্রয়োজন হাইড্রেশন। ময়শ্চারাইজার স্কিনকে প্রাণবন্ত করে তোলে, সে জন্য ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি ময়শ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। সাধারণত তৈলাক্ত কিংবা একনেপ্রবণ ত্বকের জন্য জেল ময়শ্চারাইজারগুলো কার্যকর। শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রয়োজন একটু ভারী এবং ক্রিমজাতীয় ময়শ্চারাইজার। তবে স্কিন যেমনই হোক না কেন, দিনে অন্তত দুবার ময়শ্চারাইজ করে নেওয়া মাস্ট!
এসপিএফ: শুধু ময়শ্চারাইজারই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন এসপিএফও। কেননা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া অনেকাংশেই সূর্যের তাপের সঙ্গে জড়িত। অন্তত ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে এর সমাধান হতে পারে এসপিএফ ব্যবহারের সাহায্যে। তাই ত্বকে কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ ব্যবহার জরুরি, যেটায় অবশ্যই সঠিক ইউভিএ রেটিং থাকবে।
গুয়াশা: একধরনের প্রাচীন পদ্ধতি। ত্বকের যত্নে খুব কার্যকর। এতে একটা চ্যাপ্টা পাথর ব্যবহার করে ত্বকে আলতো চাপ দেওয়া হয় বড় বড় স্ট্রোকের সাহায্যে। এই ধরনের ফেসিয়াল ম্যাসাজ ত্বকের লিমফেটিক ড্রেনেজ বৃদ্ধিসহ টক্সিন দূর করে এবং মসৃণতা দেয়। এই ম্যাসাজ দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন করলে পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে। এটা হাইড্রেশন এবং রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে বলিরেখা দূর করতে কার্যকর।
উইকলি রিচুয়াল
দুই সপ্তাহে ত্বকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাপ্তাহিকভাবেও মেনে চলতে হয় কিছু স্কিনকেয়ার রুটিন।
প্রথম সপ্তাহের করণীয়
এক্সফোলিয়েট: প্রতিদিন এক্সফোলিয়েশন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর বটে, তবে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এটি করা যেতে পারে। দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর রয়েছে- কেমিক্যাল এবং ফিজিক্যাল। মুখত্বকে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করাই ভালো। এটা সুস্থ ত্বককে ক্ষতির ঝুঁকি ছাড়াই আলতোভাবে মরা কোষ তুলে ফেলে এবং পোর পরিষ্কার রাখে।
প্লে উইথ ক্লে: প্রথম সপ্তাহের মূলমন্ত্র যেহেতু ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করা, তাই ক্লে মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। এই মাস্ক পোর থেকে সব ময়লা শুষে নিয়ে ত্বকে স্বস্তি এনে দেবে। মাস্ক তুলে ফেলার সময়েই সেগুলো মাস্কের গায়ে লেগে থাকতে দেখা যাবে। এ জন্য ভালো ব্র্যান্ডের ক্লে মাস্ক বেছে নিতে হবে।
অ্যাড্রেস দ্য পিম্পলস: ত্বক একনেপ্রবণ না হলেও বিভিন্ন কারণে সময়ে-অসময়ে মুখে দু-একটা পিম্পল দেখা দিতে পারে। বাজার থেকে যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের পিম্পল ড্রাইয়িং লোশন নিতে হবে। রাতে সেটি পিম্পলের ওপর এক ফোঁটা করে দিয়ে ঘুমাতে হয়। সকালেই দেখা যাবে সেগুলো অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। এ ছাড়া বাজারে এখন ভালো মানের পিম্পল প্যাচ পাওয়া যায়। সেগুলো স্টিকারের মতো পিম্পলের ওপর লাগিয়ে রেখে নির্দিষ্ট সময় পর তুলে ফেলতে হবে।
দ্বিতীয় সপ্তাহের রুটিন
স্লিপ উইদ আ মাস্ক: দ্বিতীয় সপ্তাহের পুরোটাজুড়েই হিলিং অ্যান্ড হাইড্রেশন! তাই ভালো মানের স্লিপিং মাস্ক জরুরি। এটি এমন এক ধরনের নাইট ক্রিম, যা পুরো রাত ধরে ত্বক সুন্দর করতে কাজ চালিয়ে যায়। এ ছাড়া এই মাস্ক ত্বকের ময়শ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। কোরিয়ান প্রডাক্ট নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই পাওয়া যাবে তাদের স্লিপিং মাস্কের রেঞ্জ। শুধু বেছে নিতে হবে নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
ডিওয়াইআই ফেসিয়াল: সবশেষে ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনার পালা। ক্লিনজিংয়ের পর এবং ফেস মাস্ক ব্যবহারের আগে একটু ফেসিয়াল স্টিম নেওয়া যেতে পারে। এটি ত্বককে আরাম দেবে। এসব অভ্যাসের পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতার জন্য একটা স্বাভাবিক এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনও খুব প্রয়োজন। রাতে ঘুমানো অথবা সারা দিনে পরিমিত পানি পান করা জরুরি। ত্বক সুস্থ রাখতে কিছুদিন তেল কিংবা চিনি এড়িয়ে চলতে হবে।

মডেল: মিলা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: অদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top