ফরহিম I দাড়ি-দুশ্চিন্তা
এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু নেই। শোনা কথায় কান দিলে বরং বাড়বে বিপদ! লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
কোনো কোনো পুরুষের মুখে দাড়ি বাড়ে ধীর প্রক্রিয়ায়। দাড়ির ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য কোনো অলৌকিক ওষুধ না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কোষগুলোকে উদ্দীপিত করার উপায় নিয়ে মিথের যেন শেষ নেই! অনেকের বিশ্বাস, বেশি শেভ করলে দাড়ি ঘন হয়। কিন্তু বাস্তবে শেভিং ত্বকের নিচের দাড়ির গোড়াকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করে না; এমনকি দাড়ি বাড়ার ওপরও না। আরেকটি চলতি ধারণা হলো, ঘন দাড়ি যাদের, পাতলা দাড়ির তুলনায় তাদের টেস্টোস্টেরন বেশি। অবশ্য এ কথা ঠিক, টেস্টোস্টেরন দাড়ি বাড়ায় ভূমিকা রাখে, কম টেস্টোস্টেরন এর স্বল্প বৃদ্ধির কারণ। সাধারণত পাঁচটি সম্ভাব্য কারণকে দাড়ি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করলে এর সমাধান সম্ভব।
জেনেটিক
দাড়ির ঘনত্ব প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয় জেনেটিকের মাধ্যমে। সাধারণত বাবা ও দাদার ঘন দাড়ি থাকলে পরবর্তী প্রজন্মও ঘন দাড়ির অধিকারী হবে। ভারী কণ্ঠস্বর এবং দাড়ি গজাতে সক্ষম হওয়ার মতো পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের পেছনে কাজ করে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন। শরীরের ৫-আলফা রিডাক্টেস নামক এনজাইম অ্যান্ড্রোজেন হরমোন টেস্টোস্টেরনকে ডাই-হাইড্রোটেস্টোস্টেরন (ডিএইচটি) নামের আরেকটি হরমোনে রূপান্তর করে।
ডিএইচটি সংশ্লিষ্ট কোষকে রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ করলে এটি দাড়ির বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। এর প্রভাবক শক্তি চুলের কোষের ডিএইচটির প্রতি সংবেদনশীলতার মাধ্যমেও নির্ধারিত হয়। এই সংবেদনশীলতা মূলত জেনেটিকের মাধ্যমে নির্ধারিত। অন্যদিকে, যদিও ডিএইচটি দাড়ি বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে, তবে এটি মাথায় চুলের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।
বয়স
পুরুষদের প্রায়ই ৩০ বছর পর্যন্ত দাড়ির কভারেজ বাড়তে থাকে। বয়স যদি বিশের কোঠায় কিংবা কৈশোরে থাকে, তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাড়ি ঘন হতে থাকবে।
জাতিসত্তা
এর ওপরও দাড়ি বৃদ্ধি প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর পুরুষদের দাড়ি অন্যান্য অঞ্চলের পুরুষদের তুলনায় ঘন। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, চীনা পুরুষদের সাধারণত ককেশীয় পুরুষদের তুলনায় দাড়ি কম বাড়ে। চীনা পুরুষদের দাড়ির বৃদ্ধি মুখের চারপাশে ঘনীভূত হয়; অন্যদিকে, ককেশীয় পুরুষদের গাল, ঘাড় ও চিবুকে বেশি দাড়ি থাকে। একই সমীক্ষা অনুসারে, মানুষের চুলের ব্যাস ১৭ থেকে ১৮০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে, যা দাড়ির ঘনত্বের অন্যতম কারণ।
অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা
অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা একটি অটোইমিউন অবস্থা, যেখানে শরীর চুলের কোষকে আক্রমণ করে। এর ফলে আপনার মাথার চুল ও দাড়ি পড়ে যেতে পারে। অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটার কোনো নিরাময় নেই, তবে যথাযোগ্য চিকিৎসকের কাছ থেকে বিভিন্ন বিকল্প চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে; যেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
মিনোক্সিডিল (রোগেইন)
ডিথ্রানল (ড্রিথো-স্ক্যাল্প)
কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম
সাময়িক ইমিউনোথেরাপি
স্টেরয়েড ইনজেকশন
কর্টিসোন ট্যাবলেট
মৌখিক ইমিউনোসপ্রেসেন্টস
ফটোথেরাপি
কম টেস্টোস্টেরন মাত্রা
কিছু ক্ষেত্রে কম টেস্টোস্টেরন দাড়ি বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এর মাত্রা মারাত্মক কম না হলে দাড়ির বৃদ্ধি প্রভাবিত হয় না। যদি টেস্টোস্টেরন কম থাকে, তাহলে সম্ভবত এসব লক্ষণও থাকতে পারে—
যৌনতায় অনীহা
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন
ক্লান্তি
পেশি তৈরিতে সমস্যা
শরীরের চর্বি বৃদ্ধি
বিরক্তি এবং মেজাজ পরিবর্তন
দাড়ি বাড়ানোর পদ্ধতি
ইন্টারনেটে দাড়ি বৃদ্ধির সূত্রের অভাব নেই; তবে সেগুলোর কার্যকারিতা সমর্থনের যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই। দাড়ির বৃদ্ধি সীমিত করার কোনো চিকিৎসাগত অবস্থা না থাকলেও তা ঘন করার একমাত্র উপায় জীবনধারায় পরিবর্তন আনা। জীবনধারায় যেসব পরিবর্তন দাড়ি বৃদ্ধির জন্য জেনেটিক সম্ভাবনাকে সর্বাধিক করতে পারে—
স্বাস্থ্যকর খাবার: সুষম খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা চুল বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং যুক্ত শর্করা এড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিনসহ সুষম খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর চুল বৃদ্ধির জন্য কিছু মূল পুষ্টি খাদ্যতালিকায় জায়গা দেওয়া উচিত, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি।
ধৈর্য ধারণ: কিশোর কিংবা ২০ বছর বয়সী হয়ে থাকলে চিন্তা নেই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাড়ি ঘন হতে পারে।
মানসিক চাপ হ্রাস: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে মাথার ত্বকের চুলের ক্ষতি হতে পারে। স্ট্রেস দাড়ির ঘনত্বকেও প্রভাবিত করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুম শরীরকে মেরামত করার সুযোগ দেয় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। প্রতি রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম এবং মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে এ জন্য।
ধূমপানে মানা: ধূমপান ত্বক ও চুল উভয়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ধূমপায়ীদের দাড়ি বৃদ্ধিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জেনেটিক হলো প্রাথমিক ফ্যাক্টর, যা দাড়ির ঘনত্ব নির্ধারণ করে। এটা অপরিবর্তনশীল, তবে একটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সুষম খাদ্যতালিকা দাড়ি বৃদ্ধি করতে পারে।
মাথার চুলের মতো দাড়িও পর্যায়ক্রমে বাড়ে। একটি পূর্ণ দাড়ি গজাতে ২ থেকে ৪ মাস সময় লাগে। কারণ, দাড়ি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার বাড়ে।
তাই দাড়ি বাড়ানার চেষ্টা থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে কয়েক মাস অপেক্ষা করতেই হবে। এর অর্থ, ধৈর্যশীল হওয়া এবং দাড়ি বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে—এমন চিকিৎসার লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা।
এরপরও দাড়ি বাড়া নিয়ে উৎকণ্ঠা না কাটলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
মডেল: আল ফাহাদ বারী
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: ক্যানভাস