সাজসারাই I আই কনটুরিং
চোখের সাজে জনপ্রিয় এক ধারা। গভীরতা ও আকারভেদে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার কৌশল। লিখেছেন সারাহ্ দীনা
চোখ প্রমিনেন্ট করে তুলতে নানান রকম সাজসজ্জা করার চল নতুন নয়। আই কনটুরিংয়ের মাধ্যমে মুখশ্রীতে চোখের প্রাধান্য স্পষ্ট হয়। আকার বুঝে নিয়ে চোখজোড়া আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলাতেই সম্পন্ন হয় এটি। মেকআপ বিশেষজ্ঞ এবং সিটিজেডএন কসমেটিকস ব্র্যান্ডের কো ফাউন্ডার নাসিহা খান বলেন, ‘আই কনটুরিংয়ে নিজের মনমতো চোখের আকার তৈরি করা যায়। চাহিদামাফিক প্রশস্ত ও ছোট আকারের চোখে কনটুরিং করা যায়।’
চোখের কোটর আই মেকআপে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কনটুরিংয়ের মাধ্যমে আই ডেপথকে আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। তাতে অনেকটাই বদলে যেতে পারে লুক। এতে চোখের গঠনের ভূমিকা রয়েছে। চোখের ড্রামাটিক চেঞ্জ অনেক সময় ইল্যুশন তৈরি করলেও আলাদা করে নিজেকে প্রকাশ করে না। আই কনটুরিংয়ের উদ্দেশ্য হলো চোখের হালকা অংশকে হাইলাইট করে ফুটিয়ে তোলা। চোখের চারদিকেই তাই এর কাজ রয়েছে।
চোখের আকার ও লুক অনুযায়ী কনটুরিং সেরে নিতে হবে। যেকোনো আকারের চোখেই করা যায়। হোক সেটা আমন্ড, হুডেড, মনোলিড অথবা রাউন্ড। আর স্কিন টোন নিয়ে ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে, ত্বকের রঙে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা। এটি শুধু মেলানিনের পরিমাণ বেশি আর কমের প্রকাশ।
তবে নিজের চোখকে চিনে নিতে হবে। ধারণা থাকতে হবে চোখ ঠিক কোন ধরনের। আমন্ড, ক্লোজ সেট, প্রসারিত, ডাউন টার্নড, ওয়াইড সেট, হুডেড, আপ টার্নড, রাউন্ড নাকি মনোলিড। এ কাজের জন্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান চালানো যেতে পারে। অথবা জেনে নেওয়া যায় রূপবিশেষজ্ঞের কাছে।
চোখের আকারকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে পুরো প্রক্রিয়ার। রাউন্ড শেপের ক্ষেত্রে চোখকে প্রমিনেন্ট করে তোলা যায় লাইটার শেড এবং ডার্ক শেডের কম্বিনেশনে। চোখের কোনার দিকে সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে লাইট শেড এবং মাঝখানের অংশে ডার্ক শেড। প্রমিনেন্ট হয়ে উঠবে চোখ।
আবার চোখ যদি হয়ে থাকে আমন্ড শেপের, তাহলে লিডে ব্যবহার করা যায় মিডিয়াম শেডের ম্যাট কালার। এর সঙ্গে বাইরের অংশের ভাজে ডার্ক শেড ব্যবহার করে আউট লাইন করে নিলে বেশ ভালো মানিয়ে যাবে। বোল্ড আইমেকআপ চাইলে আই লিডে শিমারি শ্যাডো মানানসই হবে।
আই কনটুরিং এর জন্য প্রয়োজন আই মেকআপ ব্রাশ, প্রাইমার, কনটুর ক্রিম, আইশ্যাডো প্যালেট, কাজল, আইলাইনার, মাসকারা, গ্লিটার।
নাসিহা খানের মতে, আই কনটুরিং হয় কয়েকটি ধাপে। প্রথম থেকে শেষ অবধি মনোযোগ রাখতে হবে চোখের আকারের দিকে। প্রথমে প্রয়োজন প্রাইমিং। আই কনটুরিংয়ের ক্ষেত্রে আই প্রাইমার ব্যবহার করে যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে প্রাইম করে নিতে হবে।
আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। বিশেষ করে যদি চোখ ক্লান্ত দেখায়, তবে হালকা করে আন্ডার আই ক্রিম ত্বকে বুলিয়ে নিতে হবে। বেশ খানিকটা উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে চোখের নিচের ত্বকে।
এরপরে মনোযোগ দিতে হবে আই লিডে। আইশ্যাডো ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রং কোনটা, তা আই লিডের রঙের সঙ্গে মিল রেখে অথবা এর থেকে লাইট শেডে নিতে হবে। এখানে ব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। কিন্তু কেমন ব্রাশ? ফ্লাফি আই ব্রাশ এ ক্ষেত্রে বেশি জুতসই।
এবার সাজাতে হবে চোখের ভাঁজের অংশ। এ ক্ষেত্রে দরকার হবে কালার এবং ব্রাশ। ত্বকের ন্যাচারাল স্কিন টোন থেকে দুই শেড গাঢ় রঙের আইশ্যাডো এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে একটি ক্রিজ ব্রাশ। ব্রাশে কালার নিয়ে ক্রিজ থেকে টেনে আনতে হবে চোখের বাইরের অংশে। মনে রাখতে হবে, এখানে চোখের আকার যেটাই হোক না কেন, আই কনটুরিংয়ের মূল উদ্দেশ্য চোখের ন্যাচারাল লাইনকে আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা। কালারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে চোখকে আকর্ষণীয় করা যায়। ঘুমন্ত চোখকে জাগিয়ে তোলা যায়। যদি মনোলিড ধরনের হয়ে থাকে, অর্থাৎ তেমনভাবে ভাঁজ না থাকে, তাহলে দরকার হতে পারে বিশেষভাবে ভাঁজ তৈরি করে নেওয়া। এখানেও ক্রিজ ব্রাশ আর কালার সাহায্য করবে।
এবারের প্রসঙ্গ চোখের নিচের অংশে মেকআপ। দরকার হবে ছোট একটি ব্রাশ। যেটি সাজিয়ে তুলবে চোখের নিচের অংশ। আগের শেডটাই থাকবে ব্রাশে। লোয়ার ল্যাশের নিচের দিকে সুন্দর করে ব্রাশটি দিয়ে কালার বসিয়ে নিতে হবে। এখানে চোখের ভেতর থেকে বাইরের দিকে যাবে ব্রাশটি এবং লাইনটি শেষ হবে ওপরের অংশের শেষের পয়েন্টে। একটি দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে; সেটি হচ্ছে আপওয়ার্ড মোশনে ব্রাশ টানতে হবে সব সময়। এখানে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে স্মাজিং ব্রাশের।
এবারে কালার সুন্দরভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আলাদাভাবে কোনো রং ভেসে থাকবে না। বসে যাবে ত্বকের সঙ্গে। ব্যস, হয়ে গেল কনটুর।
এরপরে চাইলে এক টুকরো স্পঞ্জের ছোঁয়ায় চোখকে করে তোলা যাবে আরও সুন্দর। একটুখানি ময়শ্চারাইজার অথবা আই মেকআপ রিমুভার নিতে হবে। এটি ব্যবহার করতে হবে চোখের বাইরের নিচের দিকের অংশে। শেষ হবে ওপরের অংশের প্রান্তে। যাদের ক্যাটস আই তাদের জন্য কনটুরিং বেশ সহজ।
কনটুরিংকে বিশেষ করে তুলতে লিডের গুরুত্ব রয়েছে। লিডকে হাইলাইটেড করা যায় ভ্যাসলিনের ছোঁয়াতে। মাসকারা ব্যবহারের আগে আঁখি পল্লবে ভ্যাসলিনের পরশ বুলিয়ে নিতে হবে, তার ওপরে মাসকারা ব্যবহারে তৈরি হবে ডিউই লুক। চোখে সাদা কাজলের বদলে আইভরি কালার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তাতে ন্যাচারাল লুক আরও বেশি প্রমিনেন্ট হবে। উয়িং যদি থাকে পছন্দের তালিকায়, তাহলে কনটুরিংয়ের পরে তা ফেবারিট হয়ে উঠবে। টানা টানা উইংয়ে লুক হবে আরও চিয়ারফুল। এখন রঙের খেলার জন্যও প্রস্তুত চোখ। শিমারি অপশনগুলো ব্যবহার করা যায় মোহনীয় লুকের জন্য। নীল, সবুজ বেশ মানাবে। একই সঙ্গে থাকতে পারে মেটালিক কালারগুলো, যেমন সোনালি ও রুপালি। আইব্রাওকেও সাজিয়ে নেওয়া যায় ছোট ছোট স্ট্রোকে।
চোখে চোখে এবার মনের কথা পৌঁছে যাক প্রিয়জনের কাছে।
মডেল: উম্মেষা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান