skip to Main Content

সাক্ষাৎকার I ত্রিস্বরের চা-বয়ান

নানা মাত্রায় বাংলাদেশের চা-শিল্প আজ বিকশিত। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের বাজার ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। চায়ের ধরনেও বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। প্যাকেটজাত থেকে শুরু করে দোকান পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে যারা কাজ করছেন, তাদের মধ্য থেকে শীর্ষস্থানীয় তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকার পাঠকদের উদ্দেশে পত্রস্থ হলো

‘নতুন চায়ের বাজার তৈরি করতে ক্রেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাই’

— এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ
জেনারেল ম্যানেজার
সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড

এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ

ক্যানভাস: চা না খেলেও মানুষের চলে। সে ক্ষেত্রে চায়ের বাজার তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কীভাবে তা সম্ভব করে তোলেন?
এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ: চায়ের গল্পটি এ দেশের মানুষের সঙ্গে মিশে আছে। আড্ডা, গল্প, অনুষ্ঠান কিংবা প্রথম পরিচয়ে আমাদের দেশের প্রধান আপ্যায়ন সঙ্গী চা। এ দেশে চা না খেলেও চলে— এই ধারণা সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, চায়ের নতুন বাজার তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কাজী অ্যান্ড কাজী টি অর্গানিক চা উৎপাদন এবং সেরা মান নিশ্চিত করে, যা অন্য চা ব্র্যান্ডের চেয়ে ব্যতিক্রমী। তাই কাজী টি-এর নতুন চায়ের বাজার তৈরি করতে ক্রেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য একটু বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। অর্গানিক উৎপাদন, বিপণন, পণ্যের ডেলিভারি, ব্র্যান্ডের কমিউনিকেশন— সব প্রচেষ্টা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়তা করে।
ক্যানভাস: পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কাজ কীভাবে সম্পন্ন হয়?
এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ: কাজী অ্যান্ড কাজী ১০০% অর্গানিক চা, যা কিনা জৈব সার ও জৈব কীটনাশকে তৈরি। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি ধাপকে বারবার পরীক্ষা করা হয়। আন্তর্জাতিক সনদ রিনিউর জন্য প্রতিবছর সয়েল টেস্ট থেকে প্যাকেজিং— প্রতিটি ক্ষেত্রকে অডিটের আওতায় আনা হয়।
ক্যানভাস: টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণে এলাকা, নাকি আর্থসামাজিক শ্রেণিকে প্রাধান্য দেন?
এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ: কাজী অ্যান্ড কাজী একটি স্বাস্থ্যসম্মত চা, সেই সঙ্গে রয়েছে হরেক রকম ফ্লেভার। এই ভিন্ন স্বাদের জন্য এবং মূল্যের জন্য আর্থসামাজিক শ্রেণিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ক্যানভাস: দেখা যায়, চায়ের একেকটি ব্র্যান্ড গ্রুপ অব কোম্পানির একেকটি অংশ, বাকি পণ্যগুলোর ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে এই পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পার্থক্য আছে কি না? থাকলে তা কী রকম?
এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ: চায়ের সঙ্গে অন্য পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পার্থক্য রয়েছে। কারণ, চা একটি পরিবারের সবাই পান করে না; আবার পান করলেও কেউ দুধ-চা, কেউ রং-চা, আবার কেউ গ্রিন টি পছন্দ করে। চা শুধু একটি পণ্যের বিষয় নয়; একটি একটি অভিজ্ঞতা, প্রেরণা কিংবা দুঃখের বহিঃপ্রকাশ। একেকজনের কাছে চায়ের অনুভূতি একেক রকম। আমরা ক্রেতার কাছে একটি বাগানের অর্গানিক চা পাতা থেকে তৈরি চায়ের অভিজ্ঞতা প্রদান করি এবং তার সঙ্গে চায়ের স্বাস্থ্যগুণ, সেরা মান ও স্বাদ নিয়ে কাজ করি। তাই চায়ের ব্র্যান্ডের গ্রাহকের আবেগ, অনুভূতি ও পণ্যের অভিজ্ঞতার মিলন ঘটানোর প্রচেষ্টা থাকে।
ক্যানভাস: বিপণনের ক্ষেত্রে বাজেট প্ল্যান কেমন হয়ে থাকে? এ ক্ষেত্রে কোন বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেন?
এস. এম. এম. ইব্রাহিম মাহমুদ: বিপণনের ক্ষেত্রে বাজেট হয় বিক্রয় এবং টার্গেট গ্রহণের ওপর। বিপণনের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রেতার কাছে চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পণ্য প্রদর্শন করা এবং এর গুণাবলি তুলে ধরা।

‘সঠিক ব্লেন্ড আর বাজারের সেরা চা-পাতার কারণেই পেয়েছি ভোক্তাদের সাড়া’

— জোহেব আহমেদ
এ জি এম, ব্র্যান্ড (হট অ্যান্ড কোল্ড বেভারেজেস), মেঘনা গ্রুপ

জোহেব আহমেদ

ক্যানভাস: চা না খেলেও মানুষের চলে। সে ক্ষেত্রে চায়ের বাজার তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কীভাবে তা সম্ভব করে তোলেন?
জোহেব আহমেদ: চা না খেলে যেমন চলে, তেমনি চা ছাড়া আড্ডা, অফিসের ডেস্ক, মেহমান আপ্যায়নসহ অনেক আয়োজনই তার স্বকীয়তা হারায়। আসলে চা তো একটা অভ্যাস, একটা স্বাদ আর একটা অনুষঙ্গ। চায়ের বাজার তৈরি আসলেই বেশ কঠিন, কিন্তু সঠিক ব্লেন্ড আর বাজারের সেরা চা-পাতা থেকে তৈরি করা হয় বলে ফ্রেশ অনেক অল্প সময়েই পেয়েছে অসংখ্য ভোক্তার সাড়া।
ক্যানভাস: পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কাজ কীভাবে সম্পন্ন হয়?
জোহেব আহমেদ: চা প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া খুব যে অটোমেটিক ব্যাপার, তা-ও নয়, কিন্তু পাকেজিং উপাদান, সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ, সঠিক যানবাহনে পণ্য পরিবহন— এসব ধাপ সঠিকভাবে মানলে আমার ধারণা, মান নিয়ন্ত্রণের কাজটি খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়।
ক্যানভাস: টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণে এলাকা, নাকি আর্থসামাজিক শ্রেণিকে প্রাধান্য দেন?
জোহেব আহমেদ: টার্গেট কাস্টমার আসলে এলাকাভিত্তিক তো বটেই, তা ছাড়া ক্রেতার শ্রেণিবিন্যাস করে সঠিক পণ্য সঠিক ক্রেতার কাছে তুলে দেওয়া হয়। চায়ের অনেক ধরন আছে— এলাকাভিত্তিক কিছু চা অনেক জনপ্রিয়, কিছু এলাকায় কড়া লিকার পছন্দ করে, আর কিছু এলাকায় চা হালকা লিকার।
ক্যানভাস: দেখা যায়, চায়ের একেকটি ব্র্যান্ড গ্রুপ অব কোম্পানির একেকটি অংশ, বাকি পণ্যগুলোর ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে এই পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পার্থক্য আছে কি না? থাকলে তা কী রকম?
জোহেব আহমেদ: অবশ্যই চা একটি ডেলিকেট ক্যাটাগরি। এর জন্য ব্র্যান্ডিংয়ে পার্থক্য অবশ্যই থাকে। এটা একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে পণ্যের বারবার ট্রায়ালের মাধ্যমে লয়্যালটি তৈরি করতে হয়।
ক্যানভাস: বিপণনের ক্ষেত্রে বাজেট প্ল্যান কেমন হয়ে থাকে? এ ক্ষেত্রে কোন বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেন?
জোহেব আহমেদ: বাজেটের ক্ষেত্রে সব সময় চ্যানেল বিস্তার ও বাজার উন্নয়নের বিষয়টি বিশেষভাবে মাথায় রাখা হয়। যেহেতু এটি একটি নতুন ব্র্যান্ড।

‘চেষ্টা করছি সঠিক দামে ও সঠিক মানের চা সবাইকে পৌঁছে দিতে’
— সাব্বির শাহাবুদ্দিন
ম্যানেজার, মার্কেটিং, ফিনলে

সাব্বির শাহাবুদ্দিন

ক্যানভাস: চা না খেলেও মানুষের চলে। সে ক্ষেত্রে চায়ের বাজার তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কীভাবে তা সম্ভব করে তোলেন?
সাব্বির শাহাবুদ্দিন: ব্রিটিশরা আমাদেরকে ১৫০ বছর আগে চা খাওয়া শিখিয়ে গেছে। সেই অভ্যাস আমরা আজও বহন করে যাচ্ছি। একটা সময়ে চা শুধু কোনো নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে অথবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হতো, কিন্তু কালের বিবর্তনে চা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে, হয়তো মনের অজান্তেই। আজও সবাই চা খায়— যেকোনো পরিস্থিতিতে অথবা যেকোনো সময়। বাজারে অনেক রকমের চা রয়েছে, তাই মানুষের চায়ের প্রতি কোনো ব্র্যান্ড লয়্যালটি নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে চায়ের প্রাইসিংয়ের মধ্য দিয়ে এর ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের লয়্যালটি বাড়ানো হয়ে থাকে।
ক্যানভাস: পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কাজ কীভাবে সম্পন্ন হয়?
সাব্বির শাহাবুদ্দিন: আমরা সব সময় বলে থাকি, ‘বাগানে প্যাকেটজাত’ অথবা ‘বাগান সতেজ’; এর কারণ হলো, আমরা আমাদের নিজস্ব বাগানে চা উৎপন্ন করি এবং সেই চা বাগানেই প্যাকেট করা হয়। তাই সবচেয়ে সতেজ চাগুলো আমরা আমাদের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হই। আমাদের নিজেদের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স টিম রয়েছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য।
ক্যানভাস: টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণে এলাকা, নাকি আর্থসামাজিক শ্রেণিকে প্রাধান্য দেন?
সাব্বির শাহাবুদ্দিন: ফিনলে চায়ের মূল স্লোগান হচ্ছে ‘Tea for All’, অর্থাৎ আমাদের সবার জন্য এক কাপ চা আছে। আমরা চেষ্টা করি বাংলাদেশের প্রত্যেকে যেন এক কাপ ভালো চা খেতে পারেন। চায়ের দাম একটা বড় ব্যাপার, এটা আরও প্রকট হয়েছে এই কোভিডের সময়ে যখন অধিকাংশ মানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ঠিক নেই। আমরা এখানে চেষ্টা করছি সঠিক দামে ও সঠিক মানের চা সবাইকে পৌঁছে দিতে। গ্রিন টি, মাসালা চা এবং ইংলিশ ব্রেকফাস্ট টি-এর মতো এক্সক্লুসিভ চা যেমন আছে, তেমনি আছে ডাস্ট অথবা ড্রায়ার মাউথ কোয়ালিটির চা।
বাংলাদেশের মানুষকে ভালো মানের গ্রিন টি-এর স্বাদ দেওয়ার জন্যই আমরা ‘Shinrai’ নামক একটি অসাধারণ স্বাদ ও মানের জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি চা নিয়ে এসেছি। আমাদের সব কনজিউমার চাগুলো পাওয়া যায় সুপারশপ, অনলাইন স্টোর এবং ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে।
ক্যানভাস: দেখা যায়, চায়ের একেকটি ব্র্যান্ড গ্রুপ অব কোম্পানির একেকটি অংশ, বাকি পণ্যগুলোর ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে এই পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের পার্থক্য আছে কি না? থাকলে তা কী রকম?
সাব্বির শাহাবুদ্দিন: চায়ের সব সময় দুইটা নির্দিষ্ট টার্গেট মার্কেট থাকে, HoReCa যেখানে ট্রেড প্যাক অথবা বাসা/অফিস যেখানে কনজিউমার প্যাক ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য পণ্যের যেমন চিপস, বিস্কুট, চকলেট, কোমল পানীয় এগুলোর নির্দিষ্ট স্বাদ বা গন্ধ থাকে, যা এভাবেই মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু চা কিনে মানুষ সেটা তৈরি করে। এখানে তৈরি করার প্রক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। তাই এই পণ্যের ব্র্যান্ডিং থেকে শুরু করে সবকিছুই একটু ভিন্ন। চায়ের সঙ্গে আমরা বিশেষ মুহূর্ত, বিশেষ স্মৃতি, ভালোবাসা ইত্যাদি সংযোগ করতে পারি।
ক্যানভাস: বিপণনের ক্ষেত্রে বাজেট প্ল্যান কেমন হয়ে থাকে? এ ক্ষেত্রে কোন বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেন?
সাব্বির শাহাবুদ্দিন: যেকোনো বাজেট প্ল্যান করার সময় আমরা পাঁচ বছরে কোথায় পৌঁছাব, তা নিয়ে প্রথমে ভাবি এবং এই বছরটা হয় সেই পাঁচ বছরের অংশ। ম্যানপাওয়ার, কাভারেজ, প্রডাকশন ক্যাপাসিটি, ব্র্যান্ডিং— এইগুলো হচ্ছে মূল পিলার আমাদের মার্কেটিং প্ল্যানের। তবে গত দুই বছর কোভিড পরিস্থিতি আমাদের অনেকাংশেই একটু ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top