পোর্টফোলিও I নারীচরিতাসু
‘স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেব না জানন্তি কুতো মানুষ্য’—প্রচলিত এ বচনে প্রশ্ন জাগে, দেবতার কাছে যে নারী রহস্যময়—মানুষ তাকে চিনবে কীভাবে! প্রবাদেই তার প্রমাণ। কখনো প্রকৃতির মতো নিবিড়, আত্মিক শক্তির আঁধার। কখনো প্রহেলিকায় পরিবেষ্টিত। নারীকে সহজ, সরল, তরলবৎ করার সাধ্যি কার! তবু এই সূত্র সমাধানের চেষ্টা সৃষ্টির শুরু থেকে। দ্বিতীয় শতাব্দীর ঋষি বাৎসায়নের উক্তি থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর পঙ্ক্তিতে। চিত্রকল্পে, গল্পে, কাব্যে, রচনায় বরাবরই নারী চর্চায় থেকেছেন যুগ যুগ ধরে। সনাতন ধর্মের পন্ডিতদের মত, নারীদের চারটি ভিন্ন ভিন্ন ছকে ফেলা যায়; আচার, সৌন্দর্য আর গুণের বিচারে। যা নিয়ে কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর লিখেছেন, ‘অতঃপর চারি জাতি বর্ণিব কামিনী। পদ্মিনী-চিত্রিণী আর শঙ্খিনী হস্তিনী।’ ক্যানভাসের এবারের আয়োজন সেই নারীদের উৎসর্গ করেই
কনসেপ্ট ও স্টাইলিং: নুজহাত খান
আর্টডিরেকশন: দিদারুল দিপু
রাইট আপ: জাহেরা শিরীন
জুয়েলারি: সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন
পদ্মিনী
নয়নকমল, কুঞ্চিত কুন্তল, ঘন কুচস্থল, মৃদু হাসিনী।
ক্ষুদ্র রন্ধ্রানাসা, মৃদু মন্দ ভাষা, নৃত্যগীতি আশা সত্যবাদিনী।
দেবদ্বিজে ভক্তি, পতি অনুরক্তি, অল্পরতিভক্তি, নিদ্রাভোগিনী।
সুললিতকায়, লোম নাহি হয়, পদ্মগন্ধ কয়, সেই পদ্মিনী।
—ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
মডেল: অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ
হস্তিনী
স্থূল কলেবর, স্থূল পয়োধর, স্থূল পদকর ঘোরনাদিনী।
আহার বিস্তর, নিদ্রা ঘোরতর, বিহারে প্রখর পরগামিনী।
ধর্ম্ম নাহি ডর, দন্ত ঘোরতর, কর্ম্মেতে তৎপর মিথ্যাবাদিনী।
সুপ্রসস্থ কায়, বহু লোম হয়, মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী
—ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
মডেল: সোবিয়া
ওয়্যারড্রোব: রঙ বাংলাদেশ
চিত্রিণী
প্রমাণ শরীর, সর্ব্বকর্ম্মে স্থির, নাভি সুগভীর, মৃদুহাসিনী।
সুকঠিন স্তন, চিকুর চিকণ, শয়ন ভোজন মধ্যচারিণী।
তিন রেখাযুত, কণ্ঠ বিভূষিত, হাস্য অবিরত মন্দগামিনী
কমনীয় কায়, অল্প লোম হয়, ক্ষারগন্ধ কয় সেই চিত্রিণী
– ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
মডেল: সারাহ্
ওয়্যারড্রোব: কে ক্র্যাফট
শঙ্খিনী
দীঘল শ্রবণ, দীঘল নয়ন, দীঘল চরণ, দীঘল পাণি।
সুদীঘল কায়, অল্প লোম হয়, মীনগন্ধ কয়, শঙ্খিনী জানি
—ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
মডেল: নিদ্রা
ওয়্যারড্রোব: অঞ্জন’স
২০২১ সালে এমন বলদের দল বাংলাদেশে আছে ভাবতেই ঘেন্না লাগে
কেন? আমাদের রবি কবিই তো বলে গেছেন-অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।
এমন একটা পুরুষতান্ত্রিক ফিচার করার আগে দুইবার ভাবলেন না? যুগে যুগে পুরুষরা বিশেষ করে আপনাদের কথামতো কবি সাহিত্যিকরা নারীদের নানারূপে বর্ণনা করেছে। তাদের ইচ্ছামত দেবি বানিয়েছেন আবার ডাইনি বানিয়েছে। সমস্ত চিত্রায়ণ নারীদের নিয়েই৷ তাদের স্বার্থেই ব্যবহার করেছে এবং প্রয়োজন শেষে ছুঁড়ে ফেলেছে। নারীর এই চিত্রায়ণের বিরুদ্ধে মেয়েরা এখন কথা বলছে, অবমাননাকর সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে যেখানে নারীরা, এবং কিছু কিছু পুরুষরা যেখানে সোচ্চার সেখানে আপনারা বডিশেমিং করে ফিচার কিভাবে করেন? এখানে কনসেপ্ট যিনি দিয়েছেন তার জন্যও মায়া লাগছে। আমি বিশ্বাস করি না যে, নারী হিসেবে তিনি কোন প্রতিবদ্ধকতা বা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন না। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এমন নিন্দনীয় ফিচার করার আগে ভবিষ্যতে দুইবার ভাববেন আশাকরি।
কেন? আমাদের রবি কবিই তো বলে গেছেন-অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।