সাজসারাই I মাইক্রোশেডিং
আইব্রাওয়ের সৌন্দর্য বাড়ানোর নতুন পদ্ধতি। বিশেষ উপায়ে, বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। বিস্তারিত লিখেছেন সারাহ্ দীনা
কারও চোখে চোখ রাখলে অজান্তেই নজর চলে যায় আইব্রাওতে। তাই বেসিক সাজের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে আইব্রাওয়ের সৌন্দর্য। নিয়মিত প্লাকিংয়ের বাইরেও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয় এর সৌন্দর্য বাড়ানোর। এই তালিকায় সর্বশেষ যোগ—আইব্রাও মাইক্রোশেডিং।
মাইক্রোশেডিং পদ্ধতিতে আইব্রাওকে প্রমিনেন্ট করে তোলা সম্ভব। আইব্রাওয়ের পুরোটাজুড়ে সূক্ষ্ম নিডল ব্যবহারের মাধ্যমে লাইট পিগমেন্টেশন করে পরিবর্তন আনা হয়। আইব্রাও মূলত একটি নির্দিষ্ট জায়গাজুড়ে থাকে। মাইক্রোশেডিং পদ্ধতিতে আলাদা করে একেকটি ব্রাওতে পরিবর্তন আনা হয় না; বরং পুরো জায়গাটা নিয়ে কাজ করা হয়। ব্যবহার করা হয় সূক্ষ্ম পেনসিল নিডল। পাউডারিংয়ের মাধ্যমে লুকে আনা হয় পরিবর্তন। স্ট্রোকগুলোর লেংথ বেশি হয়। ট্যাটু ইঙ্ক ব্যবহার করে পয়েন্টিং ডটস টেকনিকের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়। উদ্দেশ্য আইব্রাওতে একধরনের ছায়া তৈরি করা। অর্থাৎ শেডিংয়ের মাধ্যমে দৃষ্টিবিভ্রম। সেমি-পারমানেন্ট ইঙ্ক ব্যবহারে ডটগুলোকে স্থাপন করা হয় বৈদ্যুতিক অথবা ম্যানুয়াল সূক্ষ্ম নিডল পেনসিলের মাধ্যমে। এতে তৈরি হয় এয়ারব্রাশড লুক। ডটগুলোর অবস্থান যত কাছাকাছি হয়, আইব্রাও দেখতে ততটা প্রমিনেন্ট হয়ে ওঠে।
আইব্রাওতে মাইক্রোশেডিং এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত বেশ শার্প অবস্থায় থাকে। ত্বকের ধরন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করে। তৈলাক্ত ত্বকে আইব্রাও শেডিং দ্রুত মলিন হয়। তখন প্রয়োজন পড়ে টাচআপের। মাইক্রোশেডিংয়ের ফলে আইব্রাও বিশেষভাবে নজর কেড়ে নেয়। প্রমিনেন্ট দেখায়। প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিনে রং ও গাঢ়ত্ব কিছুটা সফট হয়ে আসে। শার্পনেস ৩০ শতাংশের মতো কমে। তবে তা ন্যাচারাল লুকে বেশ মানিয়ে যায়।
মাইক্রোশেডিংয়ের বেশ কয়টি ভালো দিক রয়েছে। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভালো বলেই জানা গেছে। কোনো ধরনের মারাত্মক ক্ষতি এর ফলে হয়নি। তাই ত্বক নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তারা কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন। মাইক্রোব্লেন্ডিংয়ের মতো কোনো প্রকার ব্লেড এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় না। সরাসরি সূর্যের আলো মাইক্রোশেডিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আর সাবধান থাকা চাই শক্তিশালী রাসায়নিক ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ এইচ এ এবং বি এইচ এ ব্যবহারে ব্রাওয়ের মাইক্রোশেডিং হারিয়ে ফেলতে পারে এর জৌলুশ।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি বেশ ভালো। শার্পনেস কমে এলে শুধু টাচআপেই মিলবে সমাধান। প্রতি আট মাসে একবার টাচআপ করিয়ে নিলেই চলবে। রুটিন করে যত্ন নিলে বেশ লম্বা সময় ধরে আইব্রাওকে পরিপূর্ণতা দেবে মাইক্রোশেডিং। এটি এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
আইব্রাওকে এটি একটি ফুলার লুক দেয়। ফলে ব্রাওয়ের প্রাধান্য তৈরি হয় চেহারায়।
আইব্রাওতে মাইক্রোশেডিং করাতে চাইলে প্রথম কাজ হচ্ছে রূপ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ। আগ্রহের বিষয়টি তাকে জানানো। ত্বকের ধরন, সংবেদনশীলতা—এসব জেনেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। সাধারণভাবে কিছু বিষয় নিজেও মনে রাখা দরকার। যেদিন মাইক্রোশেডিং করা হবে, সেদিন ত্বক প্রসাধন মুক্ত। রেটিনল অথবা অ্যাসিড জাতীয় কোনো উপাদান ত্বকের যত্নের প্রসাধনে থাকলে সেটি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মাইক্রোশেডিংয়ের কাছাকাছি সময়ে এ ধরনের উপাদান ত্বকে ব্যবহার না করাই ভালো। ২৪ ঘণ্টা আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত ওয়ার্কআউটে অভ্যস্ত হলে এই সময়ের জন্য একটা ছোট্ট ব্রেক নিতে হবে। অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় থেকেও। অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যাবেনা। দরকার হলে আগেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অ্যাসপিরিনের বিপরীতে কোন ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে, তা জেনে রাখতে হবে। রোদে ঘোরাঘুরির বিষয়ে বিগ নো। কোনোভাবেই এটা করা যাবে না। রোদ থেকে দূরে থাকা চাই। ত্বককে প্রস্তুত করতে হবে আগে থেকেই। মাইক্রোশেডিংয়ের আগে আইব্রাও স্পর্শ করা যাবে না। টুইজার ছোঁয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। আইব্রাও ওয়াক্সিংও করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, আইব্রাও এখন তৈরি হচ্ছে নতুন একটি যাত্রার জন্য। মাইক্রোশেডিংয়ের ফলে ত্বক নতুন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে। তাই যথেষ্ট বিশ্রাম ত্বককে দিতে হবে। প্রস্তুত করতে হবে নতুনত্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।
মাইক্রোশেডিংয়ের জন্য সাধারণত দুই ঘণ্টার মতো সময় দরকার, যদিও তা একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন। মাইক্রোশেডিং যিনি করবেন, তার দক্ষতার ওপর স্বস্তি অনেকটাই নির্ভরশীল। কার্যক্রম শুরুর প্রথমে আইব্রাওয়ের জায়গাটি খানিকটা অবশ করে নেওয়া হয়। অনুভূতিহীন করে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় একধরনের এজেন্ট। পরে আসে মূল পর্ব। ব্রাও বিশেষজ্ঞ তার হাত দিয়েই মাইক্রোশেডিং করে থাকেন। তাই তার হাতের দক্ষতা হতে হবে নিপুণ। অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্যসহকারে, ভরসা রেখে। শেডিং সম্পন্ন হলে খানিকটা ভারী মনে হতে পারে আইব্রাওয়ের জায়গাটিকে। রেডনেস তৈরি হতে পারে। আবার ব্রাওকে মনে হতে পারে বেশ খানিকটা গাঢ়। এর সবই বিলীন হবে। শুধু সময় প্রয়োজন। দুই সপ্তাহ থেকে মাসখানেকের মধ্যে কোমলভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশে যাবে নতুন এই টেকনিক। দেখাবে ন্যাচারাল।
মাইক্রোশেডিংয়ের কার্যক্রম শেষ হলেও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে এড়ানো যাবে ইরিটেশন। ত্বকের ধরন এবং ত্বক-সম্পর্কিত কোনো সমস্যা থাকলে বিস্তারিত জানানো জরুরি ব্রাও বিশেষজ্ঞকে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই প্রক্রিয়ায় নিডল ব্যবহার করা হয়। আবার যে ইঙ্ক ব্যবহৃত হয়, সেটিতে থাকে পিপিডি (প্যারাফেনাইলিন ডায়ামিন)। এটি ত্বকে রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই ইনফেকশনের আশঙ্কা থেকেই যায়। প্যাচ টেস্টকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এতে বোঝা যায়, ত্বক মাইক্রোশেডিংয়ের উপাদানের জন্য প্রস্তুত কি না। তারপরেও অনাকাক্সিক্ষত ইনফেকশন হলে চিকিৎসা কী হবে, সে বিষয়ে জেনে রাখতে হবে। কোনো প্রকার অস্বস্তি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মাইক্রোশেডিংয়ের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা কোনো ধরনের পানি ব্রাওয়ের সংস্পর্শে আনা যাবে না। শাওয়ার, ফেসওয়াশ কোনোভাবেই নয়। তাই মেকআপ থেকে দূরে থাকতে হবে এ সময়ে। আবার ঘাম ও আর্দ্রতাও ক্ষতিকর প্রথম ২৪ ঘণ্টায়। তাই এ ব্যাপারেও থাকতে হবে সচেতন। ত্বকে আর্দ্রতা তৈরি হতে পারে এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে এ সময়ে। ২৪ ঘণ্টা পার হলে ব্রাও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অয়েনমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। তারপরে লাইট ময়শ্চারাইজার।
মডেল: অন্তরা ও আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান