ফিচার I ব্যাগ ভর্তি বিস্ময়
শুধু ঝটপট চা তৈরিতে নয়, রূপচর্চায় এর ব্যবহার ফলপ্রদ। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। সহজে এবং চটজলদি
পুরো নির্যাস নেওয়া শেষ হলে বেচারা ব্যাগটি সোজা চলে যায় বিনে। কিন্তু সেটিও যে রূপচর্চার কাজে লাগে প্রতিদিন! কীভাবে?
চোখের ফোলা ভাব সারাতে
নামিদামি আন্ডারআই ক্রিমগুলোর উপাদানের তালিকায় ক্যাফেইন থাকবেই। কারণ? এটি হচ্ছে ভ্যাসোকনস্ট্রিক্টর। অর্থাৎ রক্তনালি সংকোচনকারী। ডার্ক সার্কেল দূর করতেও জুড়ি নেই এর। এ ছাড়া ত্বকে পানি জমে গেলে তা নিষ্কাশনেও সহায়ক। ফোলাভাব দূর করতে এটি অনন্য। চায়ে শুধু ক্যাফেইন নয়, আছে ট্যানিনও। ঘুমের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে চোখের কোল ফুলে গেলে অনায়াসে এর সমাধান করে দেয় এই উপাদান। ব্যবহৃত ভেজা টি ব্যাগ মিনিট দশেকের জন্য ফ্রিজে ঠা-া করে বন্ধ চোখের ওপর রেখে দিতে হবে। দশ মিনিটর জন্য। এ ক্ষেত্রে ব্ল্যাক টি ব্যাগগুলো বেশি কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিইরিট্যান্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টি এ প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে। দিনে দু থেকে তিনবার এর ব্যবহার করাই যায়।
মাইল্ড অ্যাকনে রোধে
ক্যামোমাইল আর গ্রিন টি ব্যাগ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। দুটোতেই আছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টি, যা ত্বকে অ্যাকনের জ্বালাপোড়া আর অস্বস্তি কমায়। এ ছাড়া এতে থাকা অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রোপার্টি ত্বকে প্রশান্তি জোগায়। বাড়ায় উজ্জ্বলতা। তাই এ দুয়ের নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে তেলমুক্ত ও ম্যাট করে তুলবে। অ্যাকনেও সারাবে। অন্যদিকে গ্রিন টি-কে বলা হয় অ্যাকনে সারানোর মহৌষধ। কারণ, এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি; যা ত্বকে অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সহায়ক। এ ক্ষেত্রে টি ব্যাগ ব্যবহারের আগে তা ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর অ্যাকনে যুক্ত স্থানে সরাসরি চেপে ধরতে হবে। অথবা সার্কুলার মোশনে বুলিয়ে নিতে হয়। পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। নিয়ম করে দিনে দুবার এর ব্যবহারে মিলবে কাক্সিক্ষত ফল। তবে টি ব্যাগ ব্যবহারের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া চাই।
এক্সফোলিয়েশনের জন্য
ত্বক ম্যাড়ম্যাড়ে অনুজ্জ্বল দেখাচ্ছে? ব্যবহৃত টি ব্যাগের ভেতর থাকা চা-পাতা কিন্তু প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে চমৎকার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। যা ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষ সারাইয়ে সহায়ক। এ ছাড়া ময়লা আর দূষণ দূর করতে কার্যকর। চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বককে মসৃণ করে তোলে, বাড়ায় উজ্জ্বলতা। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলেই মিলবে ফল। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ নিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে টি ব্যাগ কেটে ভেতরের চা বের করে এতে সামান্য পানি মিশিয়ে তৈরি করতে হবে স্ক্রাব। বাজারে পাওয়া ওয়ালনাট কিংবা অন্যান্য স্ক্রাবের তুলনায় এটি ত্বকের জন্য অধিক কোমল এবং কার্যকরও বটে। এ ছাড়া অন্য উপায়েও স্ক্রাব তৈরি করে নেওয়া যায়। একটা বা দুটো টি ব্যাগের চা নিয়ে তার সঙ্গে সামান্য মধু এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মুখ, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এ স্ক্রাব মেখে অপেক্ষা করতে হবে মিনিট দশেক। তারপর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এক থেকে দুবার এর ব্যবহারে মিলবে ভালো ফল।
ফর মাস্কিং
হোয়াইট টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, তাই এর টি ব্যাগ একদমই ফেলনা নয়। ব্যবহৃত হোয়াইট টি ব্যাগ প্রথমে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর ব্যাগ ছিঁড়ে চা-পাতা বের করার পর সেটি পেস্ট করে মুখে মেখে নিতে হবে মাস্কের মতোই। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এর প্রভাবে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ হবে, বাড়াবে উজ্জ্বলতা।
সানবার্ন সারাতে
প্রখর রোদে ত্বক পুড়ে বেহাল? সে ক্ষেত্রে টি-ব্যাগ বেশ কার্যকর। ব্ল্যাক টি ব্যাগে পাওয়া যাবে ট্যানিন, যা রোদে পুরে যাওয়া ত্বকের জ্বলুনি কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে গ্রিন টি ব্যাগে আছে পলিফেনল, যা ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সারায়। ফলে এপিডার্মাল সেলে রোদে পোড়া ক্ষত সেরে ওঠে নিয়মিত ব্যবহারে। সানবার্ন সারাতে দুভাবে টি ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমত, গোসলের পানিতে দশ থেকে বারোটা গ্রিন টি ব্যাগ ছেড়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর মিনিট বিশেক সেখানে শরীর ডুবিয়ে রাখতে হবে। টানা কয়েক দিন একবার করে এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে সানবার্ন সেরে উঠবে। দ্বিতীয়ত, পছন্দসই টি ব্যাগ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর সেটা ক্ষতস্থানে চেপে ধরে রাখতে হবে। এতে করে সানবার্নের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানে আরাম মিলবে চটজলদি।
বুড়িয়ে যাওয়া রোধে
ত্বকের ঝুলে পড়া, দাগছোপ, সূক্ষ্মরেখা আর বলিরেখা— সব কটিই বয়সের ছাপের লক্ষণ। আর এগুলো সারাতে চা প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে মোক্ষম। চা-তে আছে অ্যান্টিএজিং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টি, যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়াতে সহায়ক। সেই সঙ্গে দাগছোপ সারিয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ায় বলে ত্বক দেখায় তারুণ্যদীপ্ত। এ ছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা ও আঘাতের ওষুধ উপশম দেয় এটি। বার্ধক্য রোধেও বেশ কার্যকর। দুটো ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ নিয়ে তার ভেতরকার চা একটা পাত্রে আলাদা করে নিতে হবে। এর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু আর সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করতে হবে প্যাক। সেটা মুখ আর গলার ত্বকে মেখে অপেক্ষা করতে হবে ৫ থেকে ১০ মিনিট। তারপর ঈষদুষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে দু-একবার ব্যবহার করলে পরিবর্তনটা চোখে পড়বে।
চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
ব্ল্যাক আর গ্রিন টি ব্যাগ চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর চমৎকার দাওয়াই। সেই সঙ্গে হেয়ার গ্রোথ বাড়াতেও সহায়ক। এগুলোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ক্যাল্পের শুষ্কতা সারায়, কমায় খুশকি। এর জন্য দু-তিনটি টি ব্যাগ নিয়ে দুই কাপ পানিতে ফোটাতে হবে। শ্যাম্পু করার পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে চায়ের মিশ্রণটি ঠান্ডা করে ঢেলে দিতে হবে চুলে। তারপর পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে স্ক্যাল্পে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুবার এ হেয়ার ট্রিটমেন্ট সেরে নিতে পারলে চুল হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, মসৃণ।
জাহেরা শিরীন
মডেল: ইফা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: লুসোরো
ছবি: তানভীর খান