সঙ্গানুষঙ্গ I ইভিল ইজ ইন!
এর ব্যবহার প্রায় ৫০০০ বছর ধরে। তবু এটি নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড! কী? চমকে উঠলেন? জানাচ্ছেন শিরীন অন্যা
গ্রিসের সাধারণ রাস্তার মোড় থেকে শুরু করে আমাদের দেশীয় অর্নামেন্টের দোকান—সর্বত্র হালের নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড ‘ইভিল আই’। তবে পুরোপুরি নতুন বললে ভুল হবে, হাজার বছর আগেই এই ট্রেন্ডের আবির্ভাব; যা কিছু যুগ পরপরই ফ্যাশনে ফিরে আসে। এর আইকনিক রয়্যাল ব্লু রং আর রহস্যময় আকৃতির কারণেই বছরের পর বছর এটি ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের তালিকায় চলে আসছে।
ফ্যাশনের শুরু থেকেই ইভিল আই-এর প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকেই ইভিল আই ফ্যাশনের বিভিন্ন স্তরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেক সংস্কৃতিতে এটি এমন সব অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে কাজে লাগানো হয়, যা মানুষের দুর্ভাগ্যের কারণ হতে পারে! যেটাকে আমরা সহজ ভাষায় নজর লাগা বলি। এই মন্দ চোখ এড়ানোর জন্য অনেকেই চোখের মতো দেখতে পুঁতি বা দুল দিয়ে তাবিজ কিংবা গয়না তৈরি করেন এবং সেগুলো পরে থাকেন। আরব এবং ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো যেমন তুরস্কে এগুলো খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে এই সব স্থান ছাড়াও বিশ্বজুড়ে ইভিল আইয়ের কদর বেড়েছে। ছোট্ট সুভ্যেনির থেকে শুরু করে দামি ব্র্যান্ডের জুয়েলারি তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
হাই স্ট্রিট ফ্যাশনে সব সময়ই ইভিল আই-এর চল ছিল। তবে ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্যানডেমিক এই ইভিল আই-এর ব্যবহার আগের চেয়েও আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের তা-বের পর একটা সময়ে মানুষ কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুন্দর ও ইতিবাচক পোস্ট শেয়ার করতে শুরু করে। তখন ছোট্ট এই ইভিল আই ইমোজি অনেকেরই ফোনের স্ক্রিনের কোণে জায়গা করে নেয়। যেকোনো সুন্দর ছবির ইতিবাচক ক্যাপশনের পর এই ইমোজি ব্যবহার চলে আসে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডের শীর্ষ তালিকায়। করোনাকালে ছোট্ট এই ট্রেন্ড আবারও সব স্থানের সব সম্প্রদায়কে এক করতে ভূমিকা রেখেছে, যা শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল উদ্দেশ্য ছিল। যার প্রভাব পড়েছিল ফ্যাশন জগতেও। ফ্যাশন সার্চ প্ল্যাটফর্ম ‘লিস্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছরের শুরু থেকেই ইতিমধ্যে ইভিল আই জুয়েলারির সন্ধান বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।
বর্তমানে জুয়েলারি থেকে শুরু করে অ্যাকসেসরিজ কিংবা জামাকাপড়—সবকিছুতেই ইভিল আই ট্রেন্ডের আধিপত্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এটি এমন একটি ফ্যাশন ট্রেন্ড, যা কখনোই ‘আউট অব স্টাইল’ হয় না। সব ধরনের বয়সে মানানসই হওয়ার পাশাপাশি এটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে বহন করাও খুব সহজ। একটা ছোট্ট ব্রেসলেট থেকে শুরু করে যেকোনো স্টেটমেন্ট ড্রেস—ইভিল আই মানিয়ে যায় সবভাবেই।
জুয়েলারি
৫০০০ বছর আগে হোক কিংবা এখন, ইভিল আই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে জুয়েলারিতে। নেকলেস আর ব্রেসলেট রয়েছে ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের শীর্ষে। দু-তিন স্তরের চিকন চেইনের একটি বা দুটিতে ইভিল আই জুড়ে দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্টাইলিশ নেকপিস। মেগান মার্কেল এবং কার্দাশিয়ানদের মতো অনেক সেলিব্রিটির মাঝেও এর প্রতি ঝোঁক লক্ষণীয়। কবজিতে কিংবা গলায় ছোট্ট একটু ব্লিং, ব্যস! ব্রেসলেট আর নেকলেস ছাড়াও কানের দুল, আংটি কিংবা চুড়িতেও ইভিল আই-এর ব্যবহার বাড়ছে। চোখ শেপের স্টাড ইয়াররিং কিংবা ঝোলানো লম্বা কানের দুল—সব কটিই দেখতে বেশ ক্লাসি। অনেকে আবার পরছেন ইভিল আইড পায়েল।
স্টেটমেন্ট ব্যাগ
ক্লাচ, পাউচ কিংবা পার্স। ইভিল আই ডিজাইনের স্পার্কলি একটি স্টেটমেন্ট ব্যাগ খুব সাধারণ আউটফিটকেও ‘স্পাইস আপ’ করে তুলতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে লাঞ্চ হোক কিংবা অফিসের জমকালো কোনো পার্টি—এই ধরনের পার্স সব আসরেই সবার নজর কাড়তে পারে। ব্যাগের ওপর এই ডিজাইন সিক্যুইনের বা পাথরের কাজের হতে পারে, এমনকি প্রিন্টেডও। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে পছন্দসই যেকোনো ডিজাইন বা সাইজের ইভিল আই স্টেটমেন্ট ব্যাগ বেছে নেওয়া যায়।
হেয়ার অ্যাকসেসরিজ
ইভিল আই ট্রেন্ডের প্রভাব পড়েছে সব ধরনের অ্যাকসেসরিজে। বাদ পড়েনি চুলের অ্যাকসেসরিজও। ইভিল আই শেপড হেয়ার ক্লিপ এবং হেয়ার ব্যান্ডও চোখে পড়ছে ইতিমধ্যে। কিছু হেয়ার ক্লিপ রয়েছে, যেগুলো একদমই সিম্পল গোল্ডেন কিংবা সিলভার মেটাল দিয়ে চোখের শেপ তৈরি করা। কিছু ক্লিপে আবার মাথায় কিংবা মাঝখানে পাথরের তৈরি ইভিল আই জুড়ে দেওয়া। ইভিল আই প্রিন্টেড ক্ল ক্লিপও মিলছে বাজারে। এ ছাড়া রাবার ব্যান্ডের সঙ্গে কিংবা চুলের কাঁটার মাঝেও দেখা যাচ্ছে এর উপস্থিতি।
ফুটওয়্যার
ইভিল আই খচিত জুতার স্টাইলের শেষ নেই। স্লিপার থেকে শুরু করে হিলস—সব ধরনের জুতায় ছেয়ে যাচ্ছে ইভিল আই ট্রেন্ড। এমনকি জিজি হাদিদ লিমিটেড এডিশন শু কালেকশনেও ছিল ইভিল আই-এর উপস্থিতি। এই কালো ও বাদামি জুতা জোড়ার একটিতে চোখ শেপ আঁকা, অন্যটি প্লেইন ব্ল্যাক। এ ধরনের ডিজাইনের জুতা দেখা যায় অন্য কিছু ব্র্যান্ডেও। রঙের মাঝে প্রাধান্য পায় কালো নীল সাদা কিংবা বাদামি রং। স্যান্ডেলের মাঝে স্লিপার এবং স্লাইডসও রয়েছে ইভিল আই থিমের। কিছু বোহো সামার স্যান্ডেলে রয়েছে, যেগুলোতে ইভিল আই-এর পাশাপাশি শামুক-ঝিনুক কিংবা পুঁতিও যোগ করা হয়। কোন জুতায় করা হয় ইভিল আই ওয়েভ ডিজাইনের হ্যান্ড পেইন্ট। সাদা জুতার ওপর নীল, কালো আর সোনালি পাথরের কাজ করা ফ্ল্যাট শু এনেছে কার্ট গাইগার। গুচি কাজ করছে ইভিল আই হিলস নিয়ে। স্নিকার এবং লেদার শু-তেও দেখা যাচ্ছে এর প্রচলন। ছেলে কিংবা মেয়ে—সব বয়সী মানুষের পায়ে এসব জুতা মানিয়ে যায়।
এসব অ্যাকসেসরিজ খুব সহজেই মিলবে আমাজন কিংবা ইবে-র মতো ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইটগুলোতে। বর্তমানে দেশীয় এমন অনেক অনলাইন পেজ আছে, যারা দেশের বাইরে থেকে অ্যাকসেসরিজ নিয়ে আসে। ওই সব পেজে খুঁজে দেখা যায়, অথবা প্রি অর্ডারের ব্যবস্থা তো আছেই। আবার অনেক সময় আশপাশের জুয়েলারি কিংবা ব্র্যান্ডের জুতার দোকানে খুঁজতে খুঁজতে দেখা মেলে এসব অ্যাকসেসরিজের। পেয়ে গেলে হাতছাড়া করা যাবে না একদমই!
ছবি: সংগ্রহ