ফিচার I ভেগান : ইফেক্ট অন স্কিন
নিরামিষ ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় কার্যকর। কিন্তু তাতে থাকতে হবে সব পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়। লিখেছেন সারাহ দীনা
ভেগান লাইফস্টাইল, বর্তমানে বহুল চর্চিত একটি বিষয়। এর অনুসারীরা নিজেদের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রেখেছেন অ্যানিমেল প্রডিউসড সব ধরনের খাবার। মাংস, ডিম, দুধ, মধু—কোনোটাই নেই তাতে।
নিরামিষভোজীরা ফল ও সবজি থেকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পায়। প্ল্যান্ট বেইজড ডায়েটের সুফলের কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কবছর ধরে। এর পরিবেশগত সুবিধাও রয়েছে। মাংস ও দুধ পরিহারের ফলে ভেগানদের শরীরে কার্বন ফুট প্রিন্ট কমে। অ্যানিমেল প্রডাক্টস বাতিলের কারণে ত্বকের জেল্লাও বাড়ে।
ডেইরি প্রোটিন ছেড়ে দিয়ে কেমন আছে নিরামিষাশীরা? ধরেই নেওয়া যায়, বেশ আছেন। ভেগানের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত মতভেদ বিস্তর। হোক তা এনার্জির টনিক কিংবা ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে।
ম্যাগাজিন বার্ডি-এর ফিচার এডিটর আমান্ডা মনটেল বলেন, ‘নিরামিষ ফুড জার্নির প্রথম তিন মাসে, বিভিন্ন রকম পরিবর্তন আসে আমার শরীরে। যদিও আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না পরিবর্তনটা এ খাদ্যাভ্যাসের কারণেই। এ সময়ে আমি সব ধরনের হাইপার প্রসেসড ফুডও বাদ দিয়েছিলাম। খাদ্যতালিকার সব আইটেমই ছিল আর্থ ফুড। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে রুটি, পাস্তা, ভাত, আলু, বিনস, সবজি ও ফলের কথা।’
মারি হায়াগ একজন বোর্ড সার্টিফায়েড ডারমাটোলজিস্ট। ফিফথ অ্যাভিনিউ অ্যাসথেটিকস এবং নিউট্রিশন এক্সপার্ট বি নিউট্রিশাসের প্রতিষ্ঠাতা। দ্য সুগার ডেটক্স: লুস ওয়েট এবং ফিল গ্রেট ও লুকস ইয়ার ইয়ংগার হেলদি ইটিং ডিউরিং প্রেগন্যান্সি বই দুটির লেখক।
ক্লিন ফুডে ক্লিন স্কিন, এই বাক্য বহুল প্রচলিত। তবে সব নিরামিষে কথাটা খাটে না। যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। মাংসের বিকল্প হিসেবে প্রসেসড ফুড ও শর্করার গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। সুগার ও শর্করা অতিরিক্ত গ্রহণে অ্যাকনের শঙ্কা রয়েছে।
সাদা ময়দায় তৈরি ব্রেড, সাদা চাল এবং পাস্তায় রিডিফাইন্ড কার্ব থাকে প্রচুর। অ্যাকনের জন্য এই উপাদান বেশ দায়ী। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল রিচ ফুডগুলো ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে ত্বকে। যেমন বাদাম, শাক আর ফলের গুণাগুণে ত্বক সুস্থ হয়। সুন্দর হয়। তবে এসব খাবারের সঙ্গে ত্বকের সুস্থতার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যরক্ষায় ভূমিকা রাখে এই খাবারগুলো।
নিরামিষ গ্রহণেই সুস্থ শরীর—বিষয়টি এমন নয়। খাবারের পুষ্টিগুণে নির্ধারিত হবে দেহের সুস্থতা। সব পুষ্টি উপাদানের পরিমিত উপস্থিতি দরকার। প্রথমেই হিসাব করে নিতে হবে ভেগান ফুড লিস্টে কোন কোন পুষ্টিগুণ আছে। কোনোটির উপস্থিতি যথেষ্ট না হলে সেটির বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন ভিটামিন বি ১২ ও আয়রন। এ দুটি উপাদান চাই। উভয়ের অভাবে চুল ঝরে যেতে পারে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল তৈরি হতে পারে।
ডেইরি ফুড নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে ত্বকে ক্ষতিকর পরিবর্তনের শঙ্কা থেকে যায়। অ্যাকনের প্রধান একটি কারণ এই ডেইরি ফুড। ত্বকে এই সমস্যা থাকলে পরিচর্যার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এমন হলে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে দুধ ও দুধজাত খাবার।
ধারণা করা হয়, দুধে ইনফ্ল্যামেশন তৈরি হয়। ফলে পোরস ক্লগ হওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় অ্যাকনে। ডেইরির কারণে যাদের ত্বকে অ্যাকনে দেখা দেয়, ভেগান লাইফস্টাইলে তারা সমাধান পেতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে সবজি আর ফলে। এতে ব্লটিং কমে। ডারমাটোলজিস্ট ভানুশালীর মতে, ভেগান ডায়েট নিয়ে যারা দ্বিতীয় কোনো চিন্তা করেন না, তাদের একটা বড় অংশ ত্বকের ইতিবাচক পরিবর্তনেই সন্তুষ্টি খুঁজে পায়। তিনি আরও বলেন, ভেগান ডায়েটের সঙ্গে যথাযথ ব্যায়াম এবং ত্বক পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। এই তিনের মেলবন্ধনে ত্বকের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
ভেগান ডায়েট থেকে তৈরি হওয়া সমস্যার সমাধানের বিষয়ে হায়াগ বলেন, নিরামিষাশীদের চেষ্টা করতে হবে খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনার। রিপিটেটিভ ডায়েটে শারীরিক কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। একই সঙ্গে দূরে থাকতে হবে প্রসেসড ফুড থেকে।
খাবারের তালিকা সম্পর্কে নিয়মিত নোট রাখা প্রয়োজন। শরীর ও ত্বকের ভাষা বোঝাটাও জরুরি। এগুলোর সমন্বয়ে ঠিক করে নেওয়া যায় নিজের ডায়েটিং চাট কেমন হওয়া চাই। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
মডেল: মিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন