ফরহিম I টু প্রোটেক্ট হেয়ার ফল
ঝরে পড়ার বালাই থেকেও রেহাই মেলে। উপকরণ রয়েছে হাতের কাছেই। মানতে হবে কিছু নিয়ম। লিখেছেন শিরীন অন্যা
চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। যত্ন নেওয়ার পরেও দুশ্চিন্তা কিংবা কোনো নির্দিষ্ট মেডিকেশন বা ডায়েটের ফলে যেন তা বন্ধই হতে চায় না। তা ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অথবা অতিরিক্ত ধুলাবালিজনিত দূষণেও চুল পড়ে। আরেকটি কারণেও ছেলেদের চুল পড়তে পারে, যা ডিএইচটি সেনসিটিভিটি নামে পরিচিত।
ডিএইচটি বা ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হলো পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা দাড়ি এবং চুলের বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি এক ধরনের অ্যান্ড্রোজেন, যা দেহের পুরুষ-বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তোলে, যেমন শরীরের লোম, দাড়ি ইত্যাদি। এই ডিএইচটি চুল পড়ারও কারণ হতে পারে। এটি মাথার ত্বকে চুলের ফলিকলের চারপাশের রিসেপ্টরগুলো সংকুচিত করে। চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানগুলো পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ঝরে পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। তবে কিছু প্রাকৃতিক ডিএইচটি ব্লকার রয়েছে, যা এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এগুলো শরীরে প্রাকৃতিকভাবে প্রায় ৫% টেস্টোস্টেরনকে ডিএইচটিতে রূপান্তর করে। এটি ৫-আলফা রিডাক্টেস নামক একটি এনজাইমের সাহায্যে করা হয়। আর ডিএইচটি ব্লকারগুলো এই এনজাইমকে আটকে রেখে চুল পড়া কমায়।
নারকেল তেল
চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। নারকেল তেলে মূলত লোরিক অ্যাসিড রয়েছে, যা মিডিয়াম চেইন ট্রাইগি সারাইডস (এমসিটি) থেকে উচ্চমানের ফ্যাট তৈরি করে। এটি ডিএইচটি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে বলে বেশ কিছু সমীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন নারকেল তেলের ব্যবহার চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করবে এবং ঝরে পড়া কমাবে। সবচেয়ে বেশি উপকার হবে যদি সারা রাত চুলে তেল মেখে রেখে দেওয়া যায়।
পেঁয়াজ
কোরস্যাটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে পেঁয়াজে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে কোরস্যাটিন দেহে ডিএইচটি উৎপাদনে বাধা তৈরি করে। পেঁয়াজ ভালোভাবে ব্লেন্ডিংয়ের পর রস করে নিতে হবে। এবার পছন্দের যেকোনো তেল যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ঘষে ঘষে মাখাতে হয়। এ ছাড়া ডিম কিংবা লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়েও মাখানো যেতে পারে স্ক্যাল্পে। যেকোনো ভালো অনলাইন পেজ থেকেও সংগ্রহ করা যায় পেঁয়াজের তেল। এ ছাড়া বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের অনিওন অয়েলও বেছে নেওয়া যায়। স্প্রুস শেভ ক্লাবের রেড অনিওন অয়েল কিংবা বিয়ার্ঢহুড ব্র্যান্ডের অনিওন শ্যাম্পু এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া আপেল, অ্যাসপারাগাস এবং পালংশাকের মতো কোরস্যাটিন সমৃদ্ধ অন্যান্য ফল এবং শাকসবজি ডিএইচটি ব্লকারের আরও কয়েককটি উৎস।
স পাল্মেট্টো
এক প্রকার পাম গাছ, যা ফ্লোরিডার মতো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে বেড়ে ওঠে। প্রচলিত পাম গাছের তুলনায় এটি আকারে খানিকটা ছোট এবং ঝোপজাতীয়। অনেকের কাছে এটি আমেরিকান ডোর্ফ পাম ট্রি নামেও পরিচিত। গাছগুলোতে বেরি আকৃতির একধরনের ফল হয়, যার নির্যাসে প্রায় ৯০ শতাংশ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং স্টেরল নামের একধরনের লিপিডের উপস্থিতি রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পাল্মেট্টো এক্সট্র্যাক্ট মাথার ত্বকে ফলিকলের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং ইনফ্ল্যামেশনের প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইনফ্ল্যামেশন চুলের ফলিকল ধ্বংস এবং চুল বাড়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে। আরেকটি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট সংখ্যার ৪৮ শতাংশের চুলে বৃদ্ধি ঘটেছে এই স পাল্মেট্টো এক্সট্র্যাক্টের মাধ্যমে। তাই এর সেরাম শ্যাম্পু কিংবা তেল চুল পড়া রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
গ্রিন টি
ইজিসিজি নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি এমন এক ধরনের রাসায়নিক, যা গ্রিন টির মাধ্যমে ওজন হ্রাস, হার্টের সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যের অন্যান্য উপকার করে থাকে। তবে গ্রিন টি অনেকের ক্ষেত্রেই ডিএইচটি ব্লকার হিসেবে কাজ করে। এটি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও চুলপড়া রোধে ব্যবহৃত বেশ কিছু প্রডাক্টেই এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন বোল্ড কেয়ারের কুইক অ্যাকশন হেয়ার গ্রোথ সিস্টেম কিংবা রিজুভিনেটিং উবটানের নাইন হার্বস এনরিচড হেড ম্যাসাজ অয়েল এমনই কিছু প্রডাক্ট।
কুমড়ার বীজ
২৪ সপ্তাহ ধরে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অন্তত ৪০০ গ্রাম কুমড়ার বীজের সাপ্লিমেন্ট খেয়েছেন, তাদের চুল উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কুমড়ার বীজ এবং এর তেল—দুটোই ডিএইচটি ব্লকার হিসেবে কাজ করে। ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে এই সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যায় অথবা যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের কুমড়ার বীজের তেলও সংগ্রহ করা যেতে পারে। এতে চুলের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধি—দুটোই নিশ্চিত হবে। তবে চুল পড়া রোধের উপায় হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
বায়োটিন
চুল ও ত্বকের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়োটিন বি ৭ নামেও পরিচিত। চুলের পুনরায় বৃদ্ধিতে কাজ করে এমন প্রায় সব সেরামেই বায়োটিনের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এমনকি বিভিন্ন কেয়ার গ্রোথ সাপ্লিমেন্টের উপাদানের তালিকায়ও রয়েছে এটি। যদিও বায়োটিন নিজে কোনো ডিএইচটি ব্লকার নয়, তবে এটি ডিএইচটি ব্লকারের পাশাপাশি একটি আনুষঙ্গিক উপাদান হতে পারে। আর এটি ব্যবহারের ফলে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত হবে এবং ঝরে পড়ার সমস্যাগুলো আরও কার্যকরভাবে রুখে দেবে।
মডেল: সুমিত
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: মর্তুজা আলম