skip to Main Content
sushi-march-into

ফুড I ফিচার সুশি

 

মেকং নদী। হিমালয়ের চূড়া থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান চীনসহ এশিয়ার মোট ছয়টি দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এটি। একসময় এ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় ছিল মাছ শিকার করা। প্রায় বারো শ বছর আগে, শিকারে পাওয়া মাছ সংরক্ষণের তাগিদে দক্ষিণ এশিয়ার জেলেরা উদ্ভাবন করেছিলেন নতুন এক পদ্ধতি। মাছ প্রথমে লবণাক্ত করা হতো, তারপর ফারমেন্টেড তথা গাঁজানো ভাত দিয়ে মুড়ে দেয়া হতো। ভাতের ল্যাক্টো-ফারমেন্টেশন মাছকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করত। এই পদ্ধতিতে কয়েক মাস ধরে মাছ সংরক্ষণ করা যেত। খাওয়ার আগে মাছ থেকে ভাত ফেলে দিতে হতো। বেশ কয়েক বছর পর সেই মাছ ভাতসহ খাওয়া শুরু হলো। জাপানি ‘সুশি’ নামের খাদ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

১৮ শতকে সুশি মূলত ফাস্ট ফুড হিসেবেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই নামে যা খাওয়া হয়, তা পরিচিতি লাভ করে মূলত হানাইয়া ইয়াহাই নামের একজন শেফের মাধ্যমে। মাছ সংরক্ষণের জন্য তিনি ফারমেন্টেড ভাত নয়, বরং সয়া সসে মেরিনেট করে নিতেন। এতে করে খাদ্যবাজারে সুশির দাম কমে আসে। দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। তাই সুশির চাহিদাও বেড়ে যায়। তবে হানাইয়া ইয়াহাই-এর সুশির খাদ্যমান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে তা বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

জাপানে আজকাল সুশি কেবল একটি খাবারই নয়, রীতিমতো একটি শিল্প। নানা ধরনের সুশি তৈরি করেন তারা। যেমন ‘চিরাচি’। এটি মূলত এক বাটি ভাতের উপর মাছ। আরেক প্রকার সুশি রয়েছে, নাম ‘টোমাকি’। এটি হয় কোনাকৃতি। এ ছাড়া রয়েছে ‘ওশি’। এটি চারকোনা হয়ে থাকে। তবে যে ধরনের সুশিই হোক, বুঝে নিতে হবে যে সেটি মূলত এক টুকরো কাঁচা মাছ ভাতসহ রোল করা থাকে। এ ভাত রান্না কিন্তু খুব সহজ নয়। প্রথমে কাঠের প্যাডেল দিয়ে ভাতের সঙ্গে ভিনেগার মেশাতে হয়। এমনভাবে সেদ্ধ করতে হয়, যাতে ভাতের মধ্যে আঠালো ভাব থাকে, এবং মুখে তুলে নেয়ার সময় ভাতের দানা খুলে পড়ে না যায়। একই সঙ্গে মুখের ভেতরে যাওয়ার পর ভাতের প্রতিটি দানা যেন আলাদা হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। তাই একটি নির্ধারিত তাপমাত্রায় চৌকস হাতে সুশির জন্য ভাত রান্না করা চাই। ‘মাকি’ নামের এক প্রকার সুশি রয়েছে, যেগুলো মূলত সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে মোড়ানো থাকে। তবে যত প্রকার সুশিই হোক না কেন, এটি খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, হাত দিয়ে ধরে এক কামড়ে গিলে ফেলতে হবে।

সুশি ভোজের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা প্রয়োজন। কেননা, কাঁচা মাছে পরজীবী বাস করে, যা পরবর্তীকালে পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। এ সমস্যা দূর করার জন্য কাঁচা মাছকে হিমায়িত করে রাখতে হয়। ফলে কাঁচা মাছ থেকে কৃমি ছাড়াও অন্যান্য পরজীবী ধ্বংস হয়। তখন নিশ্চিন্তে সুশি ভোজ করা যায়। বর্তমানে জাপানের চৌহদ্দি পেরিয়ে সুশি ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশের রেস্তোরাঁর মেন্যু চার্টেও। গুলশান ২-এর ৫১ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির তিনতলায় রয়েছে জাপানি রেস্তোরাঁ টোকিও। সেখান থেকে সুশির স্বাদ চেখে আসতে পারেন। আর পথে বের না হয়ে ঘরে বসে সুশি চাইলে সার্চ করুন ‘সুশি সামুরাই’। সেখানে অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারি পাওয়া যায়।

 শিবলী আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top