সেলুলয়েড I ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন
চিত্রনাট্য ও প্রযোজনা : সালাউদ্দিন
পরিচালনা ও সম্পাদনা : বশীর হোসেন
সংগীত পরিচালনা : সত্য সাহা
কাহিনি ও সংলাপ : খান জয়নুল
চিত্র গ্রহণ : এম এ সামাদ
পরিবেশনা : পপুলার ফিল্ম অ্যান্ড থিয়েটার্স
অভিনয় : সুমিতা, সুজাতা, আনোয়ারা, সিরাজ, বেবী জামান, কামাল আহমেদ, খান জয়নুল, রাজ্জাক প্রমুখ।
মুক্তি : ১৯৬৬
দৈর্ঘ্য : ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট
সিনেমা বিনোদনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। আর চলচ্চিত্রের গল্প যদি হাস্যকৌতুকে ভরা হয়ে থাকে, তাহলে তাতে যোগ হয় বাড়তি আনন্দ। এ ধরনের কাহিনির প্রতি সবার আগ্রহ প্রায় চিরদিনের। ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন সিনেমাটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-ইতিহাসে এই ধারার গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। একটি বাড়িতে দুটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এর চিত্রনাট্য। স্বামী-স্ত্রী ও একজন করে চাকর নিয়ে ছয়জন বাস করে এখানে। এক দল বাড়িওয়ালা, অন্য দল ভাড়াটে।
দরিদ্র স্বামী-স্ত্রী ঠিকমতো ভাড়া দিতে না পারায় তাদের সঙ্গে বাড়ির মালিক দম্পতির প্রায়ই কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়া লেগে থাকে। এমনকি তাদের দুই চাকরের মধ্যেও সেসব নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে ঘটনার শুরুতে ভাড়াটে মহিলার বোন এসে উপস্থিত হয়। অন্যদিকে বাড়িওয়ালির ভাই বেড়াতে আসে। প্রথমে তাদের মধ্যে তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে তর্ক বাধলেও একপর্যায়ে তা প্রেমে রূপ নেয়। যদি পরিবারের প্রধান সদস্যরা তাদের ভাই-বোনের অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে। আয়োজন করা হয় বিবাহ অনুষ্ঠানের। দাওয়াত দেওয়া হয় প্রতিবেশীদের। বিয়ের দিন সবাই এলেও পরিবারের ব্যবস্থাপনায় ঠিক করা পাত্রপাত্রী তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এদিকে এই দুই পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে সুজাতা ও সিরাজের বিয়ে দিতে বাধ্য হন।
ভাড়া দিতে না পারায় দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া থালাবাটি ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু দারিদ্র্যের প্রভাব এড়িয়ে সিনেমার গল্পে হাস্যরসই প্রধান হয়ে উঠেছে। চাকর দুজনের একজন চতুর, অন্যজন বোকা। তাদের আচরণও কৌতুককর। কিন্তু তা পরিমিতির মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। সদস্যদের মধ্যে একবার মারামারিও হয়, কিন্তু সেই দৃশ্যও দর্শকদের হাসির উদ্রেক করে।
সিনেমায় একটি গান রয়েছে, ‘গান নয় গান নয় যেন সাইরেন’। ফেরদৌসী বেগমের কণ্ঠে। সংগীতের কথাতেই বোঝা যায়, এ দিয়ে কাউকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। আসলে বাড়িওয়ালি হারমোনিয়ামের সঙ্গে গলা সাধলে সেই বিকট সুর সবার বিরক্তির কারণ হলে সুজাতা গেয়ে ওঠে গানটি। এটিও পরিবেশ এবং কাহিনির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃশ্যরীতি সংযোজনের ফলে হয়ে উঠেছে মনোগ্রাহী। গলা সাধার সময় চাকর দুজনকেও উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে দেখা যায়।
সাদা-কালো এ সিনেমায় রাজ্জাক প্রথম অভিনয় করেন। যদিও ছোট্ট একটি চরিত্র এবং স্বল্প সময়ের উপস্থিতি, তবে তা ছিল সাবলীল। অন্য কলাকুশলীদের অভিনয়েও সহজ এবং স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষণীয়। পোশাক ও মেকআপে বাহুল্য নেই; বরং ষাটের দশকের নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষের সামর্থ্য মেনেই তা করা হয়েছে। বাড়তি বা চড়া সাজ নেই। একটা আটপৌরে আবহ এ সিনেমার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
তা ছাড়া হাসির সিনেমা বা চলচ্চিত্রে বিনোদনের উপাদান হিসেবে কৌতুক অভিনেতাদের নানান ক্যারিকেচার রাখার একটা চল আছে, যা অনেক সময় আরোপিত মনে হয়। অথবা হাসানোর জন্যই সেসব দৃশ্য জোর করে সংযোজন করা হয়। ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন সিনেমাটি এই প্রবণতা থেকে মুক্ত; বরং এখানে প্রধান ও অপ্রধান সব চরিত্রই চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে সাবলীল অভিনয় করেছেন। আর তাই হয়ে উঠেছে হাস্যরসাত্মক।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১. কোন বিখ্যাত শিল্পী এই সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন?
[ক] আনোয়ারা
[খ] রাজ্জাক
[গ] খান জয়নুল
[ঘ] ওপরের কেউ নন
২ এই সিনেমার গানে কণ্ঠশিল্পী কে?
[ক] সাবিনা ইয়াসমীন
[খ] রুনা লায়লা
[গ] ফরিদা ইয়াসমীন
[ঘ] ফেরদৌসী বেগম
৩ সিনেমাটির কালার কম্বিনেশন কী ছিল?
[ক] সাদা-কালো
[খ] রঙিন
[গ] আংশিক রঙিন
[ঘ] ওপরের কোনোটিই নয়
গত পর্বের বিজয়ী
১। শিবলী মুক্তাদির, মিরপুর, ঢাকা ২। সৈকত হাসান, টাঙ্গাইল ৩। কনক বিশ্বাস, কুষ্টিয়া