skip to Main Content

ফিচার I টি টেবিলে টা

শুরুটা ফরাসিরা করলেও চায়ের সঙ্গে হালকা খাবারের চল এখন সর্বত্র। কিন্তু সব নাশতা এই পানীয়র অনুষঙ্গ হিসেবে জুতসই নয়

বহুদিন ধরে চা হয়ে আছে নাশতার অনুষঙ্গ। অতিথি আপ্যায়নে। সকাল কিংবা বিকেলের পানীয় হিসেবেও এর রয়েছে বিশেষ কদর। তবে সঙ্গে কিছু হালকা খাবার না হলেই নয়। বিশেষত বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায়। তা বাইরে হোক আর বাড়িতেই হোক।
চায়ের সঙ্গে স্ন্যাকস বা হালকা খাবারের চল শুরু করেছিল ফরাসিরা। তবে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয় ব্রিটিশরা। পানীয়টির সঙ্গে পাউরুটি, মাখন, স্যান্ডউইচ আর পেস্ট্রি এমনকি মাংস আর ফিশফ্রাইও খেত। তারপর প্রথাটি ছড়িয়েছে বিশ্বে। বাংলাদেশে অবশ্য চায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন কিছু খাবার। প্রায়শই দেখা যায়, অনেকে চায়ে বাটারবান ডুবিয়ে খায়। সকালে দুধ-চায়ে রুটি ডুবিয়ে খাওয়া হয়েছে ব্রেকফাস্টের অংশ। বিকেলে মুড়ির সঙ্গে এক কাপ চায়ের জুড়ি নেই। শহুরেরা অবশ্য এই পানীয়র সঙ্গে বিস্কুট আর চানাচুর দিয়েই আপ্যায়ন করে। আবার দলগত বৈঠকে বা আড্ডায় চায়ের সঙ্গী হয় শিঙাড়া, পুরি কিংবা নিমকি। লাঠি বিস্কুট যেন তৈরিই হতো চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার জন্য। পানীয়টির সঙ্গে সবচেয়ে ভালো জোড় টোস্ট বিস্কুট। অনেকেই বয়াম ভরে তা ঘরে রাখেন, যাতে অতিথি এলে সহজেই আপ্যায়ন করা যায়। আবার বিস্কুটের সঙ্গেও দেওয়া হয় চা। পুরান ঢাকায় চায়ের সঙ্গে বাকরখানি সেখানকার রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই পানীয়ে বেলা বিস্কুট চুবিয়ে খাওয়া চট্টগ্রামের খাদ্যসংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
বাঙালিদের চেনা খাবারের বাইরেও কিছু অনুষঙ্গ আছে, যা চায়ের সঙ্গে খাওয়া হয়। যেমন সেদ্ধ ভুট্টা। এর সঙ্গে লেবু ও বিট লবণ মিশিয়ে অনেকে চাট তৈরি করে। মুখরোচক করতে সেটির সঙ্গে পেঁয়াজ ও মরিচকুচি এবং ভাজা জিরাগুঁড়া মিশিয়ে খায় কেউ কেউ। চিনাবাদামের চাটও হয়। সেটিও চায়ের সঙ্গে খাওয়ার চল রয়েছে। শুকনা খোলায় ছোলা ভেজে তা চায়ের সঙ্গে খায় অনেকেই।
চায়ের সঙ্গে মুড়ি খাওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছ। তবে মুড়িতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও বাদাম মিশিয়ে চায়ের সঙ্গে খাওয়ার চল আছে। কেউ কেউ তাতে শসা ও টমেটো মেশান। চায়ের সঙ্গে মিক্সড বাদাম খেতেও পছন্দ করেন অনেকে। কাঠবাদাম, কাজু ও আখরোট চিবোতে চিবোতে চা পান করায় অভ্যস্ত কিছু মানুষ।
তবে দুধ-চায়ের সঙ্গে যেকোনো খাদ্যবস্তু গ্রহণে সতর্ক থাকা ভালো। কেননা কিছু কিছু খাবার এটির সঙ্গে খেলে স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। যেমন, টকজাতীয় খাবার। আয়রনস তো বটেই। নাশতা মুখরোচক করতে অনেকে সবজির পাকোড়া, ড্রাই ফ্রুটস, বিন ইত্যাদির সঙ্গে চা পান করেন। কিন্তু এই পানীয়ে প্রচুর ট্যানিন ও অক্সালেটস থাকে।

এই উপাদান আয়রনযুক্ত খাবার শোষণে বাধা দেয়। ফলে শরীরের ওপর তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বেসনে ভাজা, নোনতা কিংবা চপ জাতীয় খাদ্য চায়ের সঙ্গে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, বেসনে যুক্ত খাবারের সঙ্গে চা পান করলে শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। হজমেও সমস্যা হতে পারে। স্যালাড খাওয়ার পরও চা পানে বারণ আছে। চায়ের সঙ্গে অঙ্কুরিত শস্য খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে পেটে গন্ডগোল হতে পারে। কেননা, চা গরম পানীয়; স্যালাড ঠান্ডা। যে খাবারে বেশি হলুদ দেওয়া হয়েছে, সেটিও চায়ের সঙ্গে খেতে নিষেধ করেন পুষ্টিবিদেরা। কারণ, হলুদ ও চায়ে থাকা উপাদানগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। এতে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগেই বলা হয়েছে, টকজাতীয় খাবারের সঙ্গেও দুধ-চা অস্বাস্থ্যকর। এতে পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি এমনকি আমাশয়ও হতে পারে। চায়ের সঙ্গে ঠান্ডা পানীয় পান করা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে পাকস্থলীতে মন্দ প্রভাব পড়ে।
এখন চায়ের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের ফাস্ট ফুডই খেতে দেখা যায়। কখনো কখনো মানুষ শখ করে তাতে পিঠাও ডুবিয়ে খায়। এমনকি পুরি, ডুবিয়ে খাওয়ার কথাও শোনা গেছে। সেটা নাকি খুবই স্বাদের। তবে এসব নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই চায়ের সঙ্গে ‘টা’ খাওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলাই ভালো।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top