skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ফ্যাশন রি ক্যা প

অতিমারির দিনকালে কী কী ছিল ফ্যাশন-সচেতনদের স্টাইল জার্নালে? কোন ট্রেন্ডগুলো ফিরে এসেছে, তৈরি হয়েছে কেমন সব নতুন ট্রেন্ড? লিখেছেন সারাহ্ দীনা

বছর শুরু হয়েছিল অতিমারিতে। ঘর থেকে বেরিয়ে নিউ নরমালে অভ্যস্ত হতে কেটে গেছে অর্ধেক বছর। তবু ফ্যাশন-সচেতনেরা দূরে সরে যাননি; বরং মানিয়ে নিয়েছেন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে।
এ বছরের ফ্যাশনের গল্প বলতে গেলে প্রথমেই আসে ব্ল্যাক ফেস মাস্ক। করোনাকালে মাস্ক না পরে লোকসমাগম তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মাস্ক পরিণত হয়েছে অতি জরুরি পণ্যে। সার্জিক্যাল মাস্কে শুরু হয়েছিল করোনার সঙ্গে লড়াই; সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের মাস্কে অভ্যস্ত হয়েছি আমরা। মাস্কও হয়েছে ট্রেন্ডি। ব্ল্যাক ফেস্ক মাস্ক তৈরি করেছে ট্রেন্ড। সিল্কি কাপড়ের এই মাস্ক জনপ্রিয়তা পেয়েছে স্টাইলিশদের কাছে। সিল্কি ফ্যাব্রিক ব্যবহারে তৈরি ব্ল্যাক ফেস মাস্ক ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, সব পোশাকের সঙ্গে মিলে যাওয়ার সুবিধা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর বাইরে ব্ল্যাকের ফ্যান বেইজের কথা তো বলতেই হয়। কালো রঙের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ আছে অনেকের। অল ব্ল্যাকের জায়গা নিয়ে নিতে পারেনি কোনো রং। মাস্কের কালো তাই ছড়াচ্ছে আলো।
নব্বইয়ের দশক আর তা থেকে অনুপ্রাণিত ওয়াইটুকে—এই দুই সময়ের ফ্যাশন ফিরে এসেছে প্রতাপে। বছরের শুরুতে দেখা গিয়েছিল ওভারসাইজড কার্ডিগানের প্রতি আগ্রহ। অন্যদিকে ক্রপ সোয়েটারের ক্ষেত্রেও আঁটসাঁটের থেকে একটু ঢিলেঢালাতেই এবারের ট্রেন্ড সেট হয়েছিল।
ওভারসাইজড শোল্ডার প্যাড বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেটের চল দেখা গেছে বছরের শুরুর দিকে।
বরাবরই হিমের দেশের পোশাকের প্রভাব ফ্যাশন ট্রেন্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ বছরের শুরুতে গার্লস ফ্যাশনে উইন্টার অ্যাটায়ার হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট। ওভারসাইজড প্যাটার্নের জ্যাকেটগুলোর শোল্ডার ছিল প্যাডেড। আশির দশকের এই ফ্যাশন পুনরায় ফিরে এসে মন জয় করে নিয়েছে। এর সঙ্গে পেয়ার আপ করতে দেখা গেছে স্ট্রেট কাট ট্রাউজার ও লেদার শর্ট স্কার্ট।
লেয়ার করে পোশাক পরার চল এবারেও দেখা গেছে। ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে ছিল ফোক ইন্সপায়ারড কোট। বছর শেষে তাপমাত্রার পারদ যখন ক্রমশ নিচের দিকে নামছে, তখন এ ধরনের পোশাকের প্রতি দেখা যাচ্ছে বেশ আগ্রহ। মাঝারি থেকে ভারী বুননের ফ্যাব্রিকে তৈরি কোটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এক রঙা কোটের চেয়ে বিভিন্ন রকম ছাপাসহ কোটের চাহিদা ছিল বেশি।
মিড রিফ, অর্থাৎ পোশাকের মাঝ বরাবর একটুখানি ত্বক দৃশ্যমান—বোল্ড এই পোশাকের জনপ্রিয়তা ছিল স্টাইল ডিভাদের কাছে। ক্রপ টপ এ ধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় নাম। এর সঙ্গে বটমের বৈচিত্র্যের জোড়ে মাতোয়ারা হয়েছিলেন এবারের তরুণেরা। মিডি ড্রেসেও দেখা গেছে মিড রিফের সাহসী উপস্থাপন। ম্যাক্সি স্কার্টেও নজর কেড়ে নিয়েছে এই প্যাটার্ন।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকের হট ফ্যাশন ট্রেন্ড হেড স্কার্ফ ফিরে এসেছে এত যুগ পরে, প্রবল প্রতাপে। রঙিন স্কার্ফ ব্যবহৃত হচ্ছে অনুষঙ্গ হিসেবে। রেশম ফ্যাব্রিকের স্কার্ফের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে মানুষ। প্রিন্ট প্যাটার্নে ব্লক লেটার, ফুল ও হিজিবিজি মোটিফের চাহিদাও ছিল উল্লেখযোগ্য। বোল্ড কালারের স্কার্ফের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন ফ্যাশন-সচেতনেরা। স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে চিনের নিচে অথবা মাথার পেছনে স্কার্ফ দিয়ে নট বাঁধার প্রচলন চোখে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। গলায় জড়িয়ে নিতেও দেখা গেছে অনেককে। এমনকি ব্যাগের হাতল জুড়েও দেখা মিলেছে স্কার্ফের।
ফ্যাশনে রং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারের কালার ট্রেন্ডে প্যাস্টেল দাপুটে জায়গা দখল করে ছিল। প্যাস্টেলের জয়জয়কারের শুরু ২০১৯ সালে। সেই ধারার বিজয় পতাকা উড়তে দেখা গেছে এই ২০২১-এও। মূলত গ্রীষ্মের রং হিসেবে জনপ্রিয়তা পায় এই কালার টোন। সব ধরনের পোশাকেই দুর্দান্ত প্রতাপ দেখা গেছে এর। মেল ফ্যাশনের শার্ট থেকে শুরু করে লেডিস ওয়্যারের বয়লার স্যুট-ট্রেঞ্চ কোট, এমনকি ফেস্টিভ ওয়্যার—সবখানেই দেখা গেছে প্যাস্টেলের মায়াময় জাদু। হাজার রকম শেডের মাঝে ল্যাভেন্ডার, বাটার ও মিন্ট ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
মাস্টারড ইয়েলো রঙের জ্বলজ্বলে উপস্থিতি ছিল ব্যাগের ক্ষেত্রে। ম্যাচিং হোক আর মিস ম্যাচিং—উভয় ক্ষেত্রেই হলুদে মজেছেন ফ্যাশনিস্তারা। রানওয়ে থেকে স্ট্রিট ফ্যাশন—সবখানেই দারুণভাবে উজ্জ্বল ছিল এই রং। মনোক্রোমাটিক ড্রেসের সঙ্গে মাস্টারড ইয়েলোর মেলবন্ধন নজর কেড়ে নিয়েছিল। ধূসর থেকে শুরু করে উজ্জ্বল, সব শেডের সঙ্গে শর্ষে হলুদের আলো-ঝলমলে রূপে মন মজেছিল ফ্যাশন-সচেতনদের। সাদার সঙ্গেও এর কম্বিনেশন মানিয়ে যায় বেশ। নিত্যদিনের মুমু টোট থেকে শুরু করে রাতের পার্টির স্লিক ক্যানেরি বাগুতি—সবখানেই মাস্টারড ইয়েলোর জেল্লা।
নীল রং এবার ছিল হট ফেভারিট। পুরো অ্যাটায়ার নীল, এমনটা নয়; বরং দেখা গেছে মনোক্রোমাটিক ও গ্রের সঙ্গে পপ আপ হিসেবে নীলের ব্যবহার। এতে চমক তৈরি হয়েছে। একঘেয়েমি দূর করেছে পোশাকের। নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। নীলের নানান রকম শেড দেখা গেছে। পাউডার ব্লু থেকে ইলেকট্রিক ব্লু—সবই ছিল এর তালিকায়। কখনো নজর কেড়েছে ডেনিমের হাই নি বুট, কখনো ডেইলি ওয়্যারের ব্যাগ, কখনো পার্টি পার্স আর হ্যাট।
বটমের ক্ষেত্রে লুজ ফিট ডেনিম ছিল পছন্দের তালিকায়। মম জিনস, বয়ফ্রেন্ড জিনস, ফ্লারেস, বুট কাট এবং স্ট্রেট লেগ কাট দেখা গেছে। এর মধ্যে স্ট্রেট লেগ কাটে ছিল স্পট লাইট। আরামদায়ক প্যাটার্নের এসব বটমের সঙ্গে টপে স্লিম ফিট টি, টেইলরড ব্লাউজ, ক্রপড সোয়েটার, এলিগেন্ট ব্লাউজ জায়গা করে নিয়েছিল, টাকড-ইন স্টাইলে। ফিটিং-লুজ এই টপ-বটম কম্বো এবারের জনপ্রিয় পোশাকের তালিকার ওপরের দিকে অবস্থান করেছে।
ডিসকো কিংবা পার্টি মাতানো সিকুয়েন্স ড্রেস এবার এসেছিল ভিন্নভাবে। টানা এক বছর সামাজিক দূরত্বের কঠোর বিধিনিষেধের পরে নিউ নরমালে নিজের প্রিয় পোশাকে সেজেছেন ফ্যাশনিস্তারা। এই ট্রেন্ডকে ডাকা হয় ‘রিভেঞ্জ ড্রেসিং’। সিকুয়েন্স ছিল এ বছরের রিভেঞ্জ ড্রেসিং। নানাভাবে সামনে এসেছে এটি। কখনো টপে তো কখনো বটমে। আবার কখনো কফি ডেটে তো কখনো ক্যাজুয়ালের লেয়ারিংয়ে।
স্টেটমেন্ট স্টাইল তৈরিতে ফ্রিঞ্জিং বেশ জনপ্রিয় ছিল বছরজুড়ে। ব্যাগের সঙ্গে নকশা হিসেবে থাকা লম্বা ঝালর এবার ছিল ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের তালিকায়। অল্প একটু থেকে শুরু করে মেঝে অবধি দেখা গেছে এই নকশার গতিপথ। এ ধরনের ফ্রিঞ্জ ব্যাগে ম্যাটেরিয়াল হিসেবে চামড়ার ব্যবহার দেখা গেছে বেশি। বাদামি আর কালো রঙের ক্ল্যাসিক লুক এখানেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আবার বোল্ড কালার লাল, সবুজের প্রতিও দেখা গেছে আগ্রহ। গো টু স্টাইলের জন্য এ ধরনের ব্যাগ ছিল উপযোগী।
ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ফুটওয়্যার। এবার ফিমেল ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্ম হিল দারুণ সাড়া ফেলেছিল। এটিও এসেছে নব্বইয়ের দশকের হাওয়া মেখে। বিভিন্ন রং আর ডিজাইনে দেখা গেছে এমন জুতা। লোফারেও দেখা গেছে প্ল্যাটফর্ম হিল। স্নিকারে স্বস্তি যাদের, তারা এবারও সেখানেই বুঁদ ছিলেন। স্টিলেটোর ফ্যান বেইজ তো সব সময়ের। রঙিন স্টিলেটোতে তারা ছিলেন স্টাইলিশ। এর বাইরে সাড়া জাগিয়েছে লেইস আপ বুটস।
বিভিন্ন আইটেম বা চাহিদার বাইরে এবার চোখে পড়েছে ফ্যাশন-সচেতনদের সতর্ক মনোভাব। তারা সাসটেইনেবল ফ্যাশনের কথা ভেবেছেন। ধরণীর প্রতি মমতার প্রকাশ চোখে পড়েছে। প্রাকৃতিক তন্তুতে তৈরি ফ্যাব্রিকের চাহিদা আলাদাভাবে তৈরি হয়েছে।
স্বকীয়তা নিয়েও গর্ব করতে দেখা গেছে এবার। নিজ দেশের ফ্যাব্রিকে নিজেকে সাজিয়ে নিতে আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই। মানের দিকে বেড়েছে মনোযোগ।
ফাস্ট ফ্যাশনের থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে এখন। ফ্যাশন বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ভাবছেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। আলোচনার আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। সুন্দর পরিবর্তনের আশা তাই করাই যায়।

ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top