ফিচার I চকলেট মাংস
বিশ্বের সবচেয়ে দামি গো-মাংস। জাপানি বিশেষ গরু থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা এটি তৈরি করে। খাওয়ার সময় যা চকলেটের স্বাদ দেয়
মানুষমাত্রই স্বাদের ওপর কর্তৃত্ব করতে চায়। জিভের ক্লান্তি কাটাতে খাবারে আনতে হয় বৈচিত্র্য। তাই রসনা নিয়ে নিরীক্ষা চলে। হোক তা আমিষ কিংবা নিরামিষে। কোরবানির ঈদে মানুষ হয়ে ওঠে আরেক ধাপ ‘পরখবাজ’। মাংস দিয়ে তৈরি করে নানান পদ। উদ্দেশ্য একটাই- একই উপকরণ ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে উপভোগ করা। তাই ঈদে নিরামিষ মাংস, মাংসের স্যুপ, মাংসের শুঁটকি ইত্যাদি ব্যতিক্রমী পদের আয়োজন। তবে মাংস নিয়ে আরও উন্নত এক্সপেরিমেন্টও হয়। যেমন চকলেট মাংস, যাতে চকলেটের স্বাদ মেলে। বিশেষ এক কৌশলে এমনটি করা হয় গরুর মাংসে।
‘ওয়েগ্যু’। শব্দটি ভাঙলে হয় ‘ওয়ে+গ্যু’। যার মানে জাপানি গরু। এর মাংস পৃথিবীর দামি খাবারগুলোর একটি। ভালো মানের ওয়েগ্যুর মাংসের কেজি কমবেশি ৫০ হাজার টাকা। এর কমেও মেলে। তবে সেগুলোর মান ভালো নয়। জাপানে মোটামুটি পাঁচ ধরনের ওয়েগ্যু মাংসের বিকিকিনি হয়। এগুলোর গুণগত মান রক্ষার দায়িত্ব খোদ জাপান সরকারের কাঁধে। তারা এই মাংস বিক্রি করে বছরে ২ হাজার কোটি টাকা আয় করে। উপার্জনের এমন উপায়ের কারণেই ওয়েগ্যু গরুর প্রতি জাপান সরকারের এমন কঠিন নজরদারি। মাত্র চার ধরনের গরুই হতে পারে ‘ওয়েগ্যু’। সেগুলো পালন করতে চাষিদের রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বাছুর অবস্থা থেকেই এসব গরুকে খাওয়াতে হয় বিশেষ খাদ্য। কেননা, ওয়েগ্যু মাংসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পরতে পরতে থাকতে হয় চর্বি। মাংস দেখতে মোজাইকের মতো। ৮০ শতাংশের কম চর্বি থাকলে সেটিকে ওয়েগ্যু বিফ বলা চলে না।
কর্তৃপক্ষ গুণগত মান পরীক্ষা করে মাংসের গায়ে সিল বসিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত চর্বি পেতে পরিণত বয়সের একটি গরুকে কমপক্ষে পাঁচ টন গো-খাদ্য খাওয়াতে হয়। যেগুলোর মধ্যে আছে চাল, গম ও খড়ের ফাইবার। দিনে তিনবার খাওয়াতে হয়। তা ছাড়া কিছু মিশ্রখাদ্যও দিতে হয়। বাছুর অবস্থা থেকেই ওয়েগ্যুর বিশেষ যত্নআত্তির প্রয়োজন পড়ে। উপযুক্ত খাবার খাওয়ানোর ফলে এসব গরুর শরীরে মার্বেল ফ্যাট তৈরি হয়। এই চর্বিই মাংসের দাম বাড়ায়। রং হয় গোলাপি। রান্নার পর মাংস এতই নরম হতে হয় যেন মুখের ভেতর তা গলে যায়। গরুর লালনপালন ও খাওয়াদাওয়ার ভিত্তিতে কিছু মাংসকে ‘হালাল’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সনদ পাওয়া মাংস রপ্তানি হয় মুসলিম দেশে। একটি ওয়েগ্যু ৪ লাখ ডলারেও বিক্রি হয়েছে। সেটি ঠাঁই পেয়েছে গিনেস বুকেও। এখন জাপান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পালন করা হয় ওয়েগ্যু।
চকলেট মাংস মেলে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েগ্যু থেকেই। সেখানে প্রায় ৩০ পদের চকলেট মাংস পাওয়া যায়। দেশটির ছোট মাউন্ট গেমবিয়ার বিমানবন্দরটি মেলবোর্ন ও অ্যাডিলেডের মধ্যখানে অবস্থিত। সেখানেই মেলে ‘ওয়াগ্যু বিফ’। ওয়েগ্যু জবাই করার দুমাস আগে থেকে প্রতিদিন দুই কেজি করে চকলেট, ক্যান্ডি ও মিষ্টি কেকের সমন্বয়ে তৈরি খাবার দেওয়া হয়। ফলে মাংসে চকলেটের স্বাদ মেলে। এর স্বাদ বিষয়ে হংকংয়ের ফোর সিজনস হোটেলের শেফ এনড্রিয়া একড্রি বলেছেন, ‘আমি এর আগে অনেক মাংসেই বাড়তি স্বাদ মিশিয়ে বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছি। কিন্তু প্রায়ই এই বাড়তি স্বাদ থাকে না। জাপানি গরুর মাংসে আসলেই অনন্য স্বাদ, মনে হয় যেন চকলেটগন্ধি। আমরা আগুনে এটাকে ধীরে ধীরে পোড়াই, আর এটা মিষ্টি এক ধোঁয়া তৈরি করে।’
চকলেট মাংসের কদর এখন বিশ্বজুড়ে। অস্ট্রেলিয়ার ৭০ শতাংশ ওয়েগ্যু চকলেট মাংস বিদেশে রপ্তানি হয়। বেশির ভাগই যায় দুবাই ও চীনে। হংকংয়ের ওটো-ই মেজ্জো, এরকেইন, সেরগে এত লে পকোই এবং ক্যাপরাইস রেস্তোরাঁতে চকলেট মাংসের পদ মেলে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট