ফরহিম I বিয়ার্ড অ্যাকনে
দাড়ির কারণে দৃশ্যমান না হলেও এ এক অস্বস্তিকর সমস্যা। মূলত অপরিচ্ছন্নতা, খাদ্যাভ্যাস এর জন্য দায়ী। তবে সমাধানও আছে
নিজের মনের মতো করে দাড়ি বাড়ানো সহজ নয়। আর তা সেভাবেই বজায় রাখা আরও কঠিন। পারফেক্ট এক গোছা দাড়ি বাড়ানোর যাত্রায় হতে হয় নানান বাধার সম্মুখীন। এসবের মধ্যে রয়েছে বিয়ার্ড অ্যাকনে।
ত্বকের স্বাভাবিক অ্যাকনে কিংবা ব্রণের মতোই হয় বিয়ার্ড অ্যাকনে। দাড়ির নিচের ত্বকে এর আবির্ভাব ঘটে। দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে হওয়ায় এতে জ্বালাপোড়া তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই শুরুতেই এর কারণ খুঁজে প্রতিকার না করলে দাড়ির ক্ষতি তো হয়ই, অস্বস্তিও বাড়ে।
বিয়ার্ড অ্যাকনে বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সঠিক হাইজিন মেনে না চলা এবং দুর্বল গ্রুমিং রুটিন রয়েছে এই তালিকার শীর্ষে। দাড়িতে সারা দিন প্রচুর ধুলো-ময়লা লেগে যায়, যেগুলো এর ফলিকল এবং পোরে আটকে থাকে। যেগুলো দাড়ির নিচে জমে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে, সেসব ত্বকে লালচে বাম্প তৈরির জন্য দায়ী। এভাবেই শুরুতে বিয়ার্ড অ্যাকনে ত্বকে বাসা বাঁধতে শুরু করে। এ ছাড়া এটি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
পোরের অতিরিক্ত তেল: এটি বিয়ার্ড অ্যাকনে হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ। ত্বক তৈলাক্ত হয়ে গেলে পোরে ওই তেল আটকে যায় এবং ত্বক শ্বাস নিতে পারে না। এই কারণে দাড়ি অ্যাকনে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।
অপরিচ্ছন্নতা: সঠিক হাইজিন মেনে না চললে এবং নিয়মিত দাড়ি কিংবা মুখ ওয়াশ না করলে বিয়ার্ড অ্যাকনে হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মুখ না ধুলে অনেক সময় ধরে তেল জমে থাকে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজেই দাড়ির নিচে বসে অ্যাকনে তৈরির কাজ করে। তাই ব্রণহীন ত্বক পেতে অবশ্যই কিছু সময় পর পর পরিষ্কার করতে হবে।
মৃত কোষ: শুধু তেল নয়, ত্বকের মরা কোষও পোর বন্ধ করে দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি ঘটাতে পারে। ফলস্বরূপ, বিয়ার্ড অ্যাকনে দেখা দেয়। তাই ত্বকের সর্বোচ্চ যত্ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আরও কিছু কারণ রয়েছে বিয়ার্ড অ্যাকনে হওয়ার। দুশ্চিন্তা সরাসরি প্রভাব না ফেললেও ত্বক যদি অ্যাকনেপ্রবণ হয়, তবে তা বাড়াতে পারে। অ্যান্ড্রোজেন একধরনের হরমোন, এটি সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে বাড়ায় এবং অনেক সিবাম তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত ত্বকে আরও বেশি তেল বাড়িয়ে তোলে। মধ্যবয়সে হরমোন পরিবর্তিত হয় এবং ত্বকে বাড়তি ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ ডায়েট অথবা ওষুধের কারণেও বিয়ার্ড অ্যাকনে হতে পারে।
এ সবকিছু থেকে ত্বক বাঁচাতে অনুসরণ করা যেতে পারে-
ক্লিনজিং রুটিন
বিয়ার্ড অ্যাকনে দূর করতে একটা পরিপূর্ণ ক্লিনজিং রুটিন অনুসরণ গুরুত্বপূর্ণ। পুরো প্রক্রিয়াটি যাতে ত্বকে কোনো অতিরিক্ত তেল বা ময়লা জমাট না বাঁধে এবং সেগুলো থেকে ব্যাকটেরিয়ার উৎপাত না ঘটে, তা নিশ্চিত করে। এ ক্ষেত্রে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নিতে হবে। নিভিয়া মেন-এর অল ইন ওয়ান চারকোল ফেসওয়াশ ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে কাজ করে। ঘুম এবং কাজে যাওয়ার আগে নিয়মিত মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। এক্সফোলিয়েশন অনুসরণও একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া। একটা মৃদু ফেশিয়াল স্ক্রাব ব্যবহারে সপ্তাহে অন্তত দুদিন ত্বক এক্সফোলিয়েট করা জরুরি। এতে অ্যাকনে সৃষ্টিকারী কোনো ব্যাকটেরিয়া বিস্তার ঘটানোর সুযোগ পাবে না। ফেশিয়াল স্ক্রাব হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে ইউস্ট্রার ফেস স্ক্রাব ফর মেন। এ ছাড়া পছন্দের যেকোনো স্ক্রাব ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন তা ত্বকবান্ধব হয়।
ময়শ্চারাইজিং রুটিন
সঠিক ময়শ্চারাইজিং ত্বক কোমল ও তেলমুক্ত রাখার মূল চাবিকাঠি। ময়শ্চারাইজার ভিটামিনের সঞ্চার করে ত্বকের জ্বালাপোড়া কিংবা শুষ্কতা কমায়। বিয়ার্ড বাটারও ব্যবহার করা যেতে পারে দাড়িতে। এটি দাড়ি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং নিচের ত্বককেও সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। বেছে নেওয়া যায় নিভিয়া মেন-এর অয়েল কন্ট্রোল ময়শ্চারাইজার। তা ছাড়া পছন্দের যেকোনোটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত পণ্যগুলো ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কারণ, এটি অ্যাকনে রোধ করতে এবং ত্বকের পোর পরিষ্কারে ভূমিকা রাখে। বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি। এটি ত্বককে ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
কম্বিং হ্যাবিট
দাড়িতে জমে থাকা ময়লা কিংবা ধূলিকণা ঝেড়ে ফেলতে আঁচড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কাঠের তৈরি চিরুনি দিয়ে আলতো করে আঁচড়ে নিতে হয়। এটি দাড়ির ধুলো ময়লা দূর করার পাশাপাশি জট ছাড়িয়ে নিচের ত্বকে বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়া ধোয়ার সময় আঁচড়ালে দাড়ির ভালো স্বাস্থ্যের জন্যও সেটি কার্যকর।
বিয়ার্ড ওয়াক্স
বিয়ার্ড অ্যাকনে নির্মূল করার দুর্দান্ত উপাদান। বিয়ার্ড ওয়াক্স প্রতিরক্ষামূলক একটি স্তর হিসেবে কাজ করতে পারে, যা দাড়ির ফলিকলগুলোকে ধুলো এবং ত্বকে জ্বালাপোড়ার মতো যেকোনো উপাদান থেকে রক্ষা করবে। এর ফলে অ্যাকনেজনিত সমস্যা কমে যাবে অনেকাংশে। একটা ভালো মানের অর্গানিক ওয়াক্স ত্বকের পাশাপাশি দাড়ির স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখে। ওয়াক্স হিসেবে ইউস্ট্রার বিয়ার্ড সফটনার ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাট বিয়ার্ড অয়েল
দাড়ির বৃদ্ধিতে এটির ভূমিকা অনেক। তবে খুব বেশি বিয়ার্ড অয়েল ব্যবহার এবং তারপর মুখ ভালো করে পরিষ্কার না করলে তেলের অবশিষ্টাংশ ত্বকে থেকে যেতে পারে। এতে পোর আটকে ফেলার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ ছাড়া আরগান সমৃদ্ধ বিয়ার্ড অয়েল ব্যবহার ত্বককে উষ্ণ করে ফেলবে এবং ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলবে, যা ব্রণ সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই খুব পরিমিত বিয়ার্ড অয়েল ব্যবহার করতে হবে।
নো শেভিং
বিয়ার্ড অ্যাকনে নিরাময়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে শেভিং। দাড়ির নিচে যে অ্যাকনে নিরাপদে আছে, তার নিরাময় যতটা সহজ, শেভ করার সময় ভুলবশত সেটা কেটে ফেললে সেই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে আরও বড় জায়গাজুড়ে, পাশাপাশি জ্বালাপোড়া তো আছেই। তাই বিয়ার্ড অ্যাকনে দেখা দিলে শেভিং কমিয়ে আনতে হবে, তবে দাড়ি ছেঁটে নেওয়া যেতে পারে সাবধানতার সঙ্গে।
শিরীন অন্যা
মডেল: যায়েব
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: রফিকুল ইসলাম