skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I বিয়ের দোপাট্টা

এখনকার বিয়েতে চলছে দোপাট্টার নতুন ট্রেন্ড। ফলে এই বস্ত্রখণ্ডে দৃশ্যমান হচ্ছে উদ্ভাবনী সব এমবেলিশমেন্ট। পরার ধরনেও ঘটেছে কিছুটা পরিবর্তন

কনের পোশাকে দোপাট্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া বিয়ের সাজটাই যেন সম্পূর্ণ হয় না। এ নিয়ে কম এক্সপেরিমেন্ট হয়নি। ফলে, ব্রাইডাল ফ্যাশনে এসেছে দারুণ কিছু ট্রেন্ড। জেনে নেওয়া যাক বিয়ের দোপাট্টার চলতি ধারা সম্পর্কে—
ফ্রিঞ্জ দোপাট্টা
বর্তমান বিয়ের ফ্যাশনে ফিরে এসেছে পঞ্চাশ-ষাটের দশকের সোনালি কিরণ বা ফ্রিঞ্জ দোপাট্টা। ব্রাইডাল লুকে ভিন্টেজ ভাব ভালোবাসেন যারা, ফ্রিঞ্জ লাগানো দোপাট্টা তাদের মধ্যে এখন খুবই জনপ্রিয়। ইদানীং অনেক কনেই বিয়ের শাড়ি, লেহেঙ্গা বা সারারার সঙ্গে একে জুড়ে নিচ্ছেন। আর এতে কনের সাজে চমৎকার ট্র্যাডিশনাল আমেজ আসছে। ওল্ড-স্কুল ঘরানার ফ্রিঞ্জ দোপাট্টার সঙ্গে আধুনিক বিয়ের সাজের মিশেলে আসছে বৈচিত্র্যও। আগে গোল্ডেন জরির কিরণ খুব চললেও এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রোজ গোল্ড আর সিলভারের কিরণ। হালকা রঙের ওড়নার সঙ্গে এগুলো খুব সুন্দর মানিয়ে যাচ্ছে।
কাস্টমাইজ দোপাট্টা
শুরুটা ২০১৮ সালে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের মধ্য দিয়ে। মার্কেলের বিয়ের লং ট্রেইল ভেইলে কারুশিল্পীরা নিখুঁত হাতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের জাতীয় ফুল। এর কিছুদিন পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন বলিউড ডিভা দীপিকা পাড়ুকোন। পরেছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির নকশা করা পোশাক। সিন্ধি রীতির বিয়ের অনুষ্ঠানে লেহেঙ্গার সঙ্গে থাকা জরি ও কুন্দন বসানো ওড়নার পাড়ে এমব্রয়ডারি করে লিখে দেওয়া হয় বিশেষ বাণী। সুই-সুতার ফোঁড়ে সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয় ‘সদা সৌভাগ্যবতী ভব’। অতিথিরা কনের মাথায় হাত রেখে ঠিক এই আশীর্বাদটিই করেন। অন্যদিকে ২০১৯ সালে ভাইরাল হয় বিখ্যাত কানাডিয়ান সংগীতশিল্পী জাস্টিন বিবারের স্ত্রী মডেল হেইলি বাল্ডউইন বিবারের বিয়ের গাউনটির সঙ্গে থাকা লং ট্রেইন ভেইলের ছবিটি। সেখানের একদম শেষ প্রান্তে এমব্র্রয়ডারির মাধ্যমে লেখা হয়, ‘TILL DEATH DO US PART’। খ্রিস্টীয় রীতির বিয়েতে বর ও কনে উভয়কেই ঈশ্বর ও সবাইকে সাক্ষী রেখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার ব্রতটি নিতে হয়। সেলিব্রিটিদের ফ্যাশন সব সময় ট্রেন্ডকে প্রভাবিত করে। বিয়ের পোশাকের ক্ষেত্রেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
মেগান মার্কেল ও হেইলি বিবারের দেখাদেখি পশ্চিমা অনেক কনে নিজেদের ওয়েডিং ভেইল কাস্টমাইজ করে কোনো লেখা বা প্রতীক জুড়ে দিচ্ছেন। সেটি হতে পারে হৃদয় প্রতীকের সঙ্গে বর-কনের নাম বা কোনো প্রেমের কবিতা। আমাদের উপমহাদেশীয় বিয়েতে ভেইল না থাকলেও আছে ওড়না। দোপাট্টা কাস্টমাইজ করতে দেরি হলে এখন অনেকে দীপিকা পাড়ুকোনের পথ অনুসরণ করছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান— এই তিন দেশে বিয়ের ফ্যাশনে সোনালি জারদৌসি বা কাশ্মীরি টিল্লা এমব্রয়ডারিতে লেখা ওড়না এখন হট ট্রেন্ড। মুসলিম বিয়েতে কনেরা দোপাট্টার পাড়ে জুড়ে দিচ্ছে কোনো বিশেষ দোয়া, যেমন ‘বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফি খাইরিন’। বিয়ের পর বর-কনের জন্য এই দোয়া করতেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। আবার হিন্দুরীতির বিয়েতে নববধূর ওড়নার কিনারে ভেসে উঠছে বিয়ের মন্ত্র, ‘যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম’। অর্থাৎ তোমার হৃদয় আমার হোক, আমার হৃদয় তোমার। অনেকে নিজেদের পছন্দের কোনো রোমান্টিক গান বা কবিতার লাইন জুড়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া বর-কনের নাম লেখা এমব্রয়ডারি তো আছে। বাদ পড়েনি নিজেদের প্রথম দেখা হওয়া বা প্রেমে পড়া দিনটির তারিখ।
বান্ধনী দোপাট্টা
ব্রাইডাল ফ্যাশন ট্রেন্ডে আরেকটি নতুন সংযোজন বান্ধনী দোপাট্টা। বিয়েতে ছেলেদের বান্ধনী সাফা খুব জনপ্রিয় ছিল। আর এখন কনেদের ওড়না হিসেবে এই কাপড় খুব চলছে। বান্ধনী একটি বিশেষ ধরনের টাই ডাই বা বাটিক ফ্যাব্রিক। এটি বান্ধেজ নামেও পরিচিত। বান্ধনী, টাই ডাইয়ের সবচেয়ে প্রাচীনতম রূপ। ইতিহাসে দেখা যায়, বহু বছর আগে এক রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথম বান্ধনী শাড়ি পরা হয়েছিল। অজন্তা গুহায়ও বান্ধেজের (চিহ্নসূচক) ছবি পাওয়া গেছে। প্রাচীন এই শিল্পের চর্চা আজও হয়ে আসছে। এটি গুজরাট, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকার ঐতিহ্যবাহী ফ্যাব্রিক। সাধারণত তুলা বা রেশমের কাপড়ে বান্ধনী টাই ডাই করা হয়ে থাকে। কাপড়টি শক্ত করে বেঁধে রঙে ডুবিয়ে রাখা হয়, আর বাঁধা অংশগুলোতে আসে ঝলমলে রং। বান্ধেজ হলো গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাটার্ন, মনোহর রং আর আকর্ষণীয় সব প্যাঁচের এক অপূর্ব সমন্বয়। কনের লেহেঙ্গায় ওড়না হিসেবে একে লাইমলাইটে আনেন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি। ২০১৮ সালে মুকেশ আম্বানির একমাত্র কন্যা ইশা আম্বানির বিয়ের অফ হোয়াইট লেহেঙ্গায় জোড় বেঁধে ছিল লাল রঙের বান্ধনী দোপাট্টা। এখন ওয়েডিংগুলোতে ব্রাইডাল ওয়্যারের সঙ্গে ডাবল দোপাট্টা দারুণ ইন। তবে কিছু কনেকে কেবল একটি বান্ধেজই পরতে দেখা গেছে। সিঙ্গেল বান্ধনীগুলোতে জারদৌসি, টিল্লা, কুন্দন, মিরর ওয়ার্ক, গোটা পাট্টির মতো ভারী কাজ দেখা যাচ্ছে। কেউ লেহেঙ্গা বা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে বা একদম বিপরীত রঙের ওড়না যেমন পরছে, তেমন অনেকে মাল্টিকালারড বান্ধেজও বেছে নিচ্ছে।
বিজুয়েলড দোপাট্টা
সম্প্রতি বিয়ে করেছেন বলিউড প্রযোজক এবং নামকরা স্টাইলিস্ট রিয়া কাপুর। ঘরোয়া বিয়েতে মিনিমাল সাজে পরেছিলেন অনামিকা খান্নার ডিজাইন করা সাদা চান্দেরি শাড়ি। নিজের বিয়ের ফ্যাশনে একটা বড় স্টেটমেন্ট রাখার জন্য ফ্যাব্রিকের ওড়নার বদলে বেছে নিয়েছিলেন হাজারটা ছোট ছোট মুক্তায় বোনা অসাধারণ সুন্দর ভেইল। এই ভিন্টেজ পিসটি বানিয়েছিল বিরধিচান্দ ঘনশ্যামদাস জুয়েলার্স। তার প্রথারুদ্ধ এই বিয়ের সাজে মজেছে নেটিজেনরা। বিশেষ করে নান্দনিক মুক্তার ভেইলটি নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। একে একটি নতুন ট্রেন্ডে রূপ দিতে অনামিকা খান্না তার কালেকশনে এটি যুক্ত করেছেন। ফ্যাশন বোদ্ধাদের ধারণা, এখন অনেক কনেই এমন রত্নখচিত ওড়না পরবে।
ডাবল দোপাট্টা
এখন বেশির ভাগ কনেকে দেখা যাচ্ছে বিয়ের পোশাক, বিশেষ করে লেহেঙ্গার সঙ্গে দুটি করে দোপাট্টা পরতে। একটি ওড়না দিয়ে ড্রেপিং করছে, অন্যটি দিয়ে ঘোমটা দিচ্ছে। ব্রাইডাল লুকে একটি রাজকীয় ভাব আনতে চাইলে ডাবল দোপাট্টা বেছে নেওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়ের দিকে। যেমন দোপাট্টাটা হতে হবে অরগ্যাঞ্জা, নেট বা অন্য যেকোনো শিয়ার ফ্যাব্রিকের। ড্রেপিংয়ের জন্য নিতে হবে একটু ভারী কাপড়ের ওড়না। সেকেন্ড দোপাট্টা হিসেবে এখন বান্ধানী, ভেলভেট, কাতান, বেনারসি এমনকি পাশমিনাও বেশ চলছে। লেহেঙ্গার কথা ভেবে দুটো ওড়নার যেকোনো একটার রং বাছাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কনট্রাস্ট করার পাশাপাশি একই কালার প্যালেটের হালকা বা গাঢ় টোন বেছে নেওয়াই ভালো।

 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: ইফা
ওয়্যারড্রোব: খানসাব স্টুডিও, অর্ণব মুর্তজা আলী
জুয়েলারি: স্পার্কেল
ফ্লোরাল জুয়েলারি: উৎসাহ
পার্ল ভেইল: রঙবতী
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top