skip to Main Content

ফিচার I দেশজ পসরা

স্থানীয় পণ্যের সম্ভার নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বিপণি। সেখানে কেবল দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে নয়, কাপড় বোনাও দৃশ্যমান

দ্য মসলিন। এক ছাদের নিচে দেশীয় হরেক রকমের পণ্যের পসরা। আছে শাড়ি থেকে শুরু করে উপহারের মোড়ক পর্যন্ত নানা কিছু।
লা মেরিডিয়ান হোটেলের লবি পেরিয়ে একটু এগোলেই দ্য মসলিন। নিচের তলার বেশ বড় একটি অংশজুড়ে এর বিস্তার। ঢুকেই হাতের বামে চমৎকার জারদৌসির কাজ নজর কাড়ে। প্রথম অংশের ডিসপ্লে যা সাজানো হয়েছে সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরের গ্যালারির আদলে। সব পণ্য শেলফে সাজানো। সেটা ছাড়িয়ে ছোট একখানা তাঁতে জামদানি বোনা হচ্ছে।
করোনার ক্রান্তিকালেই এর সূচনা। মূলত বাইরের পণ্যগুলো যখন আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন অনেকেই বুঝতে পারে যে আমাদের দেশীয় সামগ্রী মন্দ নয়! শাপে বর হিসেবে হলেও করোনা দেশি উদ্যোক্তাদের একটু আলোয় এনেছিল বৈকি! তখনই দ্য মসলিনের উদ্যোগের কথা মাথায় আসে তাসনুভা ইসলাম আশার।
দ্য মসলিন প্রথমত নিজেই একটি ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের অধীনে রয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। মৌলভীবাজারের মণিপুরি শাড়ি, ঢাকার বেনারসি পল্লির শাড়ি আর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জামদানি নিয়েই মূলত কাজ করছেন তাসনুভা। মৌলভীবাজারের মণিপুরি নারী সুমি নিজেই তাঁত দিয়ে বুনে দেন মণিপুরি শাড়ি। একইভাবে রয়েছে বেনারসি শাড়ির জন্য শামীম আখতার সিদ্দিক। আর রয়েছেন রূপগঞ্জের জামদানি তাঁতির জন্য এনামুল হক। এ ছাড়া সিল্ক, খাদি, নকশি কাঁথার ফোঁড়ে শাড়ি রয়েছে তাদের। তাসনুভা ইসলামের সঙ্গে কথার একপর্যায়ে হাজির হলেন এনামুল হক। তিনিই দ্য মসলিনের শাড়িগুলো নিয়ে বললেন, ‘এইখানে আমরা নিজেরা কাজ করি, নিজেরাই সরাসরি শাড়ি দিই। মাঝখানে ফড়িয়া নাই। আমরাই বলে দিই, কোন শাড়ি কত দামে বিক্রি হবে। তাই ন্যায্যমূল্য পাই, আর সেই দামে বিক্রি করা যায়।’ অর্থাৎ অনেকটা ফেয়ার ট্রেডের প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণায় চলছে তাদের কারবার।
এখানে দ্য মসলিনের পাশাপাশি রয়েছে আরও কিছু ব্র্যান্ড, যাদের প্রতিটিরই আলাদা অনলাইন বা অফলাইন পরিচিতি রয়েছে। কৈশরী মূলত মুক্তো, আটপৌরে ঐতিহ্যবাহী ও ইউরোপের ফিউশনে আর আনবার মূলত দেশীয় মোটিফের জুয়েলারি নিয়ে কাজ করে। ভার্মিলিওন ফিউশন পোশাক; দেশি মেডুসা ডিজাইনার ব্লাউজ, কুর্তি ও গাউন; মারজান হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি; ওয়্যারহাউস প্রান্তিক শিল্পীদের থেকে বানানো কাপড়; আর অ্যাইমো ওয়েস্টার্ন আর পার্টি ঘরানার পোশাক নিয়ে রয়েছে এখানে। অহং রয়েছে কাঠের হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে। হাত বাক্স মূলত ফ্রিজ ম্যাগনেট আর ডেকোরেটিভ ওয়াল ফ্রেম; ফিনারি রিকশা পেইন্টের আদলে গৃহস্থালি পণ্য; ক্র্যাফটস অ্যান্ড কালারস হাতে আঁকা গৃহস্থালি সামগ্রী; বেশি দেশি কাঁসার ডেকোরেটিভ পিস ও তৈজসপত্র, নুসক্র্যাফট গ্লাস পেইন্ট ও গৃহস্থালি পণ্য রয়েছে এখানে। রয়েছে টাইগার নাজিরের পটচিত্র, আর যথাশিল্পের নোটবুক আর টি-শার্টও। আর এগুলোর বাইরে একটু আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয় বেস্টকমের। মূলত গিফট প্যাকেজিং নিয়ে তাদের কারবার। ছোট, বড় নানা আকারের কাগজের গিফট বক্স থেকে শুরু করে রয়েছে শাড়ি রাখার বক্সও। এটাও তাসনুভা ইসলামেরই উদ্যোগ।
‘প্রতিটি পাঁচ তারকা হোটেলেরই একটি নিজস্ব দোকান থাকে, যেখান থেকে অতিথিরা ফেরার সময়ে টুকরো স্মৃতি হিসেবে বা প্রিয়জনের জন্য কোনো না কোনো উপহার কিনে নিয়ে যান। লা মেরিডিয়ানের দ্য মসলিনকে তেমনটা ভাবলে খানিক ভুল ভাবা হবে’, বলছিলেন তাসনুভা। ‘আমাদের এই শপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যারা দেশীয় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছে, তাদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। অন্য পাঁচ তারকা হোটেলে এটা যেমন কেবল একটা শপ, মুনাফার জায়গা— আমাদের এখানে সেটা করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির অধীনে রয়েছে। যে কারণে আমাদের এখানে যেকোনো পণ্যের দাম অন্য যেকোনো পাঁচ তারকার সুভ্যেনির শপের থেকে কম। আর তরুণ উদ্যোক্তারাও এখান থেকে উৎসাহিত হচ্ছেন— এখানে থাকা অনেক ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তাই এখনো পড়াশোনার গন্ডি পেরোননি, সে জায়গা থেকে বলতে গেলে তারা যে এক্সপোজার পাচ্ছেন, তা তাদেরই অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো।’
আপাতত অল্প কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে এখানে, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে দ্য মসলিনের।

লেখা ও ছবি: আল মারুফ রাসেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top