কভারস্টোরি I বিউ টেক
৩৯০ বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল বিউটি বিজনেসে নতুন ট্রেন্ডের সংযুক্তি রোজকার অনিবার্য বাস্তবতা। সাম্প্রতিক সংযোজন প্রযুক্তি। যা প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে সৌন্দর্যবিশ্বকে। কাজ করছে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। লিখেছেন জাহেরা শিরীন ফ্যাশন থেকে ফিটনেস পর্যন্ত যা কিছু, সবই বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর। জরিপ বলছে, বছর পাঁচেক হলো সৌন্দর্যশিল্পেও বেড়েছে টেকনোলজির প্রভাব। ফলাফল- ইউনিলিভার, নিউট্রিজিনা আর ল’রিয়েলের মতো বিখ্যাত সব ব্র্যান্ড ঝুঁকছে প্রযুক্তিনির্ভর বিউটি প্রডাক্ট বাজারজাতে। নতুন সব যন্ত্র যুক্ত হচ্ছে রোজকার বিউটি রেজিমে। ঘরে বসেই মিলছে স্পার মতো স্পেশালাইজড ট্রিটমেন্ট আর বিশেষায়িত সব সেবার অনুভূতি। আঙুলের এক চাপেই ত্বকের খুঁটিনাটি সব খবর ফুটে উঠছে স্মার্টফোনের পর্দায়। রূপচর্চার কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ হয়ে উঠছে সহজ আর দ্রুততর।
সৌন্দর্যবিশ্ব যে একসময় ডিজিটাইজড এবং টেকফ্রেন্ডলি হয়ে উঠবে, তার আভাস ছিল অনেক আগেই। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে সেই ধারণা আরও পাকাপোক্ত হয় সিইএসের ইভেন্টে। কনজিউমার ইলেকট্রনিক শো নামে পরিচিত এই আয়োজন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কনজিউমার ইলেকট্রনিক ট্রেড শো। এ বছর লাস ভেগাসে আয়োজিত ইভেন্টটিতে শুধু রোবো কার আর ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিই প্রদর্শিত হয়নি; ভোক্তাদের চমকে দিয়ে কসমেটিকস এবং স্কিনকেয়ার ইন্ডাস্ট্রির রাঘব-বোয়ালরা পর্দা ওঠান তাদের অনন্য সব আবিষ্কার দেখানোর জন্য। সেসবের মধ্যে ছিল ডিসপোজেবল ওয়্যারেবল ইউভি এক্সপোজার প্যাচ থেকে কাস্টমাইজড স্কিন সেরাম তৈরির যন্ত্র। অ্যাপ বেসড ত্বকযত্নের যন্ত্রগুলোও ছিল প্রযুক্তিপ্রেমীদের আকর্ষণের শীর্ষে। কোনোটা হাইএন্ড ত্বকচর্চার জন্য উপযোগী, তো কোনোটা চুলচর্চায় চমৎকার।
ত্বকযত্নের যন্ত্র
ত্বকচর্চার সেকেলে অনেক কিছুই পাল্টে যাচ্ছে প্রযুক্তির প্রভাবে। হাইটেক সব বিউটি টুলের অন্তর্ভুক্তিতে দ্রুততর এবং সহজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠছে সৌন্দর্যচর্চা। কনজিউমার ইলেকট্রনিক শো ২০১৮-তে প্রদর্শিত হওয়া অনন্য সব টেক-ফ্রেন্ডলি বিউটি টুলের মধ্যে সেরা একটি ছিল ইউভি সেন্স। ল’রিয়েল ইউএস এবং সানস্ক্রিন তৈরির জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ফরাসি প্রতিষ্ঠান লা রোশ পোজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে এই পণ্য। আদলে নেইল স্টিকারের মতো দেখালেও এটা আসলে ত্বক সুরক্ষার জাদুকরী যন্ত্র। মাত্র ৯ মিলিমিটার চওড়া আর ২ মিলিমিটার পুরু প্যাচটি মূলত পানিরোধী এবং পরিধানযোগ্য ইউভি স্ক্যানার, যা অনায়াসেই এঁটে যায় নখের ডগায়। বিশেষজ্ঞের মতে, পুরো শরীরের মধ্যে হাতই এমন অংশ, যেখানে সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি পড়ে। ফলে প্যাচটি সহজেই জানান দিতে পারে ত্বকের ইউভি এক্সপোজারের মাত্রা। সহজ কথায় কখন সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি, তা জানিয়ে দেয়ার কাজ করে যন্ত্রটি। ফলে ত্বক সুরক্ষিত করা যায় সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। নির্মাতাদের মতে অন্যান্য পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি থেকে একদমই আলাদা ইউভি সেন্স। কারণ, এটা ব্যাটারিচালিত নয়। ফলে চার্জ দেয়া কিংবা শেষ হওয়া নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। প্যাচটা নখে পরার সময় অ্যাডহেসিভ ব্যবহার করতে হয়, যা সপ্তাহ দুয়েক টিকে থাকে অনায়াসে। এর ব্যবহার ও কাজের ধারা। নখে আটকে নেয়ার পর অ্যান্ড্রয়েড ও আইওস চালিত স্মার্টফোনের জন্য তৈরি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে চলে এটি। ব্লুটুথের বদলে নিয়ার ফিল্ড ট্রান্সফার (এনএফটি) টেকনোলজির মাধ্যমে পরিচালিত হয় পুরো প্রক্রিয়া। ম্যাপ এবং চার্টের মাধ্যমে পুরো দিনের ইউভি এক্সপোজার ছাড়াও যন্ত্রটি ট্র্যাক করতে পারে বাতাসের দূষণ, আর্দ্রতা আর অ্যালার্জেনের মাত্রা। বর্তমানে শুধু ডার্মাটোলজিস্টদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে ইউভি সেন্স। সাধারণ গ্রাহকদের কাছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য খুব তাড়াতাড়ি বিউটি ব্লগার আর সৌন্দর্যবিশ্বের প্রভাবকদের সঙ্গেও কাজ হবে যন্ত্রটি নিয়ে। বাজারে আসতে আরও এক বছর সময় নেবে এটি।
‘ইনোভেশন মিটস পার্সোনালাইজেশন’ স্লোগানে অভিনব এক বিউটি টুল বাজারে আনতে যাচ্ছে নিউট্রিজিনা। সহযোগী টেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ফিটস্কিনকে সঙ্গে নিয়ে। এই যন্ত্র বাসায় বসেই দেবে বিশেষজ্ঞসম্মত ত্বক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের সুবিধা। মোবাইল ফোনের উপরিভাগে সুন্দরভাবে এঁটে যাওয়া এ স্কিন স্ক্যানারে থাকবে বিল্ট-ইন এলইডি লাইট এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ত্রিশ গুণ শক্তিশালী সেন্সরযুক্ত আলট্রা ম্যাগনিফাইয়িং লেন্স; যা ত্বকের ছবি তুলবে অভাবনীয় স্পষ্টতার সঙ্গে। ফলে লোমকূপের পরিমাণ কিংবা সূক্ষ্ম রেখার সংখ্যা- কোনোটাই চোখ এড়িয়ে যাবে না। আর এতে থাকা ময়শ্চার সেন্সর বাতলে দেবে ত্বকের আর্দ্রতার অবস্থা। সেই সঙ্গে জানাবে সমস্যার সমাধানও। ধরন বুঝে তৈরি করে দেবে ত্বক পরিচর্যার পণ্যতালিকাও। তবে স্ক্যানারটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মোবাইল ফোনে থাকতে হবে দ্য নিউট্রিজিনা স্কিন থ্রি সিক্সটি অ্যাপ। নির্মাতারা বলছেন, ডার্মাটোলজিস্ট গ্রেড প্রযুক্তিতে তৈরি এ স্ক্যানার যে কারও ত্বককে এর সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে দারুণ উপযোগী। মাত্র পঞ্চাশ ডলার দামের এ যন্ত্র বাজারে আসার আগেই দারুণ সাড়া ফেলেছে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মাঝে। চলতি বছরেই বাজারে আসার খবর নিশ্চিত করেছে নির্মাতারা। আস্ত ইউএফও তৈরি হচ্ছে ত্বকযত্নে। অবাক হচ্ছেন! কিন্তু ঘটনা সত্য। শিট মাস্কিংয়ের জনপ্রিয়তাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে কাজ করেছে স্কিন কেয়ার কোম্পানি ফোরিও। অনন্য এই ডিভাইস শিট মাস্কিংয়ের আধঘণ্টার দীর্ঘতর এবং অগোছালো প্রক্রিয়াকে মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে শেষ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আদলে ইউএফওর মিনিয়েচার ভার্সনের মতো দেখতে ডিভাইসটি তৈরি হয়েছে স্পা-সদৃশ প্রযুক্তিতে। এতে থাকছে এলইডি লাইট থেরাপি, ক্রায়োথেরাপি, থার্মোথেরাপি আর টি সনিক পালসেশনের মিশেল। ফলে মাস্কে থাকা পুষ্টিগুণকে আরও গভীরে পুরে দিতে সক্ষম এই যন্ত্র। সকাল ও সন্ধ্যা ভেদে দুই ধরনের ট্রিটমেন্ট এবং সে অনুযায়ী আলাদা উপাদানে তৈরি আর এবং সেটিং থাকছে মেশিনটিতে। ফলে যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী যন্ত্রটি। আসছে মাস থেকেই বাজারে মিলবে এটি।
ত্বকচর্চায় ব্যবহার উপযোগী ব্রাশেরও ভিন্নতর রূপ দেখা যাবে বছরজুড়ে। যোগ হবে নতুন সব প্রযুক্তি। আরও বেশি কার্যকর হবে ত্বক পরিষ্কারক যন্ত্রগুলো। আল্ট্রা স্লিম ব্রিসলযুক্ত ব্রাশ আনতে যাচ্ছে ফিলিপস। এত সূক্ষ্মভাবে তৈরি হয়েছে এগুলো যে, ছোট একটা ব্রাশের মাথায় হাজার বিশেক ব্রিসল এঁটে যায় অনায়াসে। আর এই সূক্ষ্মতার ফলে লোমকূপগুলোর একদম গভীরে ঢুকে তেল, ময়লা আর দূষণ পরিষ্কার করা সহজ হয়। ফলাফল ডিপ ক্লিনের অনুভূতি পায় ত্বক। রিল্যাক্সিং ম্যাসাজ দেয়া ব্রাশটি ত্বককে রাখে টানটান আর প্রাণোচ্ছল। হোমেডিকস বিউটির সনিক ফেশিয়াল ওয়ান্ড তো আরও অসাধারণ। সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং তারহীন এই ফেশিয়াল ব্রাশ তাপমাত্রার পরিবর্তনে পারদর্শী। পাশাপাশি সক্ষম ময়শ্চারাইজার আর সেরামের কার্যকারিতা বাড়াতে। সুপার রিল্যাক্সিং ইফেক্ট দেয়া ব্রাশটির কাজ করার প্রক্রিয়াও ভীষণ মজার। শুরুতে গরম অনুভূতি দিয়ে ব্রাশটি রক্তের সঞ্চালন বাড়ায়, বাড়ায় ত্বকের শোষণক্ষমতা। সেকেন্ডের মধ্যেই গরম থেকে ঠান্ডা অনুভূতি দেয় ব্রাশটি। ফলে সেরাম কিংবা ময়শ্চারাইজারের উপকারী উপাদানগুলো আটকে যায় ত্বকে। কমায় জ্বালাপোড়া, লালচে এবং ফোলা ভাব।
এবারের কনজিউমার ইলেকট্রনিক শোতে প্রদর্শিত হওয়া আরেকটি বিউটি টুলের কথা না বললেই নয়। বিদ্যুৎ দিয়ে চলে না বটে, কিন্তু বছরের হাইটেক বিউটি ডিভাইসগুলোর তালিকায় উল্লেখযোগ্য নামগুলোর এটি একটি। শিক-এর ইনটিউশন ফ্যাব রেজার। ‘ফরওয়ার্ড অ্যান্ড ব্যাক’কে সংক্ষিপ্ত করে এর নামকরণ হয়েছে। এটি দেবে আপ সাইড ডাউন শেভিংয়ের সুবিধা। ফলে শেভিং করা যাবে ত্বকের আরও কাছ থেকে। আরও নিখুঁতভাবে।
অ্যাকনে আক্রান্তদের জন্যও আসছে সুখবর। এফডিএ অনুমোদিত একটি ডিভাইস বাজারে আসছে খুব শিগগির। রিভাইভ পাফ অ্যাকনে ট্রিটমেন্ট লাইট থেরাপি নামের ডিভাইসটি অনেকটা টর্চ লাইটের মিনিয়েচার ভার্সন। আকারে অনেক ছোট হওয়ায় এটা সহজে বহনযোগ্য। মাত্র তিন মিনিটেই যা দেবে হাইএন্ড অ্যাকনে ট্রিটমেন্টের ফলাফল। এতে থাকা মেডিকেল গ্রেড ব্লু এলইডি লাইট ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে অ্যাকনে তৈরি করা ব্যাকটেরিয়া রোধ করে। সেই সঙ্গে অ্যাকনের ফলে ত্বকে সৃষ্ট দাগছোপ দূর করতেও এটি দারুণ কার্যকর। কমায় লালচে ভাব এবং জ্বালাপোড়া। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারযোগ্য এই ডিভাইসকে একদম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত করে তৈরি করেছেন নির্মাতারা।
আয়নায়ও যোগ হচ্ছে প্রযুক্তি! এখন আর আয়না দেখে নিজের খুঁত ধরার প্রয়োজন পড়বে না। খোদ আয়নাই বাতলে দেবে ত্বকের হাল হলিকত। এ বছর কনজিউমার ইলেকট্রনিক শোতে এমনই এক আয়না প্রদর্শন করেছেন স্কিন কেয়ার কোম্পানি হাইমিররের নির্মাতারা। অ্যামাজনের অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে যুক্ত হাইমিররটি মূলত একটি কাউন্টারটপ বাথরুম মিরর। এটা আসল মুখত্বক পরীক্ষা করে দেবে ত্বকচর্চার পরামর্শ। দেখাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ত্বকচর্চা আর মেকআপ টিউটোরিয়াল। আয়নার সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরা ত্বকের ধরন এবং রঙ পর্যবেক্ষণ করে বাতলে দেবে বলিরেখার সংখ্যা আর অবস্থান। দেখিয়ে দেবে দাগছোপ।
বাথরুম ফার্নিশিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ড কোলারেরও চমক ছিল সিইএসের এবারকার আয়োজনে। অ্যামাজন অ্যালেক্সা আর মোশন সেন্সরযুক্ত আয়নাটি ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে পাল্টায় লাইট সেটিং। ফলে মেকআপ উপযোগী আলোর অভাব এখন আর অনুভূত হবে না একদমই।
প্রডাক্ট ডিজাইন ফার্ম কেমব্রিজ কনসালট্যান্টও নিয়ে আসছে আকর্ষণীয় এক স্কিন ডায়াগনস্টিক প্ল্যাটফর্ম। স্কিন টিউশন নামের এ যন্ত্র মাল্টিস্পেক্ট্রাল ইমেজিং টেকনোলজিতে তৈরি। নন-ইনভেসিভ এই যন্ত্র ত্বকের উপর ত্বকযত্নের পণ্যগুলোর প্রভাব পর্যালোচনার পাশাপাশি মেকআপের পারফেক্ট শেড বাছাইয়েও সহায়ক। ত্বকের জন্য কাস্টমাইজড ককটেল তৈরির যন্ত্রেরও দেখা মিলবে চলতি বছরে। নেসপ্রেসো নামের প্রযুক্তিতে তৈরি এসব যন্ত্র তৈরি করবে ক্রিম আর সেরাম। ব্যবহারকারীর ত্বকের ধরন আর চাহিদা বুঝে। বাসায় বসেই।
চুলচর্চা কেবল ত্বক নয়, চুলের যত্নেও পিছিয়ে নেই প্রযুক্তি। প্রমাণ দিতে মাঠে নেমেছে বিশ্বের বিখ্যাত সব হেয়ার ব্র্যান্ড কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে হেনকেল বিউটি কেয়ার। যারা বাজারে নিয়ে এসেছেন সোয়ার্জকফ প্রফেশনাল স্যালন ল্যাব। অ্যানালাইজ, কনসাল্ট, কাস্টমাইজ- এই তিন ধাপে চলে যার পুরো প্রক্রিয়া। হেয়ারস্টাইলিস্টদের হটিয়ে দেবার জন্য নয়, বরং তাদের কাজ আরও সহজ এবং প্রায় নির্ভুল করে দেবে যন্ত্রটি। প্রথমে সেন্সরযুক্ত স্ট্রেইটনার-সদৃশ যন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা হবে চুলের অবস্থা। পরিমাপ করা হবে চুলের আর্দ্রতা আর প্রকৃত রঙ। এ জন্য অবশ্যই ডিভাইসকে স্যালন ল্যাবের অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করে নিতে হবে। ফলাফল বের করার পর অ্যাপ দিয়ে দেখা যাবে থ্রি-ডি কালারেশন প্রিভিউ। অর্থাৎ কোন রঙ কার চুলে কেমন দেখাবে, তা সরাসরি দেখা যাবে স্ক্রিনে। আর সব শেষ ধাপে কাস্টমাইজড ফর্মুলার শ্যাম্পু তৈরি হবে চুলের জন্য। কনজিউমার ইলেকট্রনিক শো ২০১৮-তে দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত স্যালন ল্যাবকে বলা হচ্ছে ‘স্যালন অব দ্য ফিউচার’।
অ্যাপ বেসড আরেকটি হেয়ার কেয়ার প্রডাক্ট স্মার্ট হেয়ার ব্রাশ। ল’রিয়েল এবং কেরাসটাসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি পৃথিবীর প্রথম প্রযুক্তিনির্ভর হেয়ার ব্রাশ এটি। এতে থাকা সিগন্যাল অ্যানালাইসিস অ্যালগরিদম চুলের গুণমান যাচাই করে এবং পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে। সঙ্গে থাকা মাইক্রোফোন শব্দ শুনে ব্রাশিং প্যাটার্ন দেখে বের করে আনে চুলের শুষ্কতা, কুঁকড়ে যাওয়া ভাব আর আগা ফাটার অবস্থান। কতটুকু চাপ দিয়ে কতবার চুল আঁচড়ানো প্রয়োজন, সে নির্দেশনাও দিতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রয়োজনের বেশি চুল আঁচড়ালে ব্রাশটি ভাইব্রেশনের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়।
আজকালকার জীবনধারায় প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলার উপায় নেই। সৌন্দর্যবিশ্বেও একথা খাটে। ফলে আর সবকিছুর মতো রূপচর্চায় একে সাদরে গ্রহণ করেই যাপনের অংশ করতে পারাটাই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। তবে হ্যাঁ, প্রযুক্তির সেবা গ্রহণে সচেতন থাকাটাও জরুরি। না হলে জীবনটাই কেবল যান্ত্রিক হয়ে উঠবে না, যন্ত্রের আড়ালে নিজস্ব সত্তা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও হারিয়ে যাবে।
মডেল: হিরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন
ওয়্যারড্রোব: প্লেয়ার