এডিটরস কলাম I ভাগ করে নিতে হবে কাজ
উভয়ের মধ্যে যত বেশি মিল থাকে, ততই ভালো। অমিল কম থাকাটা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিল-অমিলের চেয়ে বেশি দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া, একের প্রতি অন্যের গুরুত্ব
কড়া নাড়ছে বিয়ের মৌসুম। ইতিমধ্যে অনেকেই বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছেন। এরপর যা যা দরকার আয়োজনকে পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য— সবকিছুরই জোগাড় ও ব্যবস্থার কাজ শুরু হতে চলেছে। এবার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বেশ ডামাডোল হবে বলে মনে হচ্ছে। গত বছরে অতিমারিজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি এখন প্রায় স্বাভাবিক। তাই পাল্টে যাবে বিয়ের দৃশ্যপট। আশা করা যায়, অনুষ্ঠানগুলো ঘটা করেই হবে। আনন্দের কমতি থাকবে না। তবে কিছু নিয়ম তো মেনে চলতেই হবে। যেমন— মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ করা, করমর্দন এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
আগ্রহ যত তীব্র থাকুক, হালকা জ্বর, গলাব্যথা ইত্যাদিতে আক্রান্ত অবস্থায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আজকাল তো এ ধরনের অনুষ্ঠানও লাইভ হয়ে থাকে। ফলে ঘরে বসে এগুলোয় অংশ নেওয়া যায়।
দুই
বিয়ের সব অনুষ্ঠানই সামাজিক। পারিবারিক তো বটেই। কিন্তু এর খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ব্যক্তিগত। দুই পরিবার থেকে দুজন নর-নারী বিয়ে নামক সামাজিক রীতির মধ্য দিয়ে একসঙ্গে জীবন-যাপনের সুযোগ লাভ করে। আনুষ্ঠানিকতার সব কলরব শেষ হয়ে যাওয়ার পর দুজনের ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়াতেই সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হয়। সব ক্ষেত্রেই যে উভয়ের মধ্যে মিল থাকবে এমন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পছন্দ, ইচ্ছা এবং আদর্শ ভিন্ন হতে পারে। সবই তাদের এক রকম হবে এমন আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। কেননা দুজন পৃথক দুটি পারিবারিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছে। তবে উভয়ের মধ্যে যত বেশি মিল থাকে, ততই ভালো। অমিল কম থাকাটা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিল-অমিলের চেয়ে বেশি দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া, একের প্রতি অন্যের গুরুত্ব।
তিন
কর্মজীবী দম্পতি সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায়। যেমন তারা কেউ কাউকে সময় দিতে পারছেন না। পারলেও সময়টা বৈষয়িক আলাপেই ফুরিয়ে যায়। পরের দিন দুজনেরই কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। ভুল-বোঝাবুঝির আশঙ্কা বেড়ে যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমি বলি, তাদেরই বেশি সুখে থাকার কথা এবং সম্পর্কটাও টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। কারণ, তারা অন্যদের তুলনায় আশপাশের জীবনটা ভালো করে উপলব্ধির সুযোগ পান। তাদের জীবন একটু বেশি বিস্তৃত। অধিকন্তু, অর্থনৈতিক কোনো উদ্বেগ তাদের মধ্যে থাকার কথা নয়। আমার ধারণা, দাম্পত্য ও পেশাগত জীবনে হারমোনি বা ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে সম্পর্কের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি ঘটে। অথবা ক্যারিয়ারকে ব্যক্তিগত জীবনের ওপর চেপে বসতে দিলেই এমনটি ঘটতে পারে। দুটোকেই যথাসম্ভব স্বতন্ত্রভাবে চলতে দেওয়া দরকার।
চার
করোনাজনিত দুর্যোগ ফিকে হয়ে এলেও ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নিয়মটি কোনো কোনো কর্মক্ষেত্রে এখনো রয়ে গেছে। অনেক কর্মজীবী নবদম্পতি এই নিয়মের মধ্যে পড়েছেন। বেশির ভাগ নারীরই অভিযোগ, গৃহকর্ম ও চাকরির কাজ— দুটো একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন জীবনসঙ্গী তাকে সাহায্য করছেন না। তার কথা হচ্ছে, অফিসের কাজ বাড়িতেই করছেন, এই সময় তো তিনি কর্মস্থলে থাকতেন। অফিসে কাজ করা অবস্থায় তিনি গৃহকর্মে কি অংশ নিতেন? এই প্রশ্নে তিনি সাংসারিক কাজে মোটেও রাজি নন। তার আরেকটি যুক্তি, ঘরের কাজ স্ত্রীই সামলাবে। এমনকি কর্মজীবী হলেও। ফলে স্ত্রীকে অফিসের কাজের পাশাপাশি ঘরের সব কাজ সামলাতে হচ্ছে। অফিস এবং বাসার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার শরীর-মন এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে যে স্বামীর সঙ্গে দুদন্ড স্বাভাবিক আলাপের ইচ্ছা থাকলেও শক্তি থাকছে না। ফলে উভয়ের মধ্যে একটু দূরত্ব আপনা-আপনি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এটা খুব বিপজ্জনক এবং বেদনাদায়ক। অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই।
পাঁচ
যৌথ জীবনে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ফলে সৃষ্ট এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্যোগী হতে হবে স্বামীকেই। তাকে বুঝতে হবে, সে নিজে যা করে, তার থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব স্ত্রীকে পালন করতে হয়। কিন্তু একই সময়ে যদি দুই জায়গার কাজ একসঙ্গে করতে হয়, তাহলে বেচারার অবস্থা কেমন হবে? কীভাবেই বা দিনের পর দিন এমনটি চলতে পারে? নিজের প্রতি যেকোনো স্বামীর এই জিজ্ঞাসা থাকা দরকার। এটাই-বা বলছি কেন, দিন শেষে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়েও তার এই উপলব্ধি আসা স্বাভাবিক। আসলে বিবেকের দায়টাই এখানে বড়। আমার কথা হচ্ছে, সাংসারিক দায়িত্বগুলো ভাগ করে নিলে শান্তিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করা যায়। কেউ একজন মন খারাপ করে থাকলে কিংবা খিটিমিটি লেগে থাকলে তার পরিণতি হয় বেদনাদায়ক।