ফিচার I সিক্ত চুল
ইন ট্রেন্ড ইন্টারন্যাশনাল হেয়ার লুকগুলোর সঙ্গে মানিয়ে। স্ট্রেইটনিং, ব্লো ড্রায়িং কিংবা কার্লিং ছাড়াই। হিট ফ্রি এসব স্টাইল স্ক্যাল্প ও চুলের জন্য স্বস্তিকর
সামার ট্রেন্ড রাডার বলছে, ওয়েট হেয়ারস্টাইল ইজ অলরেডি আ ইন থিং। ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার আর বিউটিবারদের বরাতে ইতিমধ্যেই বিউটি স্টেটমেন্টের তকমা ফিরে পেয়েছে এ হেয়ারস্টাইল। টিকটকেও দারুণ ট্রেন্ডিং ওয়েট হেয়ার লুক। এ ছাড়া এখনকার হঠাৎ তেতে ওঠা রোদ, পরক্ষণেই বৃষ্টির আবহাওয়ায় একদম জুতসই অপশন। এতে লুক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। করে নেওয়া যায় ফটাফট। চুলের জন্যও স্বস্তির। হেয়ার স্ট্রেইটনার, ড্রায়ার বা কার্লারের জটিলতা পোহাতে হয় না। একদম ন্যাচারাল ওয়ে টু স্টাইল হেয়ার। আর স্টাইলিং সঠিক হলে সবার মধ্যে সেরাটাই দেখাবে।
তবে চুল গড়িয়ে পানি পড়লে এমন ভেজা অবস্থায় স্টাইল করা যাবে না। ওয়েট হেয়ারস্টাইলগুলোর জন্য জুতসই হালকা ভেজা চুল। সে ক্ষেত্রে চুলে টাওয়েল ড্রাই করে নেওয়া যেতে পারে অথবা শুকনো অবস্থায় ভিজিয়েও নেওয়া যায় স্প্রে বোতল দিয়ে পানি ছিটিয়ে।
দ্য ক্ল্যাসিক
গোসলের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর চুল আধভেজা থাকে, তখনই এ হেয়ারস্টাইল করে নেওয়ার উপযুক্ত সময়। আর বেশি শুকিয়ে গেলে পানি ভর্তি স্প্রে বোতল তো থাকছেই। স্টাইলিংয়ের জন্য প্রয়োজন হবে হেয়ার পমেড। স্লিক লুক তৈরিতে। হেয়ার অয়েল বা সেরামেও কাজ চলবে, তবে তাতে বিচ হেয়ারস্টাইল তৈরি হবে। যাদের কার্লি হেয়ার, লিভ ইন কন্ডিশনার আর স্টাইলিং জেল মিশিয়ে চুলে মেখে নিতে হয়। তবে হেয়ার প্রডাক্ট মাখার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হয় চুল স্টাইল করা হবে কীভাবে। সিঁথি কোথায় হবে- মাঝে না পাশে? ডিপ সাইড পার্টও মন্দ দেখাবে না। আবার একদম ব্রাশড ব্যাক লুক চলবে অনায়াসে। তারপর হেয়ার প্রডাক্ট মেখে নেওয়ার পালা। একদম গোড়া থেকে মেখে নিতে হবে চুলের শেষ অব্দি। স্লিক ওয়েট হেয়ারস্টাইল লুকের জন্য। তারপর হেয়ার স্প্রে দিয়ে চুল সেট করে নিতে হবে। স্টাইলিং ঠিক রাখতে।
পাইঅ্যাপলিং ওয়েট হেয়ার
ভেজা কার্লি চুলেই ভালো দেখায় এই স্টাইল। সব চুল মাথার চুড়ায় টেনে নিয়ে বেঁধে ফেলতে হবে পনিটেইলে। তবে ইলাস্টিক ব্যান্ডে নয়, স্ক্রাঞ্চি দিয়ে। তারপর কয়েকবার টেনে টাইট করে নিতে হবে পনিটেইল। এতে টান টান হবে লুক। বেঁধে নেওয়ার আগে সামান্য লিভ ইন কন্ডিশনার স্প্রে করে নেওয়া যায়, বাড়তি হাইড্রেশনের জন্য। তারপর মাথায় সিল্ক অথবা স্ট্যাটিনের হেয়ার স্কার্ফ বেঁধে নেওয়া যায়।
ব্রেইড আউট
আধভেজা চুলেই এ স্টাইলিং সবচেয়ে ভালো হয়। এর জন্য প্রথমে চুলকে খানিকটা প্রস্তুত করে নেওয়া প্রয়োজন। লিভ ইন কন্ডিশনার বা কার্ল ক্রিম মেখে আঁচড়ে নিতে হবে। এতে করে ক্রিমটা চুলে ভালোভাবে ছড়িয়ে যাবে। তারপর সব চুল কয়েক ভাগ করে নিয়ে বেণি বাঁধতে হবে। তবে সাধারণ বেণিতে চলবে না, করতে হবে ডাচ অথবা ফ্রেঞ্চ ব্রেইড। গোড়া থেকে শুরু করতে হবে বেণি করা, একদম শেষ অব্দি। চুল ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে খুলে নিতে হয় বেণি। আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে আলাদা করে নিতে হবে। সবশেষে কার্ল ক্রিম দিয়ে সেট করতে হয় ব্রেইড আউট কার্লগুলো।
হিটলেস সক কার্লস
গেল বছর টিকটকে দারুণ ট্রেন্ডি ছিল সক কার্লিং। সামান্য ভেজা চুলে মোজা দিয়ে কার্ল করার এ ট্রিক ভাইরাল ছিল বছরজুড়ে। এখনো তার রেশ রয়েছে। কার্লিং আয়রন ছাড়াই ভলিউমনাস কার্ল তৈরির এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ হিট ফ্রি বলে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও অনবদ্য। সামান্য ভেজা চুলে প্রথমে পছন্দমতো লিভ ইন কন্ডিশনার দিয়ে নিতে হবে। তারপর কয়েক ভাগে ভাগ করতে হয়। মাথার ওপরে মোজার এক অংশ রেখে থাকি অংশ দিয়ে চুল পেঁচাতে হবে। ভালোভাবে পেঁচিয়ে শেষ অংশ কয়েক ভাগে মোজা দিয়ে চুল পেঁচিয়ে রেখে দিতে হবে রাতভর। সকালে মোজা ছাড়িয়ে নিলেই সুন্দর কার্ল তৈরি হবে।
টুইস্ট আউট
ভেজা চুলে কার্ল তৈরির আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। শুরু করতে হবে শ্যাম্পু করে নেওয়া কন্ডিশনড চুলে। তারপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিতে হবে। এতে জট থাকলে তা খুলে যাবে। তারপর লিভ ইন কন্ডিশনার মেখে নিতে হয় ভালো করে। চুল ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে তাতে স্টাইলিং ক্রিম মাখাতে হয়। ছোট ভাগটাকে আরও দুটি ভাগে টুইস্ট করে নিতে হবে। তারপর তা পেঁচিয়ে নিয়ে মাখায় ববি পিন দিয়ে সেট করার পালা। এভাবে সব চুল টুইস্ট করে মাথায় সেটিংয়ের পর অপেক্ষা করতে হবে তা ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। দিনভর বাতাসেই চুল শুকিয়ে নিলে ভালো। অথবা রাতে টুইস্ট করে সিল্ক স্কার্ফ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে টুইস্টগুলো খুলে নিলেই তৈরি কার্ল।
রোব ওয়েভ
বাথরোব দিয়েও ভেজা চুলের স্টাইলিং সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রোবের সঙ্গে থাকা বেল্ট ব্যবহার করা হয় ওয়েভ তৈরিতে। ভেজা চুল আশি ভাগ শুকিয়ে যাওয়ার পর এতে সবচেয়ে সুন্দর ন্যাচারাল লুকিং লুজ ওয়েভ তৈরি করা যায়। এ জন্য প্রথমে মাথায় ব্যান্ডানার মতো করে বাথরোবের বেল্টটা রাখতে হবে। তারপর মাথা বেয়ে ঝুলে থাকা বেল্টের অংশে পেঁচাতে হয় চুল। আস্তে আস্তে ভাগে ভাগে মাথার এক পাশের পুরো চুল পেঁচিয়ে নেওয়ার পর অন্য পাশেরগুলোও একইভাবে পেঁচাতে হবে। তারপর পেঁচানো অংশগুলো দিয়ে হেয়ার বান তৈরি করে নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্ক্রাঞ্চি ব্যবহার করা যায়। সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর বেল্ট থেকে চুল খুলে দিতে হবে। ওয়েভগুলো আঙুল দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হয়। এক্সট্রা ভলিউমের জন্য মাথার সব চুল সামনের দিকে উল্টে নিয়ে হেয়ার স্প্রে করে নেওয়া যেতে পারে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: বৃষ্টি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান