সেলুলয়েড I উইন্টার স্লিপ
পরিচালক: নুরি বিলগে জিলান
চিত্রনাট্য: নুরি বিলগে জিলান ও এব্রু জিলান
অভিনয়: হালুক বিলগিনার, দেমেত আকবাগ, মেলিসা সোজেন
সিনেমাটোগ্রাফার: গোখান তিরিয়াকি
সময়ব্যাপ্তি: ১৯৬ মিনিট
ভাষা: তুর্কি ও ইংরেজি
দেশ: তুরস্ক
মুক্তি: ১৬ মে ২০১৪ [কান]
পৌরাণিক কোনো তৈলচিত্রের মতো সাজানো পার্বত্য অঞ্চলে যখন নেমে আসে কুয়াশা ও তুষারঘেরা শীত, ঈষৎ উষ্ণতার আশায় তখন জমাট ও জড়ো হয়ে আসতে থাকে প্রকৃতি; অথচ কিছু কিছু পরিবারে, কিছু কিছু মানুষের বন্ধন নিবিড় হওয়ার বদলে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে। এমনই এক পরিবারের চিরন্তন বিচ্ছেদপ্রবণ সুরের দেখা মেলে তুর্কি চলচ্চিত্রকার নুরি বিলগে জিলানের চলচ্চিত্র ‘উইন্টার স্লিপ’-এ।
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ৩ ঘণ্টা ১৬ মিনিট সময়ব্যাপ্তির এই চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের নয়নাভিরাম পাহাড়ি এলাকা। এখানে ছোট্ট একটি আবাসিক হোটেল চালায় আয়দিন নামের মধ্যবয়সী এক সাবেক অভিনেতা। এখানেই তার সংসার। পরিবারে তরুণী স্ত্রী ও মাঝবয়সী বোন।
আপাতদৃষ্টে প্রভাব-প্রতিপত্তিসহ বেশ গোছানো জীবন বলেই মনে হয় আয়দিনের। কিন্তু শীত যত ঘনিয়ে আসে, তার জীবনের বেদনা ও গাঢ় অন্ধকার ততই জমাট বাঁধতে শুরু করে। আমরা দেখতে পাই, আপাত-নির্ভেজাল আয়দিন একই সঙ্গে আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব ও শোষকের প্রতিনিধি। তার সেই নীরব শোষণের শিকার শুধু ভাড়াটে কিংবা দেনাদার নয়, বরং স্ত্রী আর বোনও। তাই কিঞ্চিৎ অপ্রকাশ্য ও কিঞ্চিৎ প্রকাশ্য অভিশাপের বিষ নেমে আসতে থাকে তার নিজস্ব ভুবনে—কুয়াশা আর তুষারপাতের মতো। দেখানো না হলেও আমরা বুঝতে পারি, বোন তাকে ছেড়ে গেছে; সংসারে থাকলেও স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিয়েছে মন থেকে।
একসময় মঞ্চকাঁপানো ও খ্যাতিমান, আর এখন সেই জৌলুশ ফুরিয়ে যাওয়া এই বুর্জোয়া মধ্যবয়সী লোকটি স্ত্রীর সঙ্গে ‘ভদ্রস্থ’ তর্কের পর নিজেকে নিজ সাম্রাজ্য থেকে বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। যেন শীতঘুমে যাবে, এমন ভান করে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। অথচ সে যায় না। রয়ে যায় কাছেরই এক এলাকায়, নিজ বন্ধু কিংবা দোসরের বাসায়। তারপর আততায়ীর মতো ফিরে আসে নিজের ডেরায়।
আয়দিনের সেই ফিরে আসা, শীতের বাষ্প-ছাওয়া জানালার ওপাশ থেকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় তাকিয়ে দেখে তার স্ত্রী। এই ফিরে আসার অর্থ কী? কোনো প্রতিশোধস্পৃহা, নাকি চিন্তার জং সারিয়ে জীবনের বাকিটা সময় নিজের ও অন্যের জন্য শান্তিময় জীবনের ব্যবস্থা করা—জানা নেই আমাদের। সুনির্দিষ্ট করে তা জানান না চলচ্চিত্রকার। সেই ভার প্রত্যেক দর্শকের নিজ নিজ উপলব্ধির ওপরই ছেড়ে দেন তিনি। তাই তুর্কি মাস্টার ফিল্মমেকার নুরির বাকি সিনেমাগুলোর মতো ‘উইন্টার স্লিপ’-এরও সমাপ্তি ঘটে ‘ওপেন এন্ড’-এ, বা ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’ ভঙ্গিমায়।
বলে রাখা ভালো, প্রখ্যাত দুই রুশ সাহিত্যিক আন্তন চেখভের ছোটগল্প ‘দ্য ওয়াইফ’ এবং ফিওদর দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ‘দ্য ব্রাদারস কারামাজভ’ অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন নুরি ও তার স্ত্রী এব্রু জিলান। তাতে জুড়ে দিয়েছেন নিজ দাম্পত্যজীবনের বোঝাপড়াও। ২০১৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’র সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পাম ডি’অর’ জয় করে এটি।
রুদ্র আরিফ
কুইজ
১। ‘উইন্টার স্লিপ’-এর সমাপ্তি ঘটেছে কীভাবে?
[ক] হ্যাপি এন্ডিং
[খ] স্বামী-স্ত্রীর তুমুল ঝগড়ার দৃশ্যে
[গ] আয়দিনের বাড়িত্যাগের দৃশ্যে
[ঘ] ওপেন এন্ডিং
২। কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পদক কোনটি?
[ক] পাম ডি’অর
[খ] গোল্ডেন বিয়ার
[গ] বেস্ট ফিল্ম
[ঘ] গোল্ডেন লায়ন
৩। অতীতে আয়দিনের খ্যাতি ছিল কী হিসেবে?
[ক] নৃত্যশিল্পী
[খ] অভিনেতা
[গ] গায়ক
[ঘ] পরিচালক
গত পর্বের বিজয়ী
১. রাকিবুল হাসান, বাড্ডা, ঢাকা।
২. ফয়জুন্নেসা লাকি, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. মো. আরিফুল হক, বিএম কলেজ, বরিশাল।