ফুড বেনিফিট I চিকিৎসায় চালকুমড়া
এশিয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই যেসব সবজি চাষ হচ্ছে, চালকুমড়া সেগুলোর মধ্যে একটি। এর প্রমাণ মেলে প্রাচীন ভারতীয় ও চৈনিক সাহিত্যে। ধারণা করা হয়, সবজিটির উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো একটি স্থানে। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে প্রায় ৯৬ শতাংশই পানি। ১০০ গ্রাম চালকুমড়ায় মেলে আমিষ ০.৪ গ্রাম, শর্করা ৩ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৩ কিলোক্যালরি, ভিটামিন সি ১০.১ মিলিগ্রাম, ফাইবার ২.৯ গ্রাম, পটাশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান শরীরের নানান রোগ সারায়। যেমন, সবজিটি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে পেট ও অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। এর বীজ গ্যাস্ট্রিকের পথ্য। কৃমির সমস্যা দূর করে। এ উদ্দেশ্যে দুই গ্রাম বীজ বেটে পানিতে গুলিয়ে খেলেই উপকার পাওয়া যায়।
তা ছাড়া চালকুমড়া খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা সারে। এ জন্য চালকুমড়ার রস পেটে মালিশের পরামর্শ দেন অনেকে। এতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই সুফল মেলে বলে কথিত আছে। সবজিটির রসে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ সারে। আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে চালকুমড়া। পাকস্থলীতে সৃষ্ট অ্যাসিড উপশমেও এর সুনাম রয়েছে।
চালকুমড়াকে বলে ব্রেইন ফুড। বোঝাই যাচ্ছে, মস্তিষ্কের বালাই সারাইয়ে এর উপযোগিতা রয়েছে। এটি মগজের নার্ভগুলো শীতল রাখে। ফলে মানসিক রোগীদের জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করে। হিস্টিরিয়া সারায়। মনভুলো সমস্যা দূর করতে চালকুমড়া শুকিয়ে সেটির গুঁড়া সামান্য মধুতে মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে। উন্মাদ রোগের জন্যও সবজিটি উপাদেয়। যাদের মাথা গরম, তারা নিয়মিত চালকুমড়ার মোরব্বা খেলে উপকার পেতে পারেন।
চালকুমড়া খেলে মাথা ঘোরা ও অনিদ্রা দূর হয়। মৃগীরোগ সারে। চালকুমড়ার রস খেলে যক্ষ্মার উপসর্গও কমে। এমনকি কাশের সঙ্গে রক্ত পড়াও বন্ধ হয়। এ জন্য রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেতে হয়। একটু বাসক পাতার রসযোগে খেলে আরও বেশি উপকার মেলে।
সবজিটি মেদ কমাতেও ভূমিকা রাখে। প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে। জন্ডিস হলেও এটি খাওয়া যেতে পারে। এ জন্য চালকুমড়ার ফালি রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে কিংবা টাটকা রান্না করে খেলে রোগটি তাড়াতাড়ি সারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও চালকুমড়ার গুণের ফিরিস্তি রয়েছে। এই শাস্ত্রমতে, সবজিটি বীর্য বাড়ায় এবং রক্তবিকার দূর করে। এটি পিত্তনাশক ও কফকারক। মূত্রাশয় পরিষ্কার করে।
হার্টের জন্যও চালকুমড়া উপকারী। এই অঙ্গ সুস্থ রাখতে চিকিৎসকেরা রোগীকে পাকা চালকুমড়ার হালুয়া খাওয়ার পরামর্শ দেন। তা খেলে হৃৎপিন্ডের পাশাপাশি ফুসফুসও ভালো থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও উপযোগী চালকুমড়া। সবজিটি খেলে পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ে। পাকা চালকুমড়ার বীজের শাঁস ঘিয়ে ভেজে দৈনিক খেলে শক্তি বাড়ে ও দুর্বলতা কাটে।
শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগবালাই দূর করা ছাড়াও রূপচর্চায় ভূমিকা রয়েছে চালকুমড়ার। এর রস নিয়মিত ত্বক ও চুলে মাখলে চুল চকচকে এবং ত্বক সুন্দর হয়। চামড়া থেকে বয়সের ছাপও দূর করতে পারে এই সবজির রস।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট