রসনাবিলাস I শীতল স্বাদ
বড়দিনের আমেজ তখনো কাটেনি ঢাকার, নয়তো মিরপুর থেকে বনানী, তা-ও আবার সপ্তাহের কার্যদিবসের শুরুতে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া মুখের কথা নয়। পৌষের মাঝামাঝি ঢাকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় টিম ক্যানভাস এবার হাজির বনানীর ক্রিম অ্যান্ড ফাজেশীতে আইসক্রিম? অনেকের চোখ কপালে উঠলেও, বলে রাখা ভালো, শীতে আইসক্রিম খাওয়া যায় মন খুলে! খুব দ্রুত গলে যায় বলেই বোধ হয়! তবে শীতে যারা আইসক্রিম খেতে চান না, তারাও যেতে পারেন ক্রিম অ্যান্ড ফাজে। সুপার প্রিমিয়াম আইসক্রিম ব্র্যান্ড ক্রিম অ্যান্ড ফাজ ঢাকায়, ১১ বছর ধরে। তাদের বনানীর শাখাটাও বহুদিন ধরে। তবে ঠিকানা বদল হয়েছে একবার, তা-ও বেশি দিন আগে নয়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে সে সময়ে কেবল ঠিকানা বদল করেছে—এমনটা বলা সত্যের অপলাপ হবে। বদলেছে চরিত্রও। আগে কেবল আইসক্রিম পার্লার আর ক্যাফে হিসেবে থাকলেও, নতুনভাবে যোগ হয়েছে ইতালীয় ক্যাফের মেজাজ আর সামুদ্রিক ঘরানার খাবার।
ক্রিম অ্যান্ড ফাজের প্রবেশপথের দেয়াল পুরোটাই কাচের। সেই কাচ ভেদ করে দেখা গেল বড়দিনের আয়োজনের সাজসজ্জা—লাল-সাদা বেলুন। করোনার কারণে বসার ব্যবস্থায় কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ছাপ দেখা গেল, অনেকখানি জায়গা থাকলেও বেশ দূরত্ব বজায় রেখে প্রায় ২২ জনের বসার আয়োজন। সেটা পেরিয়ে কাউন্টার—আইসক্রিম আর কফির। সেখানেই আইসক্রিম তৈরির মার্বেল স্ল্যাব। এগুলোর পিছে উঁকিঝুঁকি দিলে দেখা যায় হেঁসেলের ব্যস্ততা। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যায় দেড়তলায়। সেখানেও বারোজনের বসার আয়োজন আছে আপাতত। সেটার পর ছোট্ট একটু জায়গা রয়েছে ধূমপায়ীদের বসার জন্য। সেখানেও জনা দশেক বসতে পারে অনায়াসেই।
প্রথমে সবার খাবার টেবিলে এসে হাজির হলো পুতিন। এই খাবারের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো সংযোগ নেই, রয়েছে কানাডার কিউবেক অঞ্চলের দেশান্তরি ফরাসিদের গ্রামীণ জীবনের গন্ধ। অবশ্য ঢাকার অভিজাত এলাকা ছাড়া সেই স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া মুশকিল। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর মাংসের কিমা, ওপরে চিজ সস। এই খাবার শহুরে আর সেখান থেকে আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে গত শতকের আটের দশকে। এরই অপভ্রংশ এখনকার ঢাকার ফুড অ্যারেনার হালের ক্রেজ—মিট বক্স।
এরপর এল ক্লাব স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বিছানায় শুয়ে। লেটুস, টমেটো, মুরগি আর ডিমের ক্ল্যাসিক্যাল রেসিপি। তবে আর দশটা স্যান্ডউইচের মতো ছেঁড়া ছেঁড়া মুরগির আঁশ নেই এখানে, গ্রিল করা টুকরো সব। আর সেটাই অন্য ক্লাব স্যান্ডউইচের সঙ্গে বিভেদের একটা রেখা টেনে দিয়েছে।
গ্রিলড অক্টোপাস স্যালাড এককথায় অসাধারণ। অক্টোপাসের রাবারি টেক্সচার; আর সঙ্গে লেটুস, টমেটো, পেঁয়াজ, অলিভ, শসা, ক্যাপসিকাম, ফেটা চিজের সঙ্গে নিজেদের তৈরি করা খানিক অল্প ঝাল টক, রিফ্রেশিং স্বাদের স্যালাড। বলে রাখা ভালো, সব খাবারের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছিল ওয়াইল্ড বেরি মোহিতো।
এরপর দৃশ্যপটে আগমন মেইন ডিশের—পোলো আলা ফুঙ্গি। স্প্যানিশ ভাষায় পোলো মানে মুরগি আর ফুঙ্গি মাশরুম। গ্রিল করা মুরগির বুকের মাংস, সঙ্গে ম্যাশ পটেটো, সঁতে করা সবজি আর ওপরে ক্রিমি মাশরুম সস। মুরগির টুকরো দুটো এখনকার ভ্লগারদের ভাষায় টেন্ডার, জুসি আর ইয়ামি! মাশরুম সসের সঙ্গে ম্যাশ পটেটো, একটুখানি মুরগি আর সবজি—সব একসঙ্গে মুখে নিলে যেন স্বাদের বিস্ফোরণ হয় মুখে।
আর আছে পিৎজা। শেফের রেকমেন্ডেশনের বারবিকিউ চিকেন উপেক্ষা করেই নেওয়া হলো সিফুড মারিনারা। পিৎজাগুলো থিন ক্রাস্টের আর ক্রিস্প। তার ওপরে ক্র্যাবস্টিক, স্কুইড, চিংড়ির পরিমাণও কম ছিল না, তাই এই পিৎজাকে মন্দ বলা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। পিৎজা সস আর মোজারেলা চিজের মেলবন্ধন ছিল অসাধারণ। জানা গেল, এদের সমস্ত পিৎজার মাপই এক, ১২ ইঞ্চি। ক্রিম অ্যান্ড ফাজের পাস্তা আর পিৎজায় ব্যবহার করা সব চিজই আসে বাইরে থেকে। আর মাংসের জন্য নির্ভর করে বেঙ্গল মিটের ওপরে।
অনেকটা শেষ হয়েও হইল না শেষের মতো, দর্শন পাওয়া গেল সি ফুড প্ল্যাটারের। চার-গ্রিল করা ম্যাকরেল, অক্টোপাস আর জাম্বো প্রন; ডিপ ফ্রাই করা ক্রাম্বড প্রন, ফিশ অ্যান্ড চিপস, সল্ট অ্যান্ড পেপার স্কুইড, ফ্রাই করা কাঁকড়া, ফিশ ফিঙ্গার মিলে বিশাল কারবার। এগুলোকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত স্যালাড, চিপস, রাইস আর সঁতে করা ভেজিটেবল। পেটে এগুলো ধরাবার আর সাধ্য ছিল না, তবে মধুরেণ সমাপয়েতের একটা ব্যাপার তো রয়েই যায়, তাই আইসক্রিম! সিগনেচার ক্রিয়েশনের থেকে হোয়াটস আপ বেরি নেওয়া হলো। স্ট্রবেরি আইসক্রিম, ব্রেড ক্রাম্ব, স্ট্রবেরি পাই ফিলিং, কলা আর ডার্ক চকোলেট চিপস দিয়ে তৈরি এই আইসক্রিমও ক্যানভাসে শিল্পীর তুলির শেষ আঁচড়ের মতো মুগ্ধকর ছিল।
ঠিকানা: বাড়ি ৪১, সড়ক ১১, বনানী, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ০১৭৩০৪৯২০৬৩।
ফেসবুক: creamandfudgebd
আল মারুফ রাসেল
ছবি: লেখক