ফিচার I হেমের লিরিক
পোশাকের নকশাকেও ছাপিয়ে যায় এটি। যেকোনো রঙে কিংবা মোটিফে। ফ্যাশনের চমকপ্রদ এক ধারা। লিখেছেন সারাহ্ দীনা
পোশাক তৈরি হয় বিভিন্ন ধাপে। কাটিংয়ে কাপড় পায় নতুন রূপ, পাশাপাশি কিছু খুঁতও দেখা দেয়। তা সামলাতে গিয়ে কাপড়ে তৈরি হয় নতুন এক রূপ। এটা হেমেরই দান। মানে, খুঁত ঢাকতে গিয়ে পোশাকে নতুন কিছু সংযোজিত হলো। যাকে পরিভাষায় হেম বলা হয়।
২০১৩ সালের ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে আনুশ্রী রেড্ডি লঞ্চ করেন তার ব্রাইডাল ওয়্যার কালেকশন। তাতে দেখা যায় ফুলেল নকশা আর কনটেম্পরারি কাটিং। একই সঙ্গে নান্দনিকতা ফুটে উঠেছিল স্ক্যালপ্ড হেমে এজিংয়ে। নতুন ধারার সন্ধান পাওয়া গেল। ২০১৪ এবং ২০১৫ তেও আনুশ্রী দেখালেন স্ক্যালপ্ড হেমের মাধুর্য। জনপ্রিয় হয়ে উঠল এই ট্রেন্ড। ২০১৬ তে দেখা গেল জনপ্রিয় ব্রাইডাল ডিজাইনার সব্যসাচী এবং জয়ন্তী রেড্ডিও হাজির স্ক্যালপ্ড হেম নিয়ে। নতুন ট্রেন্ডের সূচনা দেখল ফ্যাশন বিশ্ব। যে হেমে লুকিয়ে রাখা হতো কাপড়ের ধার, তাতেই ফুটে উঠল ভিন্ন এক সৌন্দর্য। হেমে আর লুকিয়ে নেই ফ্যাব্রিকের শেষাংশ; বরং সেখানেই প্রকাশিত ডিজাইনারের সৃজনশীলতা।
এসবের একটি হলো মধ্যে ফ্যাব্রিকের প্রান্তভাগ মুড়ে দেওয়া। সহজেই সম্পন্ন করা যায় ধাপটি। সুই আর সুতো দিয়ে। টান টান, সোজা হেমে মুড়িয়ে যায় বর্ডার। কিন্তু এখানেও সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। মাধুর্যময় হেম বদলে দিতে পারে পোশাককে। হোক সে শাড়ি, লেহেঙ্গা, ওড়না, কামিজ, বটম, টপ কিংবা জুতা।
মিনিমালিজমের সময় চলছে। এখন হেমই হয়ে উঠছে পোশাকের মূল ডিজাইন। স্ক্যালপ্ড ট্রেন্ডে। আমাদের দেশে স্ক্যালপ্ড হেমের কাজ চোখে পড়ছে বেশ। এই অঞ্চলের উৎসব পোশাক লেহেঙ্গাতে প্রথমে এটি দেখা গিয়েছিল। বিয়ের কনের, ব্রাইডসমেডদের ড্রেসেও স্ক্যালপ্ড হেমের কাজ দৃষ্টি কেড়েছিল। কারণ, এর বিশেষত্ব। নকশাটি মনোমুগ্ধকর। কেননা এতে বর্ডারকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়।
শাড়িতে
পাড় ও আঁচলে দেখা যাচ্ছে স্কাল্পড হেম। এতে বর্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় দেখা যায় সেখানেই বিশেষত্ব। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে অর্নামেন্টেড হেম। সব ধরনের শাড়ির পাড়েই কি মানাবে স্ক্যালপ্ড? বলা যায়, একটু শক্ত ইয়ার্নের তৈরি শাড়িতেই এটি মানানসই। যেমন টিস্যু, মসলিন, অরগ্যাঞ্জা। হেমে নকশা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্যাটার্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। চাইলে একটি নির্দিষ্ট মোটিফেও সম্ভব। লাইন করে ব্যবহৃত হতে পারে ছোট ছোট মোটিফ। আবার শুধু সূক্ষ্ম মোটিফের প্রয়োগেও মিনিমাল অলংকরণ হয়। ফ্যাব্রিকের বিভিন্ন রঙে পাড়ের বিশেষত্ব প্রকাশিত হয়, আর একই ধরনের শেডে হলে অলংকরণ হয়, অপেক্ষাকৃত কম দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে একটি নির্দিষ্ট অংশ, বরং পুরো শাড়ি নজর কাড়বে। সময়, স্থান ও উপলক্ষ বিবেচনায় নির্ধারণ করতে হয় ফ্যাব্রিক, কালার আর ডিজাইন। তাই স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে রাশ টানলে খারাপ লাগবে না, আবার জাঁকজমক সাজেও বেশ মানিয়ে যাবে।
ওড়নায়
সালোয়ার-কামিজ ওড়না মিলে তৈরি হয় সালোয়ার স্যুট। ওড়নার স্টাইলিং এই পোশাকের প্রধান একটি বিষয়। কারণ, এটি বদলে দিতে পারে টোটাল লুক। হালকা ফ্যাব্রিকের তৈরি ওড়নায় বেশ মানাবে এই ধরনের হেম। যেকোনো রঙে মানিয়ে যায় মেটাল কালার। গর্জাস লুক আনতে এর কোনো তুলনা নেই। স্ক্যালপ্ড হেমের ওড়না প্রস্থের দিকে বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে থাকে। স্টাইলিংয়ে বিভিন্নভাবে একে ক্যারি করার সুযোগ রয়েছে। এক সাইডে অথবা দুই কাঁধে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এ ধরনের ওড়না। আবার, কাঁধের ওপর থেকে ঘুরিয়ে এনেও স্টাইলিং গতে পারে। বর্ডারের দিকে হেমের নকশার ওড়না ড্রেসের সঙ্গে পিন করে দিলে তা ক্যারি করা সহজ।
কামিজে
কামিজের নিচের অংশের জন্য স্ক্যালপ্ড হেম হতে পারে দারুণ একটি অলংকরণ। প্যাটার্ন এই ডিজাইন করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, কামিজ মূল পোশাক। অলংকরণে ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়াল যথাসম্ভব হালকা হলে ভালো। এতে আলাদা করে কামিজে ওজন বাড়বে না। মাঝারি মোটিফ এবং ছোট মোটিফ মানানসই। কেননা, কামিজের প্রস্থে জায়গা খুব বেশি নয়। কালারের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগের জায়গা রয়েছে। রং মিলিয়ে অথবা না মিলিয়ে তৈরি করা যেতে পারে নকশা।
বটমে
ইদানীং বটমের ঘের বৃদ্ধি পাচ্ছে ট্রেন্ডে। মাঝারি ঘের থেকে বড় ঘেরের বটমে স্ক্যালপ্ড হেম মানিয়ে যাবে। শুধু এ ক্ষেত্রে অলংকরণে দিতে হবে মনোযোগ। স্ট্রেটকাট হোক কিংবা বেলবটম, হালকা নকশার স্ক্যালপ্ড শুভ্র সৌন্দর্য এনে দিতে পারে। হেমের আগে চাই প্যাটার্ন। এ ক্ষেত্রে কাটিং ডিজাইনে দরকার মনোযোগ। অর্নামেন্টেশন ম্যাটেরিয়াল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য প্রাধান্য দিতে হবে।
জুতা ও ব্যাগে
লেদারের জুতা ও ব্যাগে এ ধরনের অর্নামেন্টেশন বেশ চোখে পড়ে। হ্যান্ডমেইড জুতা, ব্যাগে রয়েছে এমন ডিজাইন ফুটিয়ে তোলার সুযোগ। সময় নিয়ে, এ ধরনের প্রডাক্টে নকশা হয়ে থাকে।
জুতার ওপরের অংশে হেমের মুড়িয়ে যেখানে তৈরি করা হয় ডিজাইন। বাড়তি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার না করে শুধু ফ্যাব্রিক এবং ইয়ার্ন ব্যবহারেও তৈরি হতে পারে নকশা।
ব্যাগের হেমের অংশ রয়েছে বেশ কিছু জায়গাতে। বেসিক প্যাটার্নের এসব অংশের হেম নান্দনিকতায় মুড়িয়ে নিলে সৌন্দর্যের স্ফুরণ ঘটে। এখানে যেমন ম্যাটেরিয়াল যোগে অলংকরণ করা যেতে পারে, তেমনি ইয়ার্ন ব্যবহারের মাধ্যমেও স্ক্যালপ্ড হেম তৈরি করা যেতে পারে।
স্ক্যালপ্ড হেম তৈরিতে কাটিং দরকার। সোজা হেম নকশার পাড় বসানো যায়। স্ক্যালপ্ড পার ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে ফ্যাব্রিকের দিকে। হেমের ওজন যেন ফ্যাব্রিক থেকে বেশি না হয়। যেহেতু কাপড় ধরে রাখে স্ক্যালপ্ড হেমকে, তাই ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য জরুরি।
প্যাস্টেল কালার বেশ কয়েক বছর ধরেই ইন ট্রেন্ড। স্ক্যালপ্ড হেম বেশ মানিয়ে যাবে এ ধরনের রঙের সঙ্গে। শুভ্রতায় সুন্দর হতে চাইলে অন্য রঙের স্কাল্পড এড়িয়ে সাদার মিশেল বেছে নিতে হবে।
মেটাল কালার স্ক্যালপ্ড হেম নিয়ে আসে আভিজাত্য। সোনালি, রুপালি কিংবা তামাটে—পছন্দমতো মেটালিক ইয়ার্ন ব্যবহার করা যায়। তবে মনোযোগ রাখা দরকার মসৃণতার দিকে। স্ক্যালপ্ড হেমের কারণে যেন কোনোভাবেই ফ্যাব্রিক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
স্ক্যালপ্ড হেমের লেহেঙ্গা আর শাড়ির সঙ্গে দরকার হয় টপ। ব্লাউজ নয় শুধু এখন এসব পোশাকের সঙ্গে নানান প্যাটার্নের টপ ব্যবহারের সময়। শাড়িতে বা লেহেঙ্গার ওড়নায় স্ক্যালপ্ড পাড় থাকলে, টপ নিয়ে ভাবা দরকার। টপ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পাড়ের নকশার দিকে নজর দিতে হবে। চওড়া পাড়ের নকশায় বড় মোটিফ ব্যবহার করা যায়। পাড় এবং টপ দুটোই গর্জাস হলে দৃষ্টিকটু দেখায়। স্ক্যালপ্ড হেম একটি রিদমে চলে। লিরিক্যাল এই ডিজাইনে তাই অতিরঞ্জনে ভারসাম্য হারাতে পারে।
স্লিভে
টপ, ব্লাউজ, কামিজ, কাফতানের স্লিভ স্ক্যালপ্ড হেমের জন্য দারুণ অংশ। স্লিভের ওয়াইড কিছুটা বেশি হলে ভালো। বেল হাতায় এ ধরনের হেম মানিয়ে যাবে। ছোট থেকে মাঝারি সাইজের মধ্যে মোটিফ ব্যবহার করে স্ক্যালপ্ড হেমের কাজ করা যায়। ফিটেড স্লিভেও থাকতে পারে এ কাজ। তা থাকতে পারে শুধু কাটিং লাইনে। চাইলে ছোট মোটিফ যোগ করা যায়।
কাফতানে
পোশাকটি ইদানীং বেশ ট্রেন্ডি। হেমও এতে থাকে অনেকটা জায়গাজুড়ে। স্ক্যালপ্ড হেম দারুণভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এই পোশাকে। কাফতান যেহেতু বেশ ছড়িয়ে থাকা একটি ড্রেস, তাই আলাদা করে স্ক্যালপ্ড যোগ না করে, সিউয়িং লাইনের সঙ্গে নকশা করলে বাড়াবাড়ি হবে না। কাফতানে তিন দিক ঘুরিয়ে স্ক্যালপ্ড হেম দেওয়া যায়। পায়ের দিকেও বেশ মানিয়ে যাবে এ নকশা।
শর্ট কাফতানের সঙ্গেও স্ক্যালপ্ড হেম থাকতে পারে। তাতে বেসিক প্যাটার্নেও আসবে নতুনত্ব। সহজ এ লাইন কাটের পাশাপাশি জ্যামিতিক ইন্সপিরেশনেও হতে পারে কাটিং।
ছবি: নোয়াহ্