ই-সোসাইটি I ইনস্টা হিস্টিরিয়া
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো ইনস্টারও রয়েছে নানা দুর্নাম। তবে এর উপকারের মাত্রাও কম নয়। যথাযোগ্য ব্যবহারে এটি হয়ে উঠবে যেন আলাদিনের আধুনিক চেরাগ!
ছবি তুলে কিংবা ভিডিও করে ঝটপট সারা দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার চলতি ট্রেন্ডে অন্যতম সেরা কান্ডারির নাম ইনস্টাগ্রাম। ডাকনাম ইনস্টা! তুমুল জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন শেয়ার করা হয় প্রায় ৭ কোটি ছবি ও ভিডিও। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০ কোটির বেশি! একধরনের ভার্চ্যুয়াল গণহিস্টিরিয়ায় পরিণত হওয়া এই নেটওয়ার্কের আবির্ভাব ২০১০ সালে। মূল উদ্ভাবক বারবন ইনকোর কেভিন সাইট্রোম ও মাইক ক্রেগনার হলেও বর্তমান মালিকানা ফেসবুক কিংবদন্তি মার্ক জাকারবার্গের মেটা ইনকো।
ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরার ‘ইনস্টা’ আর টেলিগ্রামের ‘গ্রাম’ নিয়ে নামধারণ করা নেটওয়ার্কটি ঘিরে রয়েছে নানা বিতর্ক। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো এর অনেকগুলো নেতিবাচক দিকের দেখা পায় মূলত অতিসচেতন অভিভাবক প্রজন্ম; অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্মের কাছে এর ইতিবাচক দিকের বিচ্ছুরণই বেশি: ইনস্টা ছাড়া তাদের যেন চলেই না! তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সতর্ক থাকা যে জরুরি, সে ব্যাপারে দ্বিমত নেই কারও।
ইনস্টার জাদু
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে শুরুতেই প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হয় অ্যাপটি। এ সময়ে ব্যবহারকারীর নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে করতে হয় সাইনআপ। তারপর চাইলেই আপনি জাঁদরেল রাষ্ট্রনেতা থেকে শুরু করে পছন্দের তারকা, এমনকি পাশের বাড়ির ছেলে বা মেয়েটি কিংবা দূরের-কাছের বন্ধু—যাকে খুশি করতে পারবেন ‘ফলো’, যদি তার ইনস্টা অ্যাকাউন্ট থাকে! অবশ্য ইনস্টা অ্যাকাউন্ট নেই, এমন বিখ্যাত ব্যক্তি বিরলই এ সময়ে।
যা করতে পারবেন ইনস্টায়
অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ছবি ও ছোট ভিডিও সম্পাদনা ও আপলোড করতে পারবেন।
চাইলে প্রতিটি পোস্টেই জুড়ে দিতে পারবেন ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ।
ফলোয়িং ও ফলোয়ারের মাধ্যমে অন্য ব্যবহারকারীদের পোস্ট সম্পর্কে থাকতে পারবেন আপ-টু-ডেট।
সাধারণত ইনস্টাগ্রামের পোস্ট সবার জন্যই উন্মুক্ত। তবে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের যেকোনো পোস্টকে ‘ব্যক্তিগত’ করে রাখতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সেই পোস্টগুলোর দেখা পাবেন শুধু তার ফলোয়াররাই।
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো ইনস্টায়ও ব্যবহারকারীরা একে অন্যের পোস্টে রিঅ্যাকশন দেওয়া, মন্তব্য ও বুকমার্ক করার সুবিধা পান।
ইনস্টার বিশেষত্ব হলো, এখানে কোনো ‘ডিসলাইক’ বাটন নেই; রয়েছে শুধু হান্ড্রেড পারসেন্ট ‘লাভ’ রিঅ্যাক্ট!
মেসেঞ্জার অপশন থেকে ইনস্টা-বন্ধুদের সঙ্গে করতে পারবেন বার্তা বিনিময়।
শুধু ব্যক্তিগত পরিচিতি বাড়ানোই নয়, ব্যবসার প্রসারেও দারুণ ভূমিকা রাখছে এই প্ল্যাটফর্ম।
ইনস্টার সুফল
ইনস্টাগ্রাম থেকে তারকারা নিয়মিতই বিপুল পরিমাণ আয় করেন—এমন খবরে যতটা না, এ মাধ্যমে সাধারণ মানুষেরও বেশ ভালো আয়-রোজগার রয়েছে জেনে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই? চলুন, জানা যাক আয়ের সহজ রাস্তা।
নিজ অ্যাকাউন্টের প্রচারণার জন্য অনেকেই টাকা খরচ করতে রাজি। তাই আপনার অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার বেশি থাকলে সে সুযোগ আপনিও নিতে পারেন। তার মানে, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রমোট করতে পারেন অন্যের অ্যাকাউন্ট বা পোস্ট।
যেকোনো ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট কিংবা ডিজিটাল সার্ভিসের বিষয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে তৈরি ও প্রচার করতে পারেন স্পন্সর পোস্ট। আপনার ইনস্টা অ্যাকাউন্ট যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকে, যদি অসংখ্য ফলোয়ার থাকে, তাহলে এমন প্রচারণায় আপনার কাছে ধরনা দেবে কোম্পানিগুলো।
নিজের আপলোড করা ছবি কিংবা ভিডিও বিক্রি করেও টাকা কামাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ‘শাটার স্টক’, ‘আইস্টক ফটো’সহ বেশ কিছু স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপলোড করে রাখতে পারেন মূল ছবি। সেগুলোর লিংক থাকুক ইনস্টায়। ডাউনলোডপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হবে আপনার হিসাবের খাতায়।
ইদানীং অনেক কোম্পানিই তাদের পণ্য কিংবা সার্ভিসের প্রচারণায় ব্লগার, ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুযোগ দেয়। ইনস্টায় আপনার তেমন নামডাক কিংবা যথেষ্ট পরিমাণ ফলোয়ার থাকলে আপনিও নিতে পারেন সেই সুযোগ। তাই ফলোয়ার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই!
যেভাবে বাড়াবেন ফলোয়ার
ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার বাড়ানোর কৌশল খুবই সহজ; তবে এ জন্য লেগে থাকতে হবে। করতে হবে মনোনিবেশ। চলুন, কিছু বুদ্ধি জানা যাক।
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি অবশ্যই ফেসবুকের মাধ্যমে বানাবেন। এ ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় ‘লগইন উইথ ফেসবুক’ অপশনটি দেখতে পাবেন। এই অপশন ব্যবহার করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলসের মাধ্যমে লগইন করুন। এর ফলে ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে যাদের ইনস্টা অ্যাকাউন্ট আছে, তারা পেয়ে যাবে আপনার ইনস্টাগ্রাম খোলার বার্তা। তাতে শুরুতেই পরিচিত বন্ধুরা আপনাকে সেখানে ফলো করতে শুরু করবে।
যে কেউই ইনস্টায় পেজ ফলো করার আগে সেই পেজের প্রোফাইলে চোখ বোলায়। আপনার প্রোফাইল ভালোভাবে অপটিমাইজড না থাকলে লোকে আগ্রহী হবে না। তাই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট অপটিমাইজ করুন।
ইনস্টাগ্রামে ভালো কোয়ালিটির ছবি ও ভিডিও আপলোড করুন। কোয়ালিটি খারাপ হলে কেউ ফলো করতে চাইবে না।
পোস্টে যথাযোগ্য হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। কেননা, হ্যাশট্যাগের সূত্র ধরেই নতুন অনেকের কাছে পৌঁছে যাবে আপনার পোস্ট।
ইনস্টাগ্রাম রিল বানিয়ে অল্প সময়ে বেশি ফলোয়ার বাড়াতে পারবেন। বলে রাখা ভালো, রিল আসলে ইনস্টার এমন একটি ফিচার, যেখানে ছোট ছোট ভিডিও বানিয়ে ব্যবহারকারীরা আপলোড করেন। ভিডিওগুলো আকর্ষণীয় হওয়া জরুরি।
যতটা সম্ভব অন্যদের পোস্টে লাইক দিন। করুন কমেন্ট। আর ট্রেন্ডিং টপিকের ওপর রাখুন নজর।
ইনস্টায় নিয়মিত পোস্ট আপলোড করুন। বেশি বিরতি দিলে ফলোয়ার বাড়ার বদলে বরং কমার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্ভব হলে করতে পারেন নিজের অ্যাকাউন্টের প্রমোশনও।
যতটা সম্ভব ইনস্টাগ্রাম স্টোরি আপলোড করুন। যদিও এসব স্টোরি ২৪ ঘণ্টা পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যায়, তবে এতে ফলোয়ার বাড়ার সম্ভাবনা অনেক।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইনস্টাগ্রামে রয়েছে প্রতিভা প্রচারের দারুণ সুবিধা। তবে খেয়াল রাখুন, কোনো পোস্ট যেন আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো বার্তা না দেয়।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট