skip to Main Content

ফিচার I শীতশোভিত

তুষারে ছেয়ে যাওয়া বনাঞ্চল কিংবা বরফে পরিণত হওয়া হ্রদ, এই দৃশ্য শুধু শীতেই মেলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আবার অতিথি পাখির আগমন কিংবা দিগন্তবিস্তৃত শর্ষে ফুলের হলুদ—এর সবই মেলে দেশের ভেতরে

প্রতিটি ঋতুর ধরন আলাদা। আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্যে বিভিন্ন দেশে একই ঋতুর আবার নানান রূপ। পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেগুলোর সৌন্দর্য শীতেই ফুটে ওঠে। আবার ভ্রমণের জন্য শীতল আবহাওয়াই পছন্দ অনেকের। ফলে শীতকালে দুয়ে দুয়ে চার মিলে যায়। শীত ঋতুতে বিশ্বের রূপে যারা মোহিত হতে চান, তারা উড়োজাহাজে চেপে চলে যেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। শীতে তা হয়ে ওঠে বরফের রাজ্য। তাপমাত্রা এতই কমে যায় যে হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে যায়। মনে হবে ভূতলজুড়ে আছে ঢাউস এক টুকরা শুভ্র বরফ। শীতবিলাসে উড়ে যাওয়া যেতে পারে ইউরোপের এস্তোনিয়ায়। সেখানকার বাসিন্দারা বরফ দিয়ে স্নোম্যান বানান। পুরো অঞ্চলটিই যেন রূপকথার রাজ্য হয়ে ওঠে। অপার সৌন্দর্যের জন্য এ সময়ে সেখানে বিভিন্ন সিনেমার শুটিং চলে। ফলে হুট করে কোনো মহাতারকার সঙ্গে দেখা হয়েও যেতে পারে আপনার।
শীতে ক্রোয়েশিয়ার প্লিটভিস ন্যাশনাল পার্কও শীতপ্রিয় লোকদের সৌন্দর্যের পিপাসা মেটাতে পারে। প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যায় ১৬টি হ্রদ। একটি মিশে যায় আরেকটির সঙ্গে। আবার এর চারপাশ দেখায় মরুভূমির মতো। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতি শীতেই সেখানে নানান দেশ থেকে পর্যটকেরা আসেন।
শীত কাটাতে যাওয়া যেতে পারে জাপানেও। সেখানকার জিগোকুদানি মাংকি পার্কে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখা যায় মাংকি বাথ। ম্যাকাক বা স্নো মাংকিরা ঝরনা থেকে ধোঁয়া ওঠা পানিতে গোসল করে। কনকনে শীতে বানরের গোসল দেখতে সেখানে ভিড় জমান অনেক জাপানি। থাকেন বিদেশিরাও।
১৯৭০ সালের দিকে কানাডায় ২০ ডলারের ব্যাংক নোটে সে দেশের একটি শীতকালীন দৃশ্য ছাপা হয়েছিল। সেটি ছিল শীতে বানফ্ ন্যাশনাল পার্কের একটি হ্রদের ছবি। হ্রদের পানিতে পর্বতশৃঙ্গের তুষারাবৃত চূড়ার দৃশ্য প্রতিফলিত হয়। সেটাই সেখানে অপরূপ সৌন্দর্য হিসেবে প্রকাশ পায়। তা দেখতে শীতে জায়গাটি কোলাহলে ভরে ওঠে। শীতঋতু তার সমস্ত রূপ যেন উজাড় করে ঢেলে দেয় অস্ট্রিয়ার হালস্টাটে। এটি মূলত হ্রদের পাশে অবস্থিত একটি গ্রাম। ইতিমধ্যে গ্রামটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে জায়গা পেয়েছে। গ্রামের কাছের এক পাহাড়ের নাম সালযবার্গ। শীতে থাকে বরফাচ্ছাদিত। এর সৌন্দর্য এতই দারুণ, হালস্টাট পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হিসেবে মনোনীত হয়েছে রীতিমতো ভোটের মাধ্যমে।
শীতের সঙ্গে বুনো হরিণের মিতালি দেখতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে যুক্তরাজ্যের রিচমন্ড পার্কে। ২৫০০ একরের বিশাল জায়গায় হরিণের চাঞ্চল্য, সঙ্গে বরফশোভিত উদ্যান—চোখের তৃষ্ণা মিটে যেতে পারে। শীতের সঙ্গে মিতালি করে উটও, তবে তা মঙ্গোলিয়ায়, গোবি মরুভূমিতে। শীতে সেখানকার বাসিন্দারা হাজার হাজার পশমি উট নিয়ে বেরিয়ে পোলো প্রতিযোগিতা করেন। সেখানে শীত উদযাপনে যাওয়া পর্যটকদের তারা স্বাগত জানান, উটের পিঠে চড়ান। উদ্বোধনী প্যারেডে অংশগ্রহণও করতে দেন। পোলো প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সেখানে ঘোড়দৌড়ও হয় শীতে।
চারদিকে শুভ্র বরফ, মাঝখানে একটি দুর্গ। দুর্গটি ডিজনিল্যান্ডের ঘুমন্ত রাজকুমারীর দুর্গের আদলে গড়া। শীতে এমন দৃশ্য দেখতে পাড়ি জমাতে হবে জার্মানির শ্লোস নেউশভ্যানস্টাইনে। দুর্গের আশপাশের বনজঙ্গলও তুষারে ছেয়ে যায় তখন, যা সৌন্দর্যের একটি বাড়তি শোভা বয়ে আনে। শীতে আরও একটি দুর্গ সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে। সেটা লিথুয়ানিয়ার ট্রাকাই ক্যাসেল। জার্মানির দুর্গটির মতো এটির চারপাশও বরফাবৃত হয়ে ওঠে। হ্রদগুলো জমে কঠিন বরফে নেয় রূপ। যেন সাদা রাজ্যের মাঝখানে একটি দুর্গ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে! বুর্জগুলোর ওপর ঝরতে থাকে তুষার।
শক্ত বরফে স্কি করার আনন্দ দেখতে চাইলে যেতে হবে নিউজিল্যান্ডে। এ ঋতুতে সেখানকার কুইন্স টাউন মেতে ওঠে শীতকালীন উৎসবে। স্কিও হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা তা দেখতে ভিড় জমান। রাতের আকাশে অরোরা দেখাও শীতের বিশেষ এক আনন্দ। তা দেখতে যেতে হবে ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ডে। শীতে এলাকাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সেই অঞ্চলের নর্দার্ন লাইট বা অরোরা বোরিয়ালিস আকাশে প্রাকৃতিক আলোর খেলা দেখায়। তা ছাড়া বাড়তি আনন্দ হিসেবে শীতে সেখানে দেখা মেলে হাস্কি সাফারি, বলগা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ির।
কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের দেশ থেকে অনেকেই শীতযাপনে পাড়ি জমান চীনের হারবিনে। শীতে বরফ ও তুষারের ভাস্কর্য নিয়ে সে শহরে বিরাট উৎসবের আয়োজন হয়। অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বরফের নানান নকশা নিয়ে হাজির হন উৎসবে। অন্যদিকে, বেশি দূরে না গিয়ে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে জম্মু-কাশ্মীরের গুলমার্গে। শীতে এই অঞ্চলের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায়। ক্যাবল কারে চড়ে শীতদৃশ্য উপভোগ কিংবা স্কি করার জন্য জায়গাটি অনেকের পছন্দের। অবশ্য স্কির আনন্দ নিতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে উত্তরাখন্ডের অলিতেও। শীতে জায়গাটি অপরূপ হয়ে ওঠে। এ সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের সোনামার্গ অঞ্চলটিও নজর কাড়ে। তুষারপাত হয় সেখানে। হিমাচলের মানালিতেও। শীতে পুরোপুরি বরফে ঢেকে যায় মানালি। শুধু তুষার দেখতেই প্রতিবছর অনেক পর্যটকের ভিড় জমে। শীতে রূপ উন্মুক্ত করে দেয় সিকিমও; বিশেষ করে ইয়ুমথাং। স্থানটি ফুলের উপত্যকা নামেও পরিচিত।
দেশের ভেতরেও কিছু জায়গা আছে, যেগুলো শীতে সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ভ্রমণপিয়াসী বাংলাদেশি শীতকালে যান কক্সবাজারে। হালকা শীতে সমুদ্রের গর্জন ভ্রমণানন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। অবশ্য সেন্ট মার্টিনেও যাওয়া যেতে পারে। শীতে দ্বীপটি ভ্রমণের অনুকূলে থাকে। তা ছাড়া শীতের কুয়াশা ভেদ করে সকালের সূর্য দেখতে অনেকেই সাজেক ভ্যালি যান। শীত ভ্রমণের জন্য কেওক্রাডং চূড়াও উপযুক্ত। অনেকে যান কুয়াকাটায়। তবে শীতে শর্ষে খেত উপভোগ করা অনেকের কাছেই বিনোদনের বিষয়। দিগন্তবিস্তৃত হলুদের সঙ্গে মিশে যেতে চাইলে যাওয়া যেতে পারে মাদারীপুর জেলায়। মাঠের পর মাঠজুড়ে শর্ষে দুলতে থাকে সেখানে, যা শীতদৃশ্যে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
শীতে বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখিরা আসে। ফলে দেশের হাওরগুলো অনন্য সৌন্দর্যমন্ডিত অঞ্চলে পরিণত হয়। তাই এ সময়ে টাঙ্গুয়া কিংবা হাকালুকি হাওরে যাওয়া যেতে পারে।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top