ফিচার I এক্সপায়ারড?
সেটা কোনো সমস্যাই নয়। সেলফ লাইফ শেষে অন্য কাজে অনায়াসেই এগুলো ব্যবহার সম্ভব। জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন
প্রডাক্ট যত নামিদামি ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন, বছর পেরোলে তার শেলফ লাইফ ফুরাবেই। কিছু পণ্যের প্রাণ তো মাস তিনেকেই বন্দি। তারপরই বাতিলের বাক্সে। কারণ, মেয়াদ পেরিয়ে গেলে সেগুলো ত্বকে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। কিন্তু ফুরিয়ে যাওয়ার আগে অত দামি জিনিসগুলো ফেলে দিতেও মন চায় না। সে ক্ষেত্রে উপায়? মাথা খাটিয়ে নিলে অন্য কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রডাক্টগুলো, কীভাবে?
মাসকারা
মেকআপ প্রডাক্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সেলফ লাইফ মাসকারার। মাত্র ছয় মাসের মতো। এর পরপরই তা ঘন হতে শুরু করে। সহজে ব্যবহার করা যায় না তখন। আইল্যাশে জমতে শুরু করে। বেশ বিশ্রী দেখায়। এ ছাড়া চোখের ত্বকে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। সে ক্ষেত্রে এক্সপায়ারড মাসকারা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এর সঙ্গে থাকা স্পুলি ব্রাশ দারুণ কাজের বিউটি টুল। তবে ব্যবহারের আগে তা পরিষ্কার করে নেওয়া চাই। উষ্ণ সাবান পানি দিয়ে স্পুলিতে লেগে থাকা মাসকারা ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে-মুছে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে। আইব্রাও শেপিংয়ের সময় দারুণ কাজের এ স্পুলি। এ ছাড়া হেয়ারস্টাইলিংয়ের পর ইতিউতি উঁচিয়ে থাকা ছোট চুলগুলো বাগে আনতেও সাহায্য করতে পারে এটি। স্পুলিতে সামান্য হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করে তা দিয়েই আঁচড়ে নেওয়া যায় সহজে। নরম ব্রিসলের স্পুলি লিপ এক্সফোলিয়েটর হিসেবে চমৎকার। ঠোঁটে লিপ স্ক্রাব মেখে স্পুলি দিয়ে ঘষে নিলে মৃতকোষ উঠে যাবে, ফাটা ভাব দূর হবে। ঠোঁট থাকবে কোমল।
আইশ্যাডো
প্যালেট ভর্তি নানা রঙের আইশ্যাডো, কিন্তু ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ, এক্সপায়ারড। সে ক্ষেত্রে সাধের আইশ্যাডোর ভোল খানিকটা পাল্টে নিতে হবে। প্যালেট থেকে তুলে পাউডারি এ শ্যাডোগুলো পুরে ফেলতে হবে রংহীন নেইলপলিশের কৌটায়। ব্যস! তৈরি নতুন রঙের নেইলপলিশ। গ্লিটারি, ম্যাট, শিমারি- সব ধরনের আইশ্যাডো দিয়েই সম্ভব এটা। তৈরি করা যাবে আইশ্যাডো পিগমেন্ট দিয়েও।
লিপস্টিক
লিপস্টিক শুকিয়ে কাঠ? ফেলে না দিয়ে অনায়াসেই লিপবাম তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে এ থেকে। প্রথমে সেটি গলিয়ে নিতে হবে। এর জন্য সহজ উপায় হচ্ছে লিপস্টিক ছোট টুকরায় কেটে, চামচে নিয়ে মোমবাতির আগুনে আস্তে আস্তে গলিয়ে নেওয়া। এতে করে সেগুলো গলবে, আবার কোনো ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা-ও ধ্বংস হবে। গলে যাওয়া লিপস্টিকের সঙ্গে ভ্যাসলিন বা পছন্দের পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে নিলেই তৈরি লিপবাম। ঠোঁট আর্দ্র এবং রঙিন রাখতে। তবে খেয়াল রাখা চাই, মেয়াদোত্তীর্ণ লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভালো। শুধু শুকিয়ে যাওয়াগুলোই ব্যবহৃত হতে পারে।
লিপবাম
মেয়াদ শেষ? সমস্যা নেই। ঠোঁটে ব্যবহার না করা গেলেও নখে মাখা যাবে। নারিশিং প্রডাক্ট হিসেবে। নখের কিউটিকলে লিপবামের পুরু প্রলেপ দিয়ে রেখে দেওয়া যেতে পারে কিছু সময়ের জন্য। কোমল, মসৃণ থাকবে। এ ছাড়া শরীরে কোনো অংশের ত্বক শক্ত হয়ে গেলে তাতেও মাখিয়ে রাখা যায় লিপবাম। বিশেষ করে পায়ের কড়া পড়া অংশে। এ ছাড়া নতুন জুতা পরার আগে এর ভেতরে সামান্য লিপবাম মাখিয়ে রাখলে ব্লিস্টার রোধ করা যায়। পা-ও আরামে থাকে।
ফাউন্ডেশন
মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে মুখত্বকে একদমই ব্যবহার করা বারণ। গলাতেও মাখা যাবে না। তবে শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এর ব্যবহার হতে পারে। ফাউন্ডেশন নিয়ে পছন্দসই ময়শ্চারাইজারের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এটা মাখা যাবে হাতে-পায়ে, এমনকি পিঠেও। ত্বকের অমসৃণভাবে ঢাকতে, উজ্জ্বলভাব জোগাতে।
ত্বকযত্নে পণ্য
যেমন ফেস অয়েল। সাধারণত দামে চড়া হয় এগুলো। সেলফ লাইফ শেষে ফেলে দিতে মন মানবে না, সেটাই স্বাভাবিক। সামান্য চিনির সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে ফেস অয়েল। তাতেই তৈরি হোমমেড বডি স্ক্রাব। এক্সফোলিয়েশনের জন্য চমৎকার। বডি লোশনের মেয়াদ শেষে তা ব্যবহার করা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন লেদার জুতা অথবা ব্যাগের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে। লোশন দিয়ে ঘষে নিলে পলিশড লুক আসবে এগুলোতে। এক্সপায়ারড ফেস টোনার ব্যবহার করা যায়। আয়না, মোবাইলের স্ক্রিন আর টাইলসের মতো ঘরের জিনিসগুলোতে। চকচকে করে তোলার জন্য। হেয়ার স্প্রেও একই কাজে দেবে। এক্সপায়ারড ফেসওয়াশ, ক্লিনজার আর শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যায় অন্তর্বাসের মতো কমনীয় জিনিসগুলো পরিষ্কারের জন্য। এমনকি সোনা বা রুপার গয়না পরিষ্কারে দারুণ কার্যকর এগুলো। পারফিউমের যদি সদ্য শেলফ লাইফ ফুরিয়ে থাকে, তাহলে রুম ফ্রেশনার বা বাথরুমে এয়ার ডিওডোরাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে।
তবে অনেক দিনের এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। ওগুলোর মায়া ত্যাগ করতেই হবে!
ছবি: ইন্টারনেট