সাজসারাই I স্পট অন!
ত্বকের বিশেষ এক অবস্থা। মেকআপে হয়ে উঠতে আরও আকর্ষণীয়। অস্বস্তিকর হলে আড়ালও করা যায়। জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন
উইনি হারলো। ২৬ বছর বয়সী কানাডিয়ান সুপারমডেল। ত্বকে ভিটিলিগো নিয়েই নজর কাড়েন সবার। আমেরিকান নেক্সট টপ মডেল ২০১৪ প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান ধরে রাখেন পুরো সিজনে। সে বছর মাতান লন্ডন ফ্যাশন উইকের মঞ্চ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি উইনিকে। তাকে দেখা গেছে বিশ্বের নামিদামি সব ব্র্যান্ডের মুখপাত্র হিসেবে। অংশ নিয়েছেন অ্যাড ক্যাম্পেইন আর মিউজিক ভিডিওতে। আলো করেছেন ভোগ, এল, হারপারস বাজারের মতো ম্যাগাজিনের কাভারও। ত্বকে ভিটিলিগো তাকে পিছিয়ে দেয়নি, বরং এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুদূর। আরেক জনপ্রিয় মডেল এমি ডিয়ানা। ভিটিলিগো রয়েছে তার ত্বকেও। বছর দুয়েক আগে বিখ্যাত মেকআপ ব্র্যান্ড কাভারগার্লের ‘আই এম হোয়াট আই মেকআপ’ ক্যাম্পেইনের জন্য কাজ করে বেশ আলোড়ন তৈরি করেন। মেকআপের আবরণে আড়াল করে নয়, বরং তা দিয়ে ভিটিলিগোকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, তাই দেখানো হয়েছে এ ক্যাম্পেইনে। গেল বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে মেকআপ কমিউনিটিতে ভিটিলিগো মেকআপ ছিল চর্চার বিষয়। ভিটিলিগোর ফলে সৃষ্ট হোয়াইট প্যাচগুলোকে ঢেকে ফেলার পরিবর্তে মেকআপ আরও আকর্ষণীয় করে প্রদর্শনের চেষ্টাই ছিল মুখ্য। মূলত ত্বকের এ বিশেষ অবস্থাকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকতা তৈরি এবং তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য। সুসংবাদ হচ্ছে, এই চেষ্টা থেকে সুফল মিলেছে বেশ। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তৈরি হয়েছে সো রেয়ার দে স্টেয়ার, ক্যান্ট কিওর ডোপ স্কিন, ওয়ান্স এফরেইড নাও ব্রেইভের মতো জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ, ভিটিলিগোকে কেন্দ্র করে। যাতে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। ছড়াচ্ছেন ইতিবাচক সব ভাবনা, অনুপ্রাণিত করছেন একে অপরকে। ভিটিলিগো নিয়ে এমন ইতিবাচক খবর মেলা। তাই বলে নেতিবাচকতা যে নেই, এমন নয়। এখনো অনেকের কাছেই ট্র্যাডিশনাল মেইনস্ট্রিম মোল্ডে খাপ খায় না এটি। কনভেনশনাল বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গেও মানানসই নয়। ফলে যাদের ভিটিলিগো আছে, তাদের অস্বস্তি তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে মেকআপে আড়াল করে নেওয়াতে যদি স্বস্তি মেলে, সেটাও দোষের কিছু নয়। এক্সট্রা অর্ডিনারি এ ইমপারফেকশন প্রদর্শন বা আড়াল করা— পুরোটাই নির্ভর করবে পার্সোনাল প্রেফারেন্সের ওপর।
ভিটিলিগো আসলে কী? এটি ত্বকের বিশেষ এক ধরনের অবস্থা, যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘস্থায়ী সাদা প্যাচের সৃষ্টি হয়। মূলত মেলানিনের অভাবে। ডিপিগমেন্টেশনের জন্য ত্বকের স্বাভাবিক রং উবে যায়, দেখা দেয় ডিসকালারেশন। শুধু ত্বক নয়, চুলও প্রভাবিত হতে পারে ভিটিলিগো দিয়ে। এটি কেন হয়, এর সদুত্তর এখন জানা যায়নি। যেমন মেলেনি এর চিকিৎসাও। মূলত দুই ধরনের ভিটিলিগো দেখা যায়— প্রথমটি সেগমেন্টাল; যা ত্বকের শুধু নির্দিষ্ট একটা স্থানে হোয়াইট প্যাচ সৃষ্টি করে। আর নন-সেগমেন্টাল ভিটিলিগোতে সিমেট্রিক্যাল প্যাটার্নে ত্বকে হোয়াইট প্যাচ সৃষ্টি হয়। ৯০ শতাংশের মধ্যে এ ধরনের ভিটিলিগো দেখা দেয়। বিশ্বজুড়ে মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশ মানুষের এটি হতে দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে ব্যথা হয় না। কিন্তু ফটোসেনসিটিভ হওয়ায় অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে বা আলট্রা ভায়োলেট রে দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়। পুড়ে ক্ষত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ত্বকে ভিটিলিগো থাকলে সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি। অন্তত এসপিএফ ৩০ যুক্ত। ভিটিলিগোকে না ঢেকে মেকআপের মাধ্যমে তা আরও ফুটিয়ে তোলার নির্দিষ্ট কোনো রুলবুক নেই। অনেক বিউটি ব্লগার আর মেকআপ আর্টিস্ট এ ক্ষেত্রে দুই শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করেন। এতে ত্বকে রঙের হেরফেরটা আরও বোঝা যায়। নো মেকআপ মেকআপ লুক থেকে বোল্ড— সবই ভালো দেখায় ভিটিলিগো যুক্ত ত্বকে। তবে ত্বকের প্যাচযুক্ত স্থান মাথায় রেখে মেকআপ লুক তৈরির পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিউটি এক্সপার্টরা।
মেকআপ দিয়ে ভিটিলিগো ঢাকতে চাইলে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সাধারণ মেকআপের বদলে এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রডাক্ট ব্যবহার করা। এগুলোর মধ্যে বিশ্বজুড়ে দুটি ব্র্যান্ড এগিয়ে আছে— কাভারমার্ক এবং ডার্মাব্লেন্ড। কাভারমার্ক মিডিয়াম টু হেভি কাভারেজ কেমোফ্লাজ তৈরি করে ত্বকে। কোম্পানির প্রডাক্ট রেঞ্জে রয়েছে ফাউন্ডেশন, পাউডার ও কনসিলার। যথাযথ কালার ম্যাচিংয়ের পাশাপাশি কাভারমার্কের মেকআপ স্যাটিন স্মুদ ফিনিশ দেয়। ভিটিলিগো মেকআপের জন্য ডার্মাব্লেন্ড খুবই জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। কোম্পানিটির হাই পারফরম্যান্স ফাউন্ডেশন, পাউডার এবং কনসিলার দিয়ে কার্যকরভাবে হোয়াইট প্যাচ ঢেকে নেওয়া যায়। এর প্রতিটি পণ্য সেনসিটি স্কিন টেস্টেড, অ্যালাজিং টেস্টেড, নন-কমেডোজেনিক এবং ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি। এ ছাড়া হাইএন্ড ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে কার্যকর কিছু চাইলে ব্যবহার করা যেতে পারে লরা মারসিয়ার, বেয়ার মিনারেলস আর কাভার ফিক্সের ফাউন্ডেশন, কনসিলার, লুজ পাউডার। ভিটিলিগো যুক্ত ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি না হলেও হোয়াইট প্যাচ ঢাকতে কার্যকর।
ভিটিলিগো ঢাকার জন্য ত্বক প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া চাই। অবশ্যই তেলমুক্ত হতে হবে ত্বককে। তারপর টোনিং সেরে নিতে হয়। জরুরি ময়শ্চারাইজেশনও। প্রয়োজন বুঝে। প্রথমেই একগাদা প্রডাক্ট নিয়ে ভিটিলিগো যুক্ত স্থানে নিয়ে নেওয়া বোকামি; বরং অল্পস্বল্প নিয়ে পাতলা লেয়ার তৈরি করে ঢেকে নিতে হবে। এতে করে জায়গাটা আলাদাভাবে ভারী কিংবা ফেকি দেখাবে না। ডিসকালারড প্যাচের মাঝ থেকে শুরু করতে হবে প্রডাক্টের ব্যবহার। আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে অ্যাপ্লাই করা জরুরি। প্রথম কোট দিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে দিতে হবে পরের কোট। ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে হবে যেন প্যাচযুক্ত ত্বক আর স্বাভাবিক ত্বকে পারফেক্ট ব্যালান্স থাকে। পছন্দমতো কাভারেজ হয়ে গেলে ফিনিশিং পাউডার ডাস্ট করে নেওয়া চাই। এতে দীর্ঘস্থায়ী হবে মেকআপ। শরীরের অন্যান্য অংশের ভিটিলিগোর জন্য বডি মেকআপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা মুখত্বকের মতোই লেয়ার করে মেখে নিতে হবে শরীরে। লুজ পাউডার দিয়ে সেট করে নিতে হবে।
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান