ফিচার I টি ব্যাগ
চা পানকে করেছে সহজ। কিন্তু এটি তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল
কম সময়ে চা তৈরির জন্য এর বেশ কদর; বিশেষত যখন কর্মস্থলে কিংবা একা। তবে এটিকে নিছক পাতলা কাগজে মোড়া চা-পাতা ভাবার জো নেই। কেননা এতে আছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্র। এ ধরনের ফিল্টার পেপার তৈরি হয় কাগজ, কাঠ ও সবজির ফাইবার দিয়ে। কিছু ক্ষেত্রে ফুড গ্রেড প্লাস্টিক এবং রেশম সুতাও ব্যবহৃত হয়। অনেকটা ছাঁকনির মতোই। তবে গরম পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এতে যেন জীবাণু না থাকে, সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় উৎপাদকদের জন্য। তা ছাড়া কাগজটিকে তাপসহনীয় করেই তৈরি করা হয়। পেপারের ভেতরের আবরণে পিভিসি কিংবা পলিপ্রোপলিন জাতীয় থার্মোপ্লাস্টিক থাকে।
শুরুতে এর এত কদর ছিল না। চৈনিক ট্যাং রাজাদের শাসনামলে (৬১৮-৯০৭) সাধারণ কাগজের মধ্যে চা-পাতা ঢুকিয়ে সেলাই করে দেওয়া হতো। সেটিই আদি টি ব্যাগ। তারা এটি করত শুধু চায়ের স্বাদ অটুট রাখার উদ্দেশ্যে। বিক্রির জন্য নয়। ১৯০৪ সাল থেকে কাগজের বদলে কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়। তবে তার ব্যাপক প্রচলন ঘটে ১৯০৮ সালে। চা-কফি ব্যবসায়ী টমাস স্যুভিলানের মাধ্যমে। চায়ের অপচয় কমাতে ছোট ছোট ব্যাগে মুড়ে বাজারজাতকরণে মনোযোগী হন তিনি। দুটি ভিন্ন আকারের টি ব্যাগ তৈরি করেছিলেন টমাস। বড়টি চায়ের পটের জন্য। ছোটটি কাপের। দুটোই তৎকালীন চায়ের বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। জানা যায়, সে সময়ে টি ব্যাগের মাথায় সুতা বাঁধা থাকত না। তা ছাড়া ব্যাগগুলো এখনকার মতো চৌকোও ছিল না। ছিল ছোট ছোট বস্তার মতো। এখন যেসব টি ব্যাগ দেখা যায়, সেগুলোর তৈরি শুরু ১৯৪৪ সালে। আজকাল গোল কিংবা ত্রিমাত্রিক আকারের টি ব্যাগও মেলে।
চলছে চায়ের ব্যাগ নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণা। একে আরও সহজ করে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো।
যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা নতুন একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন। যেখানে চা তৈরিতে গোলাকার টি ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। তবে তা সাধারণ টি ব্যাগ নয়। সেটি মূলত একটি ক্যাপসুল, যা সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হয়। গবেষকেরা এর নাম দিয়েছেন ডিজিটাল টি ব্যাগ। এ ধরনের ব্যাগ তৈরিতে বিশেষ মেশিনের প্রয়োজন। যেটি মিনিটে ১২০-২৫০টি টি ব্যাগ পূর্ণ করতে পারে।
ব্যতিক্রমী টি ব্যাগও তৈরি হয়। যেমন বছর চারেক আগে ব্রিটিশ জুয়েলারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বডেলস একধরনের টি ব্যাগ তৈরি করেছিল। দাম ১১ লাখ টাকার কাছাকাছি। কারণ, টি ব্যাগটিতে বসানো রয়েছে ২৮০টি হীরা। কোম্পানিটি তাদের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এটি তৈরি করেছিল। সময় লেগেছিল তিন মাস। হীরা বসিয়ে হাতে বুনে বানানো হয়েছিল সেটি।
টি ব্যাগের কদর থাকলেও এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে বলে মত দেন অনেকে। ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামের মার্কিন পত্রিকা জানিয়েছে, টি-ব্যাগের চা পানের মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে কোটি কোটি প্লাস্টিক কণা, যা বিষাক্ত; যা ডোবানোর সঙ্গে সঙ্গে পানিতে মিশে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংখ্যা হতে পারে ১১ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ৩০০ কোটি ন্যানোপ্লাস্টিক।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এক রিপোর্টে দাবি করেছেন, এক সপ্তাহে শরীরে প্রায় ৫ গ্রাম প্লাস্টিক প্রবেশ করতে পারে শুধু টি ব্যাগের মাধ্যমে।
ধাতব পিনটি দিয়ে আটকানো থাকে, স্বাস্থ্যের জন্য তা ক্ষতিকর। এই ঝুঁকি এড়াতে নির্মাতারা পিন ছেড়ে সুতা ব্যবহারে মনোযোগ দিয়েছে। সারা বিশ্বেই টি ব্যাগকে স্বাস্থ্যসম্মত করার চেষ্টা চলছে এবং সফলতাও মিলছে। এখনকার টি ব্যাগগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ।
শুধু চা পানের পরই টি ব্যাগের অবদান শেষ হয়ে যায় না। এখন তা বিভিন্ন কাজে লাগে। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে এটি ফ্রিজে রেখে দিলে তাতে আর দুর্গন্ধ থাকবে না। ব্যবহারের পর টি ব্যাগ থেকে চা পাতা বের করে গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। তা ভালো সার হিসেবে কাজ করে। পেঁয়াজ-রসুনের তীব্র গন্ধ দূর করতে হাতে টি ব্যাগ ঘষে নেওয়া যেতে পারে। গরম পানিতে কিছু টি ব্যাগ রাখতে হবে। তাতে সারা রাত থালাবাসন রেখে সকালে ধুয়ে ফেললে দাগ চলে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণে ভিন্নতা আনতে টি ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ক্যামোমাইল ও সিনামন টি ব্যাগ লাগে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট