ফরহিম I স্পেকটেক্যালস স্পট
চশমা পরলে দাগছোপ তো পড়বেই। সমাধান কী? লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
সব সময় চশমা পরলে নাকের অংশে সাদাটে দাগ পড়া কিংবা চোখের নিচে ফুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে হয়। এটি দীর্ঘক্ষণ চেপে থাকার কারণেই মূলত স্পট দেখা দেয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই দাগ ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে, একসময় তা পাকাপাকিভাবে বসে যায়! তবে চাইলেই এসব সমস্যা প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে দূর করা যায়।
নাকের ব্যথা বা অস্বস্তির বড় কারণ হলো চশমার মাপ যথাযথ না হওয়া। এমন কয়েক ধরনের ব্যথা আছে, যেগুলো ভুল মাপের চশমা পরার ফলে অনুভূত হয়। নাকের ওপরের অংশে সেটি সঠিকভাবে না বসলেও সেখানে ব্যথা হতে পারে। চশমা খুব ভারী হলেও এটির আশঙ্কা থাকে। মাথার তুলনায় তা খুব ছোট হলেও কানের পেছনে ব্যথা হয়। এ রকম ঘটলে অবিলম্বে চশমা পরিবর্তন করা দরকার। চোখের চাপের কারণে মাথাব্যথা প্রায়ই দেখা যায়। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চশমা সঠিকভাবে তৈরি না করা হলে এই ব্যথা শুরু হয়।
নিয়মিত ভারী চশমা পরে থাকার কারণে চোখের আশপাশের অংশে কালচে হয়ে যেতে পারে। এসব দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে:
অ্যালোভেরা
এর গুণাগুণ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবারই জানা। বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে পাতা কেটে নিয়ে জেল বের করে ব্যবহার করা যেতে পারে। সরাসরি এটি ব্যবহারে সমস্যা হলে বাজার থেকে প্রসেসড অ্যালোভেরা জেল কিনেও তা করা যায়। ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে এটি দ্রুত কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরা জেল মেখে রাখতে হবে। সকালে পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হয়। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে হবে। চশমার দাগের পাশাপাশি ব্রণের স্পট দূর করতেও এটি দারুণ সহায়ক।
আলু
ত্বকে মেলানিন নামক উপাদান বেড়ে যাওয়ার ফলে কালচে ভাব সৃষ্টি হয়। এটি দূর করতে আলুর রস বেশ কার্যকর। এ জন্য প্রথমে এই সবজি পাতলা করে কেটে নিতে হবে। নাকের দুপাশে কালচে জায়গাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভালো করে আলুর স্লাইস দিয়ে ম্যাসাজ করতে হয়। সবজিটি ব্লেন্ড করেও সেই রস ব্যবহৃত হতে পারে।
শসা
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে শসা খুবই কার্যকর। এর রস চশমার এঁটে বসা ডার্ক সার্কেল সহজেই তুলে দিতে পারে। শসা ব্লেন্ড করে রস চিপে নিয়ে চোখের নিচে মাখাতে হবে বা টুকরাগুলো দাগের ওপর ঘষতে হয়। তবে এই রস প্রতিদিনই মাখাতে হবে।
লেবুর রস
এতে ভিটামিন সি আছে। পাতিলেবুর রস ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে খুবই ভালো! রস তুলায় মাখিয়ে দাগের ওপর ঘষতে হবে। মিনিট দশেক রেখে ধুয়ে ফেলতে হয়। প্রতিদিন গোসলের সময় মাখিয়ে নেওয়া যায়। পাতিলেবুর রসে অল্প মধু মেশানো যেতে পারে, তাতে ত্বক আর্দ্র থাকবে।
গোলাপজল
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সমৃদ্ধ; যা এই দাগ দূর করার পাশাপাশি চোখকে একটা ফ্রেশ অনুভূতি দেবে। চোখের নিচে ফোলা থাকলে সেই সমস্যা ম্যাজিকের মতো দূর করবে গোলাপজল। সপ্তাহে দুবার এই তরল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়ার সময় আঙুল দিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে হবে চোখের আশপাশের ত্বকে। এতে দূর হবে ডার্ক সার্কেল। এ ছাড়া দাগের ওপর তুলা দিয়ে গোলাপজল দিয়ে ঘুমানো যায়। সকালে উঠে ধুয়ে ফেললেই হবে।
মধু
অনেক আগে থেকেই মুখ, চুল, এমনকি শরীরের যত্নে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। শীত মৌসুমে অতিরিক্ত ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য এটি খাওয়া হয়। মধু শরীরে তাপমাত্রা বাড়ায়। শুধু তা-ই নয়, রূপচর্চায় এটি যথেষ্ট উপকারী। মুখত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে, চুলের রং গাঢ় ও মজবুত করতে মধুর গুরুত্ব রয়েছে। তা ছাড়া যেকোনো দাগ দূর করতেও এর জাদুকরি ভূমিকা আছে। ডার্ক সার্কেল দূর করার প্রসাধনীর থেকে মধু খুব বেশি কাজে দেয়। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ত্বকের যেকোনো দাগ অনেকটাই কমিয়ে আনে। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফল মিলবে। এ ছাড়া প্রতিদিন রাতে দাগের আশপাশে মধু মাখা যেতে পারে। নিয়মিত ৩ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ ওটের মিশ্রণ চোখের নিচে ঘষতে হবে। ১৫ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলতে হয়।
কমলার খোসা
ফলটির খোসা শুকিয়ে রেখে দেওয়া যায়। সেগুলো শিল-পাটা বা হামানদিস্তায় মিহি করে গুঁড়িয়ে নিতে হবে। গ্রাইন্ডারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গুঁড়া আধ চা-চামচ নিয়ে তাতে অল্প দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাগের ওপর মাখিয়ে রাখতে হবে। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলার নিয়ম।
ভিনেগার
১ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তুলার বল দ্রবণটিতে ডুবিয়ে নিংড়ে নিতে হবে। ধীরে ধীরে ঘষতে হবে চোখের আশপাশের ত্বকে। নিয়মিত ভিনেগার ব্যবহারে দ্রুতই দাগ চলে যাবে।
টমেটো
যেকোনো কালচে দাগ দূর করতে টমেটো ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। আরও আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সব কটি উপাদান ত্বকের দাগ দূর করতে সহায়ক। এ জন্য একটি পাকা টমেটো স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। এতে সামান্য চিনি মেশানো যায়। এবার আলতোভাবে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে। টমেটোর রসের সঙ্গে চিনির মিশ্রণ প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে।
গ্রিন টি
ডিটক্স হিসেবে কার্যকর। দুটো গ্রিন টি-ব্যাগ এক কাপ গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তিন-চার মিনিট পর টি-ব্যাগ সমেত কাপটি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ঠান্ডা করার জন্য। বরফ শীতল পানিতেও টি-ব্যাগ ডুবিয়ে নেওয়া যায়। কাপের পানি ব্যবহারের আগে টি-ব্যাগ চেপে ভেতরে থাকা রস বার করে নিতে হবে। ঠান্ডা গ্রিন টি বন্ধ চোখের ওপর ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হয়। এতে ক্লান্তি অনেকটা দূর হবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চোখের জ্বালাও দূর করবে।
মডেল: নীল
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: তানভীর খান