skip to Main Content

ফিচার I গর্ভনিরোধে…

প্রকৃতিতে এমন কিছু খাদ্য রয়েছে, যেগুলোয় জন্মনিরোধ সম্ভব। তবে সেসব গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি

জন্মনিয়ন্ত্রণে পিল বা ইনজেকশনে অনীহা রয়েছে অনেকেরই। যদিও সন্তান উৎপাদনের লাগাম টেনে ধরাকে তারা জরুরি মনে করে। তাই উপায় হিসেবে খোঁজে প্রাকৃতিক উপকরণ। এই অন্বেষণ সমকালীন নয়। প্রাচীনেও কিছু খাবার নারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল কেবল গর্ভনিরোধের জন্য। সেগুলোর কিছু কিছু ছিল ক্ষতিকর। যেমন, চীনের অধিবাসীরা তেল ও পারদ যোগে একধরনের দ্রবণ তৈরি করে খালি পেটে নারীকে তা খাওয়াত, যা ছিল খুবই বিপজ্জনক। বর্তমান বিজ্ঞান জানে যে পারদ মানুষের হাড় ও শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তা ছাড়া সেই মিশ্রণ খেয়ে অনেকে বন্ধ্যাও হয়ে যেত। তাই এই পদ্ধতি অনেক আগেই রহিত হয়ে গেছে। চৌদ্দ শতকে ফ্রান্স ও ইতালির নারীরা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে পেঁয়াজের রস খেত। সেই রীতিও বাতিল হয়েছে। তবে আজকাল কিছু খাবারকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সহায়ক বলে গণ্য করা হচ্ছে। যেমন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য গর্ভনিরোধে সহায়ক। উপাদানটি যুগের পর যুগ ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভিটামিন সি-এর ক্যাপসুলও মেলে। গর্ভরোধে চিকিৎসকেরা সেটির ১৫শ মিলিগ্রাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে সহবাসের পরবর্তী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দুটি করে ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম। ভিটামিন সি প্রোজেস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গর্ভধারণ প্রতিহত করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
আরও কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো গর্ভনিরোধে প্রভাব ফেলে। যেমন আদা। এর কুচি পানিতে সেদ্ধ করে দিনে দুবার পান করলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে। একই কাজ করবে দারুচিনি। তবে এটি সেবনের পদ্ধতি ভিন্ন। সেটি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই পানি পান করা যেতে পারে। তা জরায়ুকে উদ্দীপিত করার পাশাপাশি গর্ভপাত ও গর্ভস্রাব ঘটাতে পারে। যদিও পানীয়টি তাৎক্ষণিক কাজ করে না। গর্ভনিরোধের উদ্দেশ্যে দারুচিনির পানি নিয়মিত পান করতে হয়। দীর্ঘদিন।
গর্ভনিরোধে তাড়াতাড়ি কাজ করে শুকনা ডুমুর। সহবাসের পর তা দুই থেকে তিনটি খেলে গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে। বেশি খেলে পেট খারাপের আশঙ্কা থাকে। সহবাসের আগে থেকেই দৈনিক শুকনা ডুমুর খেলে অযাচিত গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে। আরও ভালো কাজ করতে পারে নিম। জন্মনিরোধী গুণের কারণে এটিকে অ্যান্টি-ফার্টিলিটি হার্ব বলা হয়। ফলিকুলার বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে নিম। শুধু নারীর জন্য নয়, পুরুষের প্রজনন ক্রিয়াকেও বাধা দিতে পারে এই ভেষজ। নিমের পাতা ও তেলের নির্যাস সহজলভ্য। জরায়ুতে তা প্রবেশ করলে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শুক্রাণুকে ধ্বংস করতে পারে। তা ছাড়া নিমের ট্যাবলেট পুরুষকে সাময়িক বন্ধ্যা করে দিতে সক্ষম। গর্ভধারণ এড়াতে খাওয়া যেতে পারে শালগম। সবজিটি সঙ্গমের এক সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাবস্থা রোধ করতে সক্ষম। এ উদ্দেশ্যে শুকনা শালগম চূর্ণ পানিতে গুলে সপ্তাহে অন্তত দুদিন পান করতে হয়।
অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়াতে পেঁপের কদর রয়েছে। পুরুষের শুক্রাণু কমাতেও সক্ষম এটি। খুব দ্রুত ফল পেতে মাত্র দুদিন পেঁপে খেলেই চলে। তা খাওয়া ছেড়ে দিলে শুক্রাণুর উৎপাদন আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ফলটির রস বের করেও পান করা যেতে পারে। অনিরাপদ সহবাসের পর দৈনিক দুই থেকে তিনবার পেঁপে খেলে গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে। খুবানি ফলও জন্মনিয়ন্ত্রণ সহায়ক। এটি প্রাকৃতিক উপায়েই ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠেকায়। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগে শুকনা খুবানি। এক কাপ পানিতে ২ চামচ মধু মিশিয়ে তাতে ১০০ গ্রাম শুকনা খুবানি মিশিয়ে নিতে হবে। তা পান করলে আশানুরূপ ফল মিলতে পারে। সঙ্গমের পর থেকে শুরু করে ঋতুস্রাব শুরু না হওয়া পর্যন্ত দৈনিক ৫ থেকে ১০টি খুবানি খেলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়ানো যেতে পারে। কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে কালোজাম খেলেও। সহবাসের পর একটানা তিন দিন খেতে হয় ফলটি। পানির সঙ্গে হিং গুলে খেলেও গর্ভধারণ এড়ানো যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে তা একবার খেতে হয়। পার্সলেতেও রয়েছে জন্মনিরোধী গুণ। এটিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না বললেই চলে। অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়াতে পার্সলের চা পান করা যেতে পারে।
আনারসে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো ভ্রূণের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়, গর্ভধারণ রোধ করে। তবে এ উদ্দেশ্যে খেতে হবে কাঁচা আনারস। দৈহিক মিলনের পরের দুই থেকে তিন দিন তা খাওয়ার নিয়ম। ফলটিতে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড প্রোজেস্টোজেন হরমোনকে ডিম্বকোষে পৌঁছাতে বাধা দেয়। ফলে গর্ভধারণ এড়ানো যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি জন্মনিরোধী প্রাকৃতিক শস্য হলো বাজরা। সহবাসের আগে ও পরে এটি খেলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ রোধ হতে পারে। বন্য রাঙা আলুতেও এই উপকারিতা মেলে। নিয়মিত দুবার করে খেলেই চলবে। এমনকি মাসের পর মাস ধরে খেলেও এটি জন্মনিরোধী হিসেবে কাজ করতে পারে।
উল্লিখিত উপাদানগুলো প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

ু ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top