ইভেন্ট I হেরিটেজ পল্লির পথচলা
যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশি শিল্প, কারুকাজ ও রকমারি ডিজাইনের পোশাকের শোরুম হেরিটেজ পল্লি। ২২ ডিসেম্বর বুধবার, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এ ব্লকের ৮ নম্বর সড়কে ২৩১ নম্বর বাড়িতে এর প্রথম শোরুম উদ্বোধন হয়। এটি মূলত বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্রাফ্টস ফাউন্ডেশনের একটি শাখা। ২০১৮ সালে এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ফ্যাশন ডিজাইনার টুটলি রহমানের প্রচেষ্টায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় যখন রাতদিন ঘরে বন্দি থেকেছি, তখন মাথায় এলো—এই ডিজিটাল যুগে কি পিছিয়ে পড়ছি? অনলাইনে যখন চোখের পলকে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া হয়, তখন আমি কেন বসে আছি! নিজ দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য। তাই ছয় মাস আগে অনলাইনে হেরিটেজ পল্লির কিছু কাজ শুরু করলাম। এতে দারুণ সাড়া পেলাম। প্রায় ৪০ বছর অনেক ধরনের কাজ করেছি, অথচ নিজের একটা ছোট আউটলেটও করিনি। হেরিটেজ আপাতত শুরু করলাম।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সীমা হামিদ। হেরিটেজ পল্লির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও তিনি। সীমা হামিদ বলেন, ‘আপনার সবাই জানেন, আমাদের হ্যান্ডিক্রাফট পণ্যগুলো গুণে ও মানে বিশ্ব দরবারে ভীষণ সমাদৃত। এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই তাদেরকে, যারা এই শহর, মফস্বল কিংবা গ্রামে থেকে এই শিল্পকে বংশপরম্পরায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি জানি, হাতে তৈরি জিনিস প্রতিস্থাপিত হচ্ছে অটোমেশন পণ্যের মাধ্যমে। ফলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য এ ধরনের একটি উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল ফ্যাশন শো। দেশীয় বহুলশ্রুত গানের তালে ১২ জন মডেল ৪টি ভাগে প্রদর্শন করেছেন টুটলি রহমানের ডিজাইন করা পোশাকগুলো। প্রতি পর্বে শাড়ি পরে হেরিটেজ পল্লির আঙিনা মাতিয়েছেন মডেলরা। প্রথমে লাল, সবুজ ও সাদা দেশীয় নকশায়, পরে সিল্কের সঙ্গে প্রজাপতির মোটিফের শাড়ি পরে করেছেন ক্যাটওয়াক। তারপর তারা জামদানির তিনটি হালকা রঙের শাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন র্যাম্পে। তা ছাড়া সিল্কের শাড়িতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের টেপা পুতুল, কাক, দুর্ভিক্ষ, নদী ও নারীর চিত্রও উপস্থাপিত হয়েছে শোতে। অনুষ্ঠানের গান পরিবেশন করেন স্বপ্নীল সজীব। উপস্থাপনায় ছিলেন সামিউল ইসলাম।
শুরুতে হেরিটেজ পল্লি ছিল একটি অনলাইনভিত্তিক স্টার্ট-আপ প্রকল্প। প্রাথমিক পর্যায়ে এর উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারিগরদের তাদের কারুশিল্প তৈরির মাধ্যমে উপার্জন নিশ্চিত এবং এই উপার্জনের মাধ্যমে তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করা। ২০২১ সালের মে মাসে ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে হেরিটেজ পল্লির প্রচার শুরু।
হেরিটেজ পল্লি ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ডিজাইনিং সমাধান। এখানে এক ছাদের নিচেই মিলবে ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি শাড়ি, কামিজ, টিউনিক, কুর্তি, গয়না, অ্যাকসেসরিজ, শোপিস ও হোম ডেকর। এগুলো টুটলি রহমানের ডিজাইন করা। মোটকথা, হেরিটেজ পল্লির আর্ট, ক্রাফট এবং সংস্কৃতি উপভোগ করার একটি চমকপ্রদ ঠিকানা। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ: facebook.com/heritagepalli। প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা বোর্ডে রয়েছেন ক্যানভাস সম্পাদক কানিজ আলমাস খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সারা যাকের, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ডিন নাশিদ কামাল, মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপারসন রুবানা হক, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট রোকেয়া সুলতানা, ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার মনজুর কাদের, বিএটির আইন ও বহির্বিভাগের প্রধান মুবিনা আসাফ, ব্যারিস্টার রিজওয়ানা ইউসুফ, রোটারি ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাদিরা মাহমুদ।
শিবলী আহমেদ
ছবি: হেরিটেক পল্লি