তনুরাগ I ডিওড্রোব
দেহের ন্যাচারাল কুলিং মেকানিজমের ভিত্তিতে তৈরি এই ওয়্যারড্রোব। কখনো দূর করবে দুর্গন্ধ, কখনো শরীরে জোগাবে শীতলতা। প্রয়োজন বুঝে, ত্বকের রকমের অপশন নিয়ে লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
প্রথম বাণিজ্যিক ডিওডোরেন্ট বাজারে আসে ১৮৮৮ সালে। আর প্রথম বাণিজ্যিক অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট বা ঘাম নিরোধক ডিওডোরেন্ট ‘এভারড্রাই’ বাজারে আসে ১৯০৩ সালে। তবে আধুনিক অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট এসেছে ১৯৪১ সালের দিকে। প্রথম দিকে এই ডিওডোরেন্টগুলো নারীদের জন্য বাজারজাত করা হলেও ১৯৫৭ সাল থেকে পুরুষদের জন্যও আনা হয় ভিন্ন ভিন্ন ডিওডোরেন্ট।
বাজারে নানা রকমের ডিওডোরেন্টের কোনটা শরীর এবং প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই, তা জেনেই কেনা ভালো।
কেননা দারুণ সুগন্ধি ডিওডোরেন্টও ত্বকের সঙ্গে মানায় না; আবার কোনো ডিওডোরেন্ট হয়তো ঘাম কম হতে সাহায্য করে, কিন্তু গন্ধটা ঠিক ভালো না। তাই কেনার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—
নারীদের ক্ষেত্রে ডিওডোরেন্ট কেনার সময় সুগন্ধ দেখেই কেনা হয়। কেউ খুব মিষ্টি গন্ধ পছন্দ করেন, কারও উগ্র গন্ধ। যে রকম সুগন্ধ পছন্দ, সে রকম ডিওডোরেন্টই বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সব সময় নিজের পছন্দমতো সুগন্ধের ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা ভালো না-ও হতে পারে। যেমন, কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত উগ্র সুগন্ধি মেখে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। এমন সুগন্ধি বাছাই করা উচিত, যা সব জায়গাতেই ব্যবহারের উপযোগী।
ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করার মূল উদ্দেশ্য কী, তা মাথায় রেখেও প্রোডাক্ট বাছাই করা উচিত। যদি কারও ঘাম খুব বেশি হয়, তবে অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ডিওডোরেন্ট বাছাই করা ভালো। এতে অ্যালুমিনিয়াম সল্ট থাকে, যা শরীরের ঘাম শুষে নেয়। ত্বক খুব বেশি সংবেদনশীল হলে বেশি কেমিক্যালযুক্ত ডিওডোরেন্ট না বেছে প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া কী কী উপকরণ দিয়ে প্রোডাক্টটি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো জানা দরকার। যদি কোনো একটি উপকরণেও কারও অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সেটি এড়িয়ে চলা উচিত।
খেয়াল রাখতে হবে, যেন খুব বেশি ডিওডোরেন্ট ব্যবহার না হয়। শার্ট বা জামার বগলে বেশ কিছুটা কেমিক্যাল লেগে থাকলে ডিওডোরেন্টের পরিমাণ একটু কমিয়ে ব্যবহার করা ভালো। অনেকেই আছেন, যারা দিনে একবারই ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করেন। দিনের শেষে দেখা যায়, তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসছে। সে ক্ষেত্রে দিনের মাঝামাঝি সময়ে বা ৬-৮ ঘণ্টা পর আরেকবার ডিওডোরেন্ট দিয়ে নিলে দুর্গন্ধ নাকে লাগে না।
শরীরের ত্বকে দুই ধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থেকে ঘামের উৎপত্তি। শরীরচর্চা বা পরিশ্রমের ফলে যে ঘাম উৎপন্ন হয়, তা তৈরি করে একরিন গ্রন্থি। এই ঘামে দুর্গন্ধ নেই। এটা শরীর ঠান্ডা করে। আরেকটি গ্রন্থি হলো অ্যাপোক্রিন। এর উপস্থিতি বগল ও গোপনাঙ্গের আশপাশে, যেখানে রয়েছে অবাঞ্ছিত লোম। এখান থেকে যে ঘাম হয়, তাতে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন। এটা দুর্গন্ধহীন হলেও ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে সাধারণত জনপ্রিয় দুটি পণ্য হলো ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট। ডিওডোরেন্ট দুর্গন্ধ ঢেকে দেয়। এতে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী কিছু উপাদানও রয়েছে, আর অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ঘাম কমিয়ে দেয়। লোমকূপে একধরনের ছিপি এঁটে দেয় এটি। ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গ্যাভিন থমাস বলছেন, ‘আমাদের শরীরে যে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র কয়েকটা দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।’ এই ব্যাকটেরিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম স্টেফলোকোকাস হমিনাস। এই ব্যাকটেরিয়া যে প্রোটিন ব্যবহার করে, নতুন প্রজন্মের স্প্রে, রোল-অন ডিওডোরেন্টে তা প্রতিরোধী উপাদানই হবে দুর্গন্ধের নতুন অস্ত্র।
ডিওডোরেন্টের মূল কাজ হলো শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করা এবং সারা দিন তরতাজা রাখা। এ কারণে গোসল করার পরপরই ডিওডোরেন্ট দেওয়া ভালো। ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক কিছু উপায়ও আছে। প্রথমেই লক্ষ রাখতে হবে, কোনটা জরুরি, শুধু ডিওডোরেন্ট নাকি অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট? অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট বগল থেকে ঘাম এবং দুর্গন্ধ দুই-ই কমাতে পারে। আর ডিওডোরেন্ট সাধারণত শুধু গন্ধই কমায়। ডিওডোরেন্ট বগলে ব্যবহারের সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কাভারেজ। পুরুষদের ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের সময় একটু বেশি করে দেওয়া উচিত, যেন ঢেকে থাকা ত্বকেও সেটা পৌঁছাতে পারে।
কেউ যদি অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করেন, তবে তা ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেওয়া ভালো। সকালে উঠে আরেকবার মাখা যেতে পারে। ঘুমের মাঝে ঘাম কম হয় এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট সেট হতে পারে। ফলে পরের দিন ঘাম কম হয়। দিনের বেলা যখন অনেক ঘাম হয়, তখন অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট দিলে আসলে সেটা ধুয়ে যাবে। তাতে খুব একটা লাভ হয় না। শুকনো এবং পরিষ্কার ত্বকে অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট দেওয়াই ভালো। ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারের আগে ত্বকে অল্প একটু মাখিয়ে দেখতে হবে, তাতে কোনো অ্যালার্জি হয় কি না।
ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের তিনটি প্রকার রয়েছে—স্প্রে, স্টিক এবং রোল। অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট এবং সুগন্ধের কার্যকারিতা এই তিন ফরম্যাটের ওপর নির্ভর করে না; বরং ব্যবহৃত সূত্রের ওপর নির্ভর করে। স্প্রে ডিওডোরেন্ট অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত ডিওডোরেন্টে প্রোপেলিন গ্লাইকল নামের কম্পাউন্ড থাকে, যার কারণে বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা হতে পারে। এতে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমেরও ক্ষতি করতে পারে। রোল অন বা স্টিক ডিওডোরেন্টে প্রোপেলিন গ্লাইকলের মাত্রা বেশি থাকে। ডিওডোরেন্ট আর অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বহু ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যায়, কিন্তু লোমকূপ বন্ধ থাকলে তা শরীরের ভেতর জমতে থাকে। এর ফলে শরীরের কোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। এ ছাড়া অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের প্রধান উপাদান হলো অ্যালুমিনিয়াম। ফলে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। বারবার ডিওডোরেন্টের গন্ধ শুঁকলে অ্যাজমাও হতে পারে। নিয়মিত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করলে এসব বিষয় জেনে ব্যবহার করা নিরাপদ।
ছবি: ইন্টারনেট