ফিচার I যা কিছু বারণ
সাজতে গিয়ে কিছু ভুল তো হয়ই। উপকরণ প্রয়োগে, নয়তো টেকনিকে। সতর্কতায় তা এড়ানো সম্ভব
এখন ন্যাচারাল কিংবা নো মেকআপ মেকআপ—এগুলোই সবার গো টু লুক। এই মেকআপ লুক মানেই ফেদারড আইব্রাওজ, গ্লোয়ি স্কিন কিংবা ত্বকে একধরনের গোলাপি আভা। কিন্তু মিলিমাল মেকআপ আর হালকা গ্ল্যাম মেকআপ লুকের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা আছে, যা একে অপর থেকে একটু আলাদা করে। খুব বেশি মাসকারা ব্যবহার, উইংড আইলাইনার কিংবা বেশ গাঢ় করে ব্রাও আঁকা—এসবের পাশাপাশি আরও কিছু ভুল হয়ে থাকে, যেগুলো ন্যাচারাল মেকআপ লুককে নষ্ট করে।
নো প্রেপ
যেকোনো মেকআপের পূর্বশর্ত হলো সঠিক প্রস্তুতি। ক্যানভাস যদি ঠিক না থাকে, তবে মেকআপের সৌন্দর্য সৃষ্টি করা কঠিন। আর মিনিমাল মেকআপ পুরোটাই প্রাকৃতিক ত্বককে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টামাত্র। তাই সঠিকভাবে স্কিনকে মেকআপের জন্য তৈরি করে নেওয়া খুবই জরুরি। এই প্রস্তুতির শুরু হতে পারে মৃদু এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে। এ জন্য পছন্দের যেকোনো স্ক্রাব বেছে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে উইশফুলের ইয়ো গ্লো এনজাইম স্ক্রাব খুব ভালো কাজ করে। তবে স্ক্রাব করার সময় না পেলে বিকল্প হিসেবে একটা ভালো ব্র্যান্ডের টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোনো ব্র্যান্ডের এ এইচ এ, বি এইচ এ, পি এইচ এ টোনার ত্বক মসৃণ করে তুলবে মুহূর্তেই। ত্বকের টেক্সচার ঠিক করে নেওয়ার পর এবার হাইড্রেশনের পালা। হাতে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মুখে একটা শিট মাস্ক লাগিয়ে নিতে হবে। অ্যালোভেরা, সোডিয়াম হায়ালুরনেট কিংবা নিয়াসিনামাইড বিশিষ্ট শিট মাস্ক বেছে নেওয়া যায়, এই উপাদানগুলো ত্বকে একটা স্বাভাবিক গ্লো এনে দেবে আর মেকআপের স্তর থেকে ত্বককে রক্ষাও করবে। শিট মাস্ক তুলে ফেলে মাখিয়ে নিতে হবে পছন্দের সেরাম। তবে খেয়াল রাখা দরকার, সেটা যেন হয় একেবারেই লাইটওয়েট। ব্যস! ত্বক মিনিমাল মেকআপ অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রস্তুত।
টু ম্যাট অন ফেস
ন্যাচারাল মেকআপ পুরোটাই ফেসের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতার ওপর নির্ভর করে। তাই খুব বেশি ম্যাট প্রডাক্ট কিংবা পাউডার বেইজড ফর্মুলার ব্যবহার লুককে একটু কর্কশ কিংবা রুক্ষ করে দিতে পারে। ক্রিম প্রডাক্ট ত্বকে খুব সহজে মিশে যাবে, ফলে মেকআপ কেকি করে তুলবে না। ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত হয়ে থাকলে আলতোভাবে পাউডার ব্রাশ করে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে মুখের তৈলাক্ত ভাব তৈরি হতে পারে এমন স্থানেই তা করতে হবে। ত্বকে আরও বেশি উজ্জ্বল আর দীপ্তিময় ফিনিশিং আনতে বেইজ প্রডাক্টের সঙ্গে এক ফোঁটা সেরাম মেশানো যেতে পারে হাতের ওপরে। এবার আস্তে আস্তে চেপে ত্বকে মাখিয়ে নিতে হবে মেকআপ।
টু হেভি অন আইজ
অনেকেরই আইলাইনার আর ফলস ল্যাশেসের প্রতি আসক্তি আছে। কেউ কেউ তো প্রতিদিনের চোখের মেকআপ হিসেবে শুধু আইলাইনারই বেছে নেন। তবে মিনিমাল মেকআপের ক্ষেত্রে চোখের ক্রিজ সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটা ছোট ফ্লাফি ব্রাশ নিয়ে যেকোনো ন্যুড শ্যাডো ব্রাশ করে নিতে হয়। পছন্দমতো ন্যুড শেডের কোনো ব্লাশ বা ব্রোঞ্জারও বেছে নেওয়া যায়। ওই একই শেড নিয়ে চোখের নিচের ল্যাশ লাইন হালকাভাবে কনটুর করে নেওয়া যেতে পারে। ল্যাশের জন্য থাকতে পারে ব্রাউন মাসকারা। কারণ, এটা কালো মাসকারার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি ন্যাচারাল লুক এনে দেবে। এখন বেশ কিছু ব্র্যান্ড ব্রাউন মাসকারা এনেছে বাজারে, তবে মেবলিনের স্ন্যাপ্সকারা ওয়াশেবল মাসকারা খুব সুন্দর এবং ফেদারি লুক এনে দেবে ল্যাশেজে। আইব্রাওজের ক্ষেত্রে খুব গাঢ় করে আইব্রাও আঁকা ভেস্তে দিতে পারে পুরো ন্যাচারাল আই মেকআপ। তাই বেছে নেওয়া যায় একটা টিন্টেড কিংবা ক্লিয়ার ব্রাও জেল। এটা আইব্রাওকে একটা গ্রিসি ফিনিশ দেবে এবং আইব্রাও সেট করে রাখবে পুরো দিনের জন্য। জেল দিয়ে শেপ করে নেওয়ার পর পছন্দের ব্রাও পেনসিলে আইব্রাওজের শেপেই খুব ছোট ছোট স্ট্রোকে এঁকে নেওয়া যায় ভ্রু। খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্রাও পেনসিল খুব সূক্ষ্ম করে কাটা থাকে। বেনেফিট কসমেটিকসের ২৪ আওয়ার ব্রাও সেটার শেপিং জেল আর হুদাবিউটির বম্বব্রাও মাইক্রোশেইড ব্রাও পেনসিল রয়েছে ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের শীর্ষে।
ফরগেটিং দ্য ব্লাশ
ন্যাচারাল মেকআপের মূল বিষয় গালের একটা স্নিগ্ধ গোলাপি আভা। এই ধাপটি বাদ দিলে চেহারা দেখাবে ফ্যাকাশে। তাই পছন্দের হালকা রঙের ব্লাশ বেছে নিতে হয়। ন্যাচারাল মেকআপের জন্য ক্রিম ব্লাশ হতে পারে জুতসই। ফ্রেক চিক স্লাইম নামের ক্রিম ব্লাশটি খুবই পিগমেন্টেড এবং অল্প ব্যবহারেই পাওয়া যাবে কাক্সিক্ষত লুক। এ ছাড়া এলফ ব্র্যান্ডের জেলি পপ ফ্ল্যাশ ব্লাশের জেল টেক্সচার ত্বকে মিশে যাবে খুব সহজেই। ন্যাচারাল মেকআপের জন্য শুধু গালের উঁচু অংশে আলতো করে আঙুল দিয়ে ব্লাশ চেপে লাগিয়ে নিতে হবে। আঙুলের অতিরিক্ত ব্লাশ আলতো করে ঘষে নেওয়া যায় ঠোঁটেও। একই উপায়ে পছন্দের কোনো ন্যুড লিপস্টিকও আঙুলের সাহায্যে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লাশ হিসেবে। তবে কোনোভাবেই লিকুইড ম্যাট লিপস্টিক নয়। চেষ্টা করতে হবে কোনো হালকা গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহারের।
শিরীন অন্যা
মডেল: সানি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন