skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ইন্ডিয়া কতুর উইক ২০২১

এবারের পোশাক কেমন হবে, তা জানিয়ে দিল দুমাস আগে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া কতুর উইক। বোঝা গেল, মিনিমালিস্টিক ড্রেসও আর থাকছে না

গত ২৩ থেকে ২৯ আগস্ট এফডিসিআইয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ফ্যাশন ইভেন্ট দ্বিতীয় ডিজিটাল ইন্ডিয়া কতুর উইক ২০২১। এবার ১৯ জন ডিজাইনার ফ্যাশন ফিল্মের মাধ্যমে তাদের কালেকশন দেখিয়েছেন। এসব থেকে উঠে আসছে বিয়ের সিজনের সেরা ট্রেন্ডগুলো।
মনীশ মালহোত্রা
ডিজিটাল কতুর উইকের শুরুটা হয় বিখ্যাত ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার বৈচিত্র্যময় মোহনীয় সংগ্রহ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। এই ম্যাক্সিমালিস্ট এবং ইনক্লুসিভ কালেকশনের নাম ছিল ‘নূরানিয়াত’। গতবারের মতো এবারও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ফ্যাশন ফিল্মের মাধ্যমে কালেকশন শোকেস করা হয়। এ নিয়ে মনীশ মালহোত্রা বলেন, ‘নববধূরা বেশ আবেগপ্রবণ হলেও বিয়েতে তারা মজা করতে চায়। আমি আমার ব্রাইডাল এডিট-নূরানিয়াতে এই অনুভূতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’ এবার এই সংগ্রহ সাজাতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রিগ্যাল রেড, স্পার্কলিং গোল্ড এবং গর্জাস পিচ রংগুলোকে। এর সঙ্গে ছিল মালহোত্রার সিগনেচার জারদৌসি এবং সিকুইন। কালেকশনটিতে ভারী লেহেঙ্গা ছাড়া আর কোনো পোশাক রাখা হয়নি। এখানকার লং ট্রেইল ভেইলের আদলে বানানো দোপাট্টাগুলো নজর কেড়েছে। এবার এই ফ্যাশন ফিল্মে তার মিউজ হিসেবে ছিলেন অভিনেত্রী কৃতী শ্যানন। এতে আরও দেখা যায় সাবেক সুপার মডেল নয়নিকা চ্যাটার্জিকে।
গৌরব গুপ্ত
যিনি এবার ক্রিয়েটিভ ও ড্রামাটিক শিলুয়েট দিয়ে সবার মন জয় করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার কাজে ছায়াপথের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ‘ইউনিভার্সাল লাভ’ নামের কালেকশনের বৈশিষ্ট্য ছিল ধূমকেতুপ্রাণিত মোটিফ ও মহাজাগতিক রং। যেমন মেয়েদের লেহেঙ্গা ও মাল্টিলেয়ারড হাইব্রিড গাউনে ছিল কসমিক গ্রে, অ্যাস্টেরয়েড পিংক, নেপচুন ব্লু, গিল্ডেড গোল্ড এবং ছেলেদের ভেলভেট এমব্রয়ডেড টাক্সেডো ও ফ্লেয়ারড ট্রাউজারে ছিল টিল, সাদা-কালো রঙের উপস্থিতি। এই গোটা সংগ্রহটি বানানো হয়েছে মডার্ন ব্রাইডদের জন্য, যারা নিজেদের বিশেষ দিনটিতে একটি বড় স্টেটমেন্ট রাখতে চায়। গৌরব গুপ্ত তার ব্রাইডাল কতুর ফিল্মটি শুট করার জন্য বেছে নেন হায়দরাবাদের বিখ্যাত তাজ ফালাকনুমা প্যালেসকে।
পঙ্কজ অ্যান্ড নিধি
ডিজাইনার পাওয়ার কাপল পঙ্কজ ও নিধি এবার হাজির হয়েছেন বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান ওয়েডিং কালেকশন নিয়ে। বিশাল স্টেটমেন্ট হাতা, ভারী এমবেলিশমেন্ট, ট্রেইলিং কেইপ, ফ্লোয়িং স্কার্ট— কোনো কিছুই মিনিমাল ছিল না। ম্যাক্সিমালিস্ট সংগ্রহটির নাম রাখা হয়েছে ‘আফটারগ্লো’। এখানকার গাউন, ব্লাউজ ও স্কার্টগুলো বানাতে হাতে বোনা অ্যাপ্লিকের পাশাপাশি অরিগামি ফোল্ডিং, ল্যাটিসওয়ার্কের মতো ব্যতিক্রমী কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। ক্রোমাটিক গোল্ড, পার্ল পিঙ্ক, ডাভ গ্রে ও রুবি রেডের মতো মেটালিক শেডগুলো এই ম্যাক্সিমালিস্ট আউটফিটগুলোকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। সাসটেইনেবল ফ্যাশনের কথা চিন্তা করে, কালেকশনে থাকা বেশির ভাগ পোশাকের ডেকোরেটিভ ম্যাটেরিয়ালগুলো নানা রকম বর্জ্য থেকে বানানো হয়েছে। পঙ্কজ ও নিধি তাদের কতুর ফিল্মটি ধারণ করেছেন ডিজাইনার স্টোর ‘দ্য কিলা’তে। এখানেই তাদের স্টোরে পাওয়া যাবে নতুন সংগ্রহগুলো।
শান্তনু অ্যান্ড নিখিল
চোখধাঁধানো সব লেহেঙ্গা, গাউনের ভিড়ে চমক দেখিয়েছে মেহ্রা ভ্রাতৃদ্বয়ের কালেকশন ‘ওয়েসিস’। প্রায় ৭০ শতাংশ মেনসওয়্যার নিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের সংগ্রহটি। মডার্ন গ্রুমদের কথা মাথায় রেখে বানানো পোশাকগুলো ফ্যাশন সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কালেকশনে ছিল কাউল ড্রেপড সিল্ক কুর্তা, বৈচিত্র্যময় এমবেলিশমেন্টের বুন্ডি জ্যাকেট, অর্নামেন্টাল কলারযুক্ত বান্ধগালা এবং বাহারি সাফা। মিলিটারিপ্রাণিত মেনসওয়্যারে ছিল না কোনো ভারী এমব্রয়ডারি। এর বদলে শান্তনু ও নিখিল ছেলেদের বিয়ের পোশাকে ডিজিটাল প্রিন্ট ব্যবহার করে তাক লাগিয়েছেন। নিও-ট্র্যাডিশনাল সংগ্রহটি সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে বার্নট ব্লু, স্লেট গ্রে-এর মতো রাস্টিক শেড। মেনসওয়্যার ফোকাসড কালেকশনটিতে মেয়েদের পোশাক ছিল যথেষ্ট মিনিমাল, তবে এলিগ্যান্ট।
তরুণ তাহিলিয়ানি
প্রবীণ এই ডিজাইনার ‘দ্য আর্টিসানাল কতুর’ প্রদর্শনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রগুলোর প্রতি। তার ভাষ্য, এটি রং এবং শিল্পের উদ্যাপন। পুরো কালেকশনকে চিকনকারি, পিচওয়াই, রাংরেজ, ককটেল গডেস, পাকিজাগি এবং ব্রাইডাল নামে ছয়টি আলাদা সংগ্রহে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্যাপসুলে রয়েছে নিজস্ব গল্প ও নকশা। ব্রাইডাল কালেকশনটির রঙের বিন্যাস করা হয় ঐতিহ্যবাহী লাল, হালের প্যাস্টেল ও বেইজ শেড দিয়ে। এতে ছিল বিভিন্ন কাটের ব্লাউজ, লেহেঙ্গা, সারারা, কোট, স্কার্ট, কনসেপ্ট শাড়ি, চোলি কেইপ, কুর্তা। এখানে আধুনিক ডিজাইনের শিলুয়েট বানাতে ব্যবহার করা হয় আদি ভারতীয় বুননকৌশল। যেমন জাদাউ, গোটা পাত্তি, ডানা, জারদৌসি, ডোরি ইত্যাদি। এমবেলিশমেন্ট হিসেবে ছিল আয়না, মুক্তা, পুঁতি, চুমকি, রেশম ফুলের কাজ। এবারের সংগ্রহে নজর কেড়েছে অরগ্যাঞ্জা ব্রোকেড, শিয়ার সিল্ক, নোভেলটি ক্রিঙ্কেল, মুনগা সিল্ক ব্রোকেডের মতো ফ্যাব্রিকের উপস্থিতি।
ট্রেন্ড ২০২১/২২
আসছে বিয়ের সিজনে কী কী ট্রেন্ড থাকছে, তার কোনো আভাস নয়, বরং একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে এবারের কতুর উইকে। বিয়ের সাজে মিনিমালিস্টিক ড্রেস খুব একটা দেখা যাবে না— এমনটাই বলছে বিভিন্ন ডিজাইনারদের কালেকশনগুলো। শাড়ির বদলে এবার বেশি দেখা যাবে লেহেঙ্গা ও নানা ডিজাইনের গর্জাস গাউন। কনের পোশাকে লাল রঙের চল থাকবেই। এর পরপরই প্রাধান্য পাবে বেইজ এবং মেটালিক শেডগুলো। মডার্ন শিলুয়েটে ট্র্যাডিশনাল ফ্যাব্রিক বা ক্রাফটের ব্যবহার হবে বেশি। আর যেসব কনে সাসটেইনেবিলিটির কথা চিন্তা করে, তাদের জন্য থাকবে কনসেপ্ট কতুর।
এসব ছাড়াও ফ্যাশন সমালোচকদের মতে ট্রেন্ডে আরও থাকছে কো-অর্ড সেট। যেমনটা দেখা যায় তরুণ তাহিলিয়ানির কালেকশনে। তিনি লেহেঙ্গা, শাড়ি ও টপ-প্যান্টের সঙ্গে জ্যাকেট জুড়ে উদ্ভাবন করেছেন কো-অর্ড অ্যাটায়ার। অন্যদিকে রাহুল মিশ্রর কালেকশন থেকে ট্রেন্ডে হতে পারে ব্লেজার ব্লাউজ। স্লিভ থাকবে আগের মতোই এক্সট্রাভ্যাগান্ট। আর থাকছে বিজুয়েলড দোপাট্টা। অর্থাৎ মুক্তা দিয়ে বানানো ব্রাইডাল ওড়না। আপাতত একেই বলা হচ্ছে এবারের বিয়ের সিজনের সবচেয়ে ইউনিক ট্রেন্ড।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top