ব্লগার’স ডায়েরি I ডিজিটাল কনটেন্ট
আমার ‘ফ্যাশন এবং লাইফস্টাইল’ নিয়ে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বয়স আড়াই বছরের বেশি হবে না। যাত্রার শুরু থেকে আজ অবধি অর্জিত জ্ঞান জমিয়ে রেখেছি ক্রিয়েটরদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই ছোটবেলার স্টাইলিং আর ফ্যাশন-সচেতনতা থেকেই শুরু আমার ব্লগিংয়ের পথচলা।
প্রথম দিকে আগ্রহী ছিলাম আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত ওয়্যারড্রোবের প্রতি। জুতা, সাদামাটা মেকআপ আর অতিসাধারণ সব পোশাক-আশাকের সঙ্গেও যে উচ্চমানের ফ্যাশন আবহ তৈরি করা সম্ভব, সে চেষ্টাই করতাম। এ ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী টার্গেটে রেখে তবেই ব্লগ তৈরির কাজে লেগে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম ‘প্যারিস ফ্যাশন উইক’ আর ‘লন্ডন ফ্যাশন উইক’-এর ডিজাইনগুলো দেখে। সেখান থেকে পছন্দের গ্রাহকও মনে মনে বাছাই করে নিয়েছিলাম। যারা কেবল উঁচু মাপের পশ্চিমা ফ্যাশনের সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় হালকা ফ্যাশনের ফিউশন ডিজাইনে আগ্রহী, তাদেরকেই টার্গেট জনগোষ্ঠী ধরে নিয়েছিলাম। একমাত্র তারাই আমার বহুল আকাক্সিক্ষত অনুসারী হবে বলে মনে হয়েছিল।
যেই ভাবা সেই কাজ! নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী ব্লগিং এবং কনটেন্ট তৈরি করা মাত্র অনুরাগীদের থেকে অসংখ্য০ ইতিবাচক সাড়াও পেলাম। ওরা কেবল আমার কনটেন্টের ধরনগুলোর প্রশংসা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং সবার মাঝে যে উঁচু মাপের ফ্যাশন আইডিয়া ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেটারও সমাদর করেছে। ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন নতুন আবহ তৈরিতে নেওয়া প্রতিটি ঝুঁকিকে যথাযথ মূল্য দিয়েছে তারা। মনে আছে, ব্যালে নৃত্যশিল্পীদের জন্য একটা ফ্যাশন থিম বানিয়ে ছিলাম, যেটার জন্য আজ অবধি প্রশংসা পাচ্ছি। যাহোক, ‘কী’ তৈরি করব এবং ‘কার জন্য’- এসব বিষয় নির্ধারণের পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে নতুন এবং অভিনব সব আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে হয়েছিল কনটেন্টগুলোতে। বলা যায়, এসব কারণেই আমার কাজগুলো আজ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
একজন সফল ব্লগার হওয়ার পেছনে সংগ্রামের ইতিহাসও কম ছিল না। কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এই মহাসমুদ্রে অনেকেই কোয়ালিটির কথা চিন্তা না করে একের পর এক কাজ করে যায়। কখনো ফলোয়ারই আমার-আপনার কাছে বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে। আবার দেখা যায়, উঁচু মাত্রার ফ্যাশন আইডিয়া অনেক কমসংখ্যক লোক গ্রহণ করছে! এটা আমাদের সমস্যা নয়। কেননা, এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এমনও অনেক গ্রাহক রয়েছে, যারা মাত্র ফ্যাশন-সচেতন হয়েছে কিংবা আদৌ ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতন নয়। ফ্যাশন জগতে ইউনিক সব কনটেন্ট উপহার দিতে গিয়ে বিশেষ করে তাদের রুচি আর পছন্দ বুঝতেই আসল সংগ্রামটা করতে হয়েছে। তবে যারা ফ্যাশনশিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং নিয়মিত গ্রাহক, তারা বরাবরই আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
চিন্তার বিষয় এই যে, প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন। ব্যতিক্রমী এই যাত্রাপথে কতভাবে যে নিরুৎসাহিত হতে হয়েছিল, তা অবশ্যই তাদের জানাব। যদিও এসব গল্প ইতিমধ্যে সহকর্মীদের শুনিয়েছি। আসলে ব্লগিংয়ের ব্যাপারটা সরাসরি ভেতর থেকে আসে আর এটা দারুণ উপভোগ্য! স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, ফ্যাশন বা লাইফস্টাইলই হোক অথবা খেলাধুলা; প্রতিটি ক্ষেত্রেই তথ্যবহুল হতে হবে। যাতে এর মাধ্যমেই আপনি নিজের মতামত, পছন্দ বা রুচিবোধের জানান দিতে পারেন। ঠিক এভাবেই যখন আপনি ব্লগিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন, আপনার কাক্সিক্ষত গ্রাহকগোষ্ঠীকে অনায়াসে পেয়ে যাবেন। আমি মনে করি, যারা আমার কনটেন্ট বোঝেন এবং আমাকে উৎসাহিত করেন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারাই যথেষ্ট। যদি আপনি কনটেন্ট তৈরি, ব্লগিং এবং ফ্যাশন জগতে নতুন মুখ হয়ে থাকেন, এটা বিশ্বাস করে কাজ শুরু করুন যে আপনি কখনোই সব ধরনের গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। এমনকি আপনার আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে সব ধরনের গ্রাহক পাওয়া জরুরিও নয়। কেননা, দিনশেষে আপনি যে কজন গ্রাহককে জয় করে নিতে পারবেন; তারাই স্পেশাল, আপনার জন্য আশীর্বাদ!
ত্রয়ী চৌধুরী
ছবি: সৈকত মাহমুদ
কুর্তি: এলি
জুতা: রেভ
স্টাইলিং: ত্রয়ী চৌধুরী
ফেসবুক: troyee.chowdhury
ইনস্টাগ্রাম: troyeechy
ছবি: আবিদ হায়াত খান