ফিচার I পাউডারি স্কিন কেয়ার
তরল সৌন্দর্যপণ্যের বিকল্প। যাতে দ্রুত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেই। ত্বকবান্ধবও বটে
সৌন্দর্যচর্চায় ক্লিনজার, টোনার, ময়শ্চারাইজার ও একটি ডেইলি সেরাম- এগুলো পরিচিত বেসিক স্কিন কেয়ারের মন্ত্র হিসেবে। এসব পণ্য লিকুইড ফর্মুলায় থাকার কারণে মেয়াদ, গুণগত মান ও কার্যকারিতা ঠিকঠাক রাখাটা মুশকিল হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাকেও না। কিন্তু ফেস পাউডার, ব্লাশন, আইশ্যাডো ইত্যাদির মতো ত্বক পরিষ্কার এবং যত্নে রাখার উপকরণও যদি পাউডার ফর্মে হয়, তবে? অবাক হবার মতো বিষয় হলেও ইস্ট এশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক ট্রেন্ডের একটি হলো স্কিন কেয়ারের পাউডার ফর্ম। বিশেষ করে কোরিয়ায় এটি সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে প্রথম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। দেশটির অনেক পাইওনিয়ার প্রডাক্ট এই ফর্মুলায় কয়েক বছর আগেই প্রথম বের হয়। আর কোরিয়ান স্কিন কেয়ার কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনী সব পণ্য তৈরিতে জুড়ি নেই। তাদের পথ অনুসরণে এগিয়ে থাকা প্রসাধনী ব্র্যান্ডগুলোও প্রচলিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে এই ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। বেশির ভাগ সাধারণ স্কিন কেয়ার পাউডার ভিটামিন সি-এর মতো কমপ্লেকশন-বুস্টিং নির্যাস সমৃদ্ধ। যদি একই ধরনের মৌলিক উপাদানে ফেসওয়াশ এবং সেরাম বোতলজাত হয়, তবে কেন পাউডার নয়? স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের পাউডার ফর্মে প্রচলিত লিকুইড প্রডাক্টের চেয়ে সক্রিয় উপাদানগুলোর অনেক বেশি ঘনত্ব রয়েছে। সেগুলো হলো এমন কিছু, যা নির্দিষ্ট সমস্যার চিকিৎসার জন্য ডিজাইন করা। এই উপকরণ ইফেক্ট তৈরি করে এবং কোনো না কোনো উপায়ে ত্বক ঠিকঠাক করে নেয়।
সময়টা এখন পাউডার স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের। এখন ক্লিনজার থেকে শুরু করে মাস্ক সেরাম- সবই পাওয়া যাচ্ছে পাউডার ফর্মে। সৌন্দর্যচর্চায় এটি জনপ্রিয় অপশনে পরিণত হওয়ার কিছু পজিটিভ কারণ রয়েছে। তার একটি হলো এগুলো তৈরিতে পানি ও এনার্জি কম লাগে বলে প্রচলিত লিকুইড ফর্মুলার চেয়ে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া পাউডার স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট সাধারণত ত্বকে জ্বলুনি তৈরি করতে পারে এমন কেমিক্যাল প্রিজারভেটিভ মুক্ত। এই পণ্যের একটি ভালো দিক হলো, এর সক্রিয় উপাদানগুলোর ঘনত্ব ও অধিক সময় মেয়াদ থাকা। এগুলো ঘন হওয়ার কারণে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়। ফলে এখন লিকুইড স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের বদলে এই দানাদার বিকল্পগুলো গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়ছে।
পাউডার ক্লিনজার। কোমল কিন্তু কার্যকর ক্লিনজিংয়ের জন্য ওটমিল, কোকোনাট মিল্ক, ল্যাভেন্ডার ও গোলাপের পাপড়ির মতো কোমল সব উপকরণ মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
ড্রাগ স্টোরে মিলবে পাউডার ক্লিনজিং স্ক্রাব। এটি আসলে বেকিং সোডা। যা থেকে পাওয়া যাবে এক্সফোলিয়েটিং সুবিধা। এই স্ক্রাব ত্বক জ্বলুনি ও শুষ্ক করা ছাড়াই লোমকূপের গভীর থেকে তৈলাক্ততা ও ময়লা দূর করে।
রেগুলার ক্লিনজার ও ফেসমাস্কের কার্যকর এক্সফোলিয়েটিং বিকল্প হওয়ার পাশাপাশি কাস্টমাইজ করে দেবে রূপ রুটিনকেও। পাউডার ফর্ম হওয়ায় কতটুকু বা কী দিয়ে ব্যবহার করতে হবে, তা নিজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। ব্যবহার করা যেতে পারে ডেইলি ক্রিমের পরিবর্তে। কেননা এখন সময় রূপ রুটিনে কোলাজেন অন্তর্ভুক্ত করার কিংবা তিন বা চার স্তরের সেরাম প্রয়োগের।
কোলাজেন, ভিটামিন সি, হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং সেন্টেলা এশিয়াটিকা একটি উদ্ভিদ, যা প্রদাহকে শান্ত করতে, ক্ষতগুলোকে পুষিয়ে নিতে এবং নতুন কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে সহায়ক। শুধু প্রয়োজনীয় পাউডারের কিছুটা সেরাম বা ডেইলি ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেই হলো। তাতেই ত্বক সতেজ দেখাবে। ত্বক পুষ্ট করে তুলতে চাইলে সেরামের সঙ্গে কিছুটা কোলাজেন পাউডার মিশিয়ে নেওয়া যায়। ত্বক জ্বলুনি থেকে প্রশান্ত করতে জেল-টাইপ ক্রিমের সঙ্গে সেন্টেলা এশিয়াটিকা মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। ময়শ্চার লেভেল বাড়ানোর প্রয়োজন হলে নাইট ক্রিমে হায়ালুরনিক অ্যাসিড মিশিয়ে নেওয়া যায়। উজ্জ্বল ত্বক পেতে এই মিশ্রণে ভিটামিন সি যোগ করে নিতে হয়।
ক্লিনজার, ফেসমাস্ক এবং স্কিন বুস্টারের ঘন পাউডার ফর্ম সৌন্দর্যপ্রিয়রা আস্থার সঙ্গে ব্যবহার করছেন এর কার্যকারিতা ও দীর্ঘ মেয়াদের কারণে। পাউডারের আরেকটি ভালো দিক হলো, ক্রিম ও লোশনের তুলনায় এর প্রয়োগ বা ব্যবহার আরও বেশি স্থিতিশীল এবং স্থায়ী। অর্থাৎ, বৈশিষ্ট্যের কোনো হেরফের ছাড়াই এরা ত্বকে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে। তরল পণ্যের চেয়ে এতে অনেক কম প্রিজারভেটিভ থাকায় এর আর্দ্রতা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। প্রিজারভেটিভ ও অ্যালকোহল মুক্ত হওয়ায় সংবেদনশীল ও অ্যালার্জিযুক্ত ত্বকের জন্য একটি ভালো বিকল্প। কেননা এতে জ্বলুনি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই স্থিতিশীল পাউডারগুলোর দীর্ঘস্থায়ী মেয়াদ ও উচ্চতর ঘনত্বের কারণে এগুলো বেশ পরিবেশবান্ধব।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: সনিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ফারাবী তমাল