সাজসারাই I প্রেমচিহ্ন
ভালোবাসার দাগ আড়ালে রাখাই ভালো। এমন কিছু মেকআপ রয়েছে, যাতে কাজটি সেরে ফেলা যায়
প্রেম-ভালোবাসা! মনে যেমন দাগ ফেলে যায়, ফেলতে পারে শরীরেও। আর তা লুকাতেই কত ছুতা। কখনো ফোড়া হওয়ার বাহানা, কখনো পোকামাকড়ের কামড়ের অজুহাত। চুল শুকাতে গিয়ে হেয়ার ড্রায়ারে জায়গাটা পুড়ে যাওয়ার গল্পও বেশ জনপ্রিয়। কেউ কেউ তো আরও এগিয়ে। ঠা-ঠা গরমে দিব্যি গলা ভরা জামা পরে নেন কিংবা ওড়নায় প্যাঁচ খেয়ে থাকেন শুধু লোকের কৌতূহলী চোখ এড়াতে। লাভ বাইট বা হিকি ঢেকে রাখতে। কিন্তু এত হ্যাপার দরকার কী! মেকআপের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির সহজ সমাধান সম্ভব। দরকার হবে কিছু প্রয়োজনীয় সৌন্দর্যপণ্য, বিউটি টুল আর ধৈর্য। ব্যস! অস্বস্তি থেকে মুক্তি মিলবে মুহূর্তেই।
প্রাইম টাইম
কতটা গাঢ়ভাবে দাগ ত্বকে বসেছে, তার ওপর নির্ভর করবে মেকআপ হালকা হলেই চলবে, নাকি প্রয়োজন হবে ভারী প্রলেপের। তবে দুই ক্ষেত্রে প্রাইমার ব্যবহার করতেই হবে। এটা ত্বকের বাড়তি চকচকে এবং চটচটে ভাব দূর করবে। তৈরি করবে মসৃণ ত্বক ক্যানভাস। এ ছাড়া মেকআপকে জায়গা থেকে সরতে দেবে না। টিকিয়ে রাখবে বহুক্ষণ। প্রাইমার ব্যবহারের পর ত্বকে মেকআপের লেয়ার তৈরির কাজটা সহজে সেরে নেওয়া যায়। ফাউন্ডেশন, পাউডারের প্রলেপ সুন্দর সেট হয় ত্বকে। আর লাভ মার্ক ঢাকার ক্ষেত্রে লেয়ারিংটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাইমার বেছে নেওয়ার সময় অয়েল ফ্রি বেজেলগুলো বেছে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। সময়ের সঙ্গে মেকআপের চটচটে হয়ে যাওয়া কিংবা গলে পড়া থেকে রক্ষা করবে এ প্রাইমারগুলো। আর এগুলোতে পানির মাত্রা যদি বেশি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সহায়ক হবে প্রাইমার।
কালার কারেকশন
লাভ মার্কের রং সময়ের সঙ্গে বদলায়। প্রথমে বেগুনি-লালচে থাকলেও একটু পুরোনো হলেই দাগ দেখায় কালচে নীল। সেরে ওঠার আগে সেটা আবার হলদেটে সবুজ রং ধারণ করে। তাই দাগের রং বুঝে কালার কারেকশনের রং বেছে নিতে হবে। লাভ মার্ক যদি বেগুনি লালচে হয়, সে ক্ষেত্রে গ্রিন আন্ডারটোনের কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। কালচে নীল লাভ মার্কের জন্য লাল অথবা কমলা আন্ডারটোনের কনসিলার সবচেয়ে জুতসই। এ ক্ষেত্রে ত্বক ফর্সা হলে স্যামন টোন আর চাপা হলে ম্যাঙ্গো কালারের কনসিলার ব্যবহারের পরামর্শ দেন মেকআপ আর্টিস্টরা। হলদেটে সবুজ লাভ মার্কের জন্য পার্পল আন্ডারটোনের কনসিলার সবচেয়ে কার্যকর। এখন কালার কারেকশন কীভাবে করা হবে, তারও ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া আছে। কালার কারেক্টিং প্রাইমার দিয়ে সেরে নেওয়া যাবে কাজটা। অথবা প্রথমে প্রাইমার দিয়ে স্কিন প্রেপিং সেরে সিঙ্গেল কালার কারেক্টর মেখে নিতে হবে লাভ মার্কের ওপর। প্যাডিং মোশনে। সুইপিং মোশনে কালার কারেক্টর প্রয়োগ এ ক্ষেত্রে একদম কার্যকর নয়। ফাউন্ডেশন ব্রাশ, বিউটি ব্লেন্ডার, এমনকি আঙুল দিয়েও সেরে নেওয়া যাবে কারেক্টর মেখে নেওয়ার কাজ।
ফান্ডামেন্টাল ফাউন্ডেশন
প্রাইমার দিয়ে স্কিন প্রেপিং আর কারেক্টর দিয়ে দাগ আড়ালের প্রাথমিক প্রস্তুতির পর এবার পালা ফাউন্ডেশন আর কনসিলারের। দাগযুক্ত জায়গাটা ত্বকের অন্যান্য অংশের মাঝে যেন আলাদা করে ফুটে না ওঠে সে জন্য। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নয়, বরং একটু ভারী ম্যাট ফাউন্ডেশনের প্রয়োজন হবে। অতিরিক্ত ক্রিমি ফাউন্ডেশন নির্দিষ্ট সময় পর কাক্সিক্ষত কাভারেজ না-ও দিতে পারে। চেপে চেপে ফাউন্ডেশন আর কনসিলার বসিয়ে দিতে হবে দাগযুক্ত স্থানে। আস্তে আস্তে ত্বকের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে দিতে হবে, যেন মেকআপের একটা ইভেন লেয়ার তৈরি হয়।
সেট দ্য ডিল
ফাউন্ডেশন আর কনসিলারের পুরু প্রলেপ সেট করে নিতেই হবে। নতুবা মেকআপ তো দীর্ঘস্থায়ী হবেই না, কাপড়েও লেগে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটিং পাউডার মাস্ট। অয়েল অ্যাবজরবিং ফর্মুলার। যা আগে থেকে ত্বকে মেখে রাখা ফাউন্ডেশন আর কনসিলারের কম্বিনেশনকে কেকি হওয়া থেকে রক্ষা করবে। ব্রাশে পাউডার নিয়ে বুলিয়ে নিতে হবে পুরো বেজের ওপর। এর ফলে দাগের ওপর মেকআপ সুন্দরভাবে সেট হয়ে যাবে। হাতের কাছে সেটিং স্প্রে থাকলে সবশেষে সেটাও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এটা একদমই অপশনাল।
সবশেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিতে হবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ দেখা যাচ্ছে কি না। যদি যায় সে ক্ষেত্রে আবার ফাউন্ডেশন, কনসিলার আর পাউডারের আরেক স্তর মেখে নিতে হবে। একটু সাবধানতার সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিলে দাগও ঢেকে যাবে। কেকিও দেখাবে না ত্বক। আর লাভ মার্ক ঢাকার জন্য মেকআপ করার সময় স্ট্রিকিং, ব্রাশিং বা রাবিং মোশনে ব্লেন্ড করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে স্পঞ্জ বা বিউটি ব্লেন্ডার বেছে নেওয়ার সময়ও সাবধান। গোলাকার স্পঞ্জ এ ক্ষেত্রে জুতসই। কোনা যুক্তগুলো যেমন ট্রায়াঙ্গুলার কিংবা রেকটেঙ্গুলার স্পঞ্জ এড়িয়ে যেতে হবে একদম। অথবা বুড়ো আঙুলের ব্যবহারেও ঢেকে নেওয়া যেতে পারে লাভ মার্ক।
i জাহেরা শিরীন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান