skip to Main Content

রূপরসদ I ক্লোরোফিলের হালফিল

ত্বক সতেজ রাখতে দারুণ। প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা সারাইয়েও সহায়ক। এর গুণ ও ব্যবহারবিধি নিয়ে লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ

ক্লোরোফিল মূলত একটি সবুজ রসায়ন, যা প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার চিকিৎসায় সাহায্য করে। ক্যানসার প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। ত্বকের যত্নেও বিস্ময়কর। এখন তো রসায়নবিদদের কাছে এবং বিভিন্ন অনলাইন শপেও ক্লোরোফিল পাওয়া যায়!
ক্ষত নিরাময়কারী
কোনো ধরনের পোড়া, কাটা বা স্ক্র্যাপে ভুগলে ক্লোরোফিল সাহায্য করতে পারে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা সাধারণত সংক্রমণের কারণ। ক্লোরোফিলের ক্ষারীয় গঠনটি যখন ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানগুলোর সঙ্গে লড়তে আসে, তখন একধরনের খামির সেই সব ক্ষতকে সংক্রমিত করে।
ব্রণের বিরুদ্ধে
জীবাণু বাড়তে পারবে না—এমন পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে ক্লোরোফিল। ব্রেকআউটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই বেশ কিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ও অ্যান্টিব্লেমিশ পণ্যে ক্লোরোফিল ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্ত পরিষ্কার করে এবং ব্রেকআউট কমায়।
পুষ্টি জোগাতে
ক্লোরোফিলের আণবিক কাঠামোর কেন্দ্রীয় পরমাণু ম্যাগনেশিয়াম। এই পরমাণু ত্বকের টিস্যু ও কোষে অক্সিজেন পেতে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন সির বিপাকে প্রয়োজনীয় এমন এক ভিটামিন, যা ত্বকের পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের নানান সমস্যা, যেমন লালচে ভাব ও চুলকানি ম্যাগনেশিয়ামের নিম্নস্তরের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া কম ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রাও কমায়, ফলে শুষ্ক ও স্ফীত ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়।
তারুণ্যে
ত্বককে পুষ্ট করার জন্য এবং সুস্থ ও তরতাজা দেখাতে শরীরের কিছু পুষ্টির প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে। ক্লোরোফিলে এগুলো বেশ ভালোভাবেই রয়েছে। তাই সৌন্দর্যের রুটিনে ক্লোরোফিল যোগ করা মানে এমন পুষ্টি যোগ করা, যা ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করবে।
বিদায় বলিরেখা
বয়স রুখতে চাইলে রূপচর্চার তালিকায় ক্লোরোফিল যোগ করা চাই। সূক্ষ্ম রেখা, কালো দাগ ও বলিরেখার প্রধান কারণ অক্সিডাইজেশন ও সূর্যের রশ্মি। ক্লোরোফিলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের সুরক্ষা দেয়। তাই একে একধরনের প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনও বলা চলে। তা ছাড়া আলো শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে ক্লোরোফিলের। এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তবে, রোদ থেকে ত্বক রক্ষায় ক্লোরোফিল দুর্দান্ত হলেও এটি কিন্তু সানস্ক্রিনের বিকল্প নয়; কেননা, সূর্যস্নানের সময় এটি ত্বককে যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারে না।
ডিওডোরেন্ট হিসেবে
গন্ধ নিরপেক্ষ করতে বেশ কয়েক দশক ধরেই ক্লোরোফিলের ব্যবহার চলছে। বলা হয়ে থাকে, ক্লোরোফিল একটি অভ্যন্তরীণ ডিওডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে, ফলে ভেতর থেকে শরীরের গন্ধ কমায়। এটি নিশ্বাসকে সুপার ফ্রেশ রাখতেও সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক ক্লোরোফিল
রসায়নবিদ বা অনলাইন স্টোর থেকে ক্লোরোফিল সম্পূরকগুলো খুঁজে নিয়ে প্রাকৃতিক তরল ক্লোরোফিল তৈরি করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন—
 ৮০ গ্রাম বাছাই করা পার্সলে পাতা
 ৬ কাপ পানি
পার্সলে পাতা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি ব্লেন্ডার বা মিক্সার ব্যবহার করে সেগুলোকে পানির সঙ্গে মেশাতে হবে। উজ্জ্বল সবুজ তরল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকতে হবে। তরলকে একটি সূক্ষ্ম চালুনিতে ছেঁকে সস প্যানে নিতে হবে। চুলায় কম তাপে ক্রমাগত নাড়তে হবে, যতক্ষণ না সবুজ কণা তরলের উপরে ভেসে উঠছে। ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। প্রস্তুত হলে কিছু বরফের টুকরাসহ একটি পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। তারপর ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ঠান্ডা হলে মসলিনের চালুনিতে ধীরে ধীরে মিশ্রণটি ঢেলে নিতে হবে। চালুনিতে জমা সবুজ পেস্ট ফ্রিজে একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করে নিতে হবে।
বাড়িতে যেকোনো সুস্বাদু স্মুদি রেসিপির জন্য এই ক্লোরোফিল ব্যবহার করা যায়। এমনকি এটি পানীয় হিসেবেও চমৎকার। এক চা-চামচ তরল ক্লোরোফিল প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। সবুজ গাছও ক্লোরোফিলের ভালো উৎস। এর মধ্যে শাকসবজি এবং ভেষজও রয়েছে, যেমন—
 গমের ঘাস
 পালংশাক
 মটরশুঁটি
 বরবটি
 আরুগুলা
 লিক
এর মধ্যে কাঁচা পালংশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্লোরোফিল থাকে। এক কাপ কাঁচা পালংশাকে প্রায় ২৪ মিলিগ্রাম, এক কাপ পার্সলেতে প্রায় ১৯ মিলিগ্রাম এবং বাকি সবজিগুলোতে প্রায় একই ধরনের ক্লোরোফিলের উপস্থিতি রয়েছে—প্রতি কাপে ৪ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম। ভেতরে-বাইরে দেখতে সবুজ—এ রকম সবজি ও ভেষজই ক্লোরোফিলের প্রধান উৎস। যে সবজি বাইরের দিকে সবুজ, কিন্তু ভেতরে সাদা, সেগুলোতে ক্লোরোফিলের পরিমাণ সামান্য।
তরল ক্লোরোফিল খাওয়া নিরাপদ। তবে কম ডোজ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে ক্লোরোফিল খাওয়া বাড়ানো ভালো বলেই অভিমত স্বাস্থ্যবিদদের। প্রাকৃতিক ক্লোরোফিল বিষাক্ত নয়, তবে এর সম্ভাব্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে; যেমন—হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া এবং মলের বিবর্ণতা।
সুস্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের সুরক্ষায় ক্লোরোফিল চমৎকার কাজ করে। তাই ত্বকযত্নে এর সংযোজন মন্দ হয় না!

মডেল: ইফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top