ত্বকচর্চা I ত্বকের স্বাভাবিকতায়
সমস্যামুক্ত ও সুন্দর। তবে এমন ত্বকেরও প্রয়োজন পরিপোষণ, অভ্যন্তরীণ পরিপুষ্টি আর বাহ্যিক পরিচর্যা
এমন ত্বক, যা মাত্রাতিরিক্ত তেলে নয়, বিপজ্জনক শুষ্কও নয়। স্পর্শকাতরতার বালাই তাতে থাকে না একদমই। কমবেশি খুঁত থাকলেও তা খুব দৃষ্টিগোচর হবার মতো নয়। ত্বকের লোমকূপগুলো বেশ মিশে থাকে ত্বকের সঙ্গে। টি জোন যথেষ্ট আর্দ্র থাকলেও তৈলাক্ত কিংবা শুষ্কতার আধিক্য তাতে থাকে না। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই অন্যান্য ত্বকের তুলনায় উজ্জ্বল, মসৃণ ও কোমল দেখায় স্বাভাবিক ত্বক।
ত্বকের ধরন স্বাভাবিক কি না, তা নির্ণয়ের জন্য রয়েছে সহজ সব পদ্ধতি। বেশি যন্ত্রপাতির দরকার হয় না এ কাজে। বেয়ার ফেসড মেথড- এ পদ্ধতিতে ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হয় প্রথমে। তারপর ত্বকে কোনো ধরনের ময়শ্চারাইজার, সেরাম কিংবা ট্রিটমেন্ট না মেখে আধঘণ্টার অপেক্ষা। নির্দিষ্ট সময় পর সারা মুখ নয়, বরং নাক ও কপালের ত্বকে সামান্য উজ্জ্বল ভাব ফুটে উঠলেই বুঝতে হবে ত্বক স্বাভাবিক। ব্লটিং শিট মেথডও জনপ্রিয় ত্বকের ধরন যাচাইয়ের কাজে। মূলত ত্বকের বিভিন্ন অংশে ব্লটিং পেপার চেপে চেপে করা হয় এ পরীক্ষা। যদি পেপার নাক ও কপাল থেকে খুব সামান্য তেল তুলে নেয়, বুঝতে হবে ত্বক স্বাভাবিক।
প্রতিদিনকার পরিচর্যায়
সিটিএম- ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়শ্চারাইজিং। স্বাভাবিক ত্বকের যত্ন নেয়ার সর্বোত্তম উপায়। বহুল ব্যবহৃত এসব পদ্ধতির নিয়মমাফিক সঠিক চর্চা স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে যথেষ্ট। প্রতিদিন সকালে কোমল কিন্তু কার্যকর ক্লিনজারের ব্যবহার, সঙ্গে স্বাভাবিক ত্বকের উপযোগী উপাদানে তৈরি টোনার ছাড়াও নন-ইরিটেটিং এবং হাইড্রেটিং এএইচএ অথবা বিএইচএ এক্সফোলিয়েন্ট রাখতে হবে ত্বকের পরিচর্যায়। ময়শ্চারাইজার তো অবশ্যই। সকালে মনে করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই। এসপিএফযুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে, মাত্রা যেন নিদেনপক্ষে ৩০-এর ওপর হয়। নতুবা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য উপযোগী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে তৈরি ময়শ্চারাইজারও দারুণ উপকারী। এ ধরনের ত্বকের রাতের রূপরুটিনও প্রায় এক রকম। শুধু সানস্ক্রিনের বদলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেরাম ব্যবহার করলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে হায়ালুরনিক অ্যাসিড কিংবা রেনিটল সমৃদ্ধ সেরামগুলো স্বাভাবিক ত্বকের জন্য বেছে নেয়া যেতে পারে। এগুলো দিনের দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারাইয়ে কাজ করবে রাতভর। জোগাবে জরুরি পুষ্টি। ধরে রাখবে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
সপ্তাহান্তে
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন স্বাভাবিক ত্বকের এক্সফোলিয়েশন দরকার। স্ক্রাব কিংবা এনজাইম বেসড এক্সফোলিয়েটর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অপশন। স্ক্রাব ব্যবহারকারীরা জোজোবা বিডসযুক্ত পণ্যগুলো বেছে নিতে পারেন। আর এনজাইম বেসড এক্সফোলিয়েন্ট চাইলে ব্রোমেলাইন থেকে তৈরি পণ্যগুলো স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে দারুণ। ত্বকবান্ধব ফেসপ্যাকও ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে দুবার। অ্যাপ্রিকট খুব ভালো কাজ করে স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে। বেটা ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম আর সিলিসিয়াম যুক্ত অ্যাপ্রিকটের সঙ্গে সামান্য ফ্রেশ ক্রিম আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে তা ব্যবহার করা যায়। এটা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দিতে পারে। ত্বক কোমল ও তারুণ্যদীপ্ত করে তুলতেও দারুণ। অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে তা-ও ব্যবহার করা যেতে পারে। সার্কুলার মোশনে মিনিটখানেক ঘষে নিলে মৃত কোষ দূর হবে। ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও খুঁতহীন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য শসাও দারুণ। তা টুকরা করে কেটে নিয়ে মুখে মাখা যেতে পারে। মিনিটখানেক পর এর রস ত্বক শুষে নিলে মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই চলবে। এটা ত্বকের খোলা লোমকূপ বন্ধ করে দিতে সাহায্য করে। সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সপ্তাহে এক দিন গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে স্বাভাবিক ত্বকে। এই আলফাহাইড্রোক্সি অ্যাসিড ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে। ফলাফল উজ্জ্বল, মসৃণ ও নিখুঁত ত্বক।
পনেরো দিন পর
শুধু মুখত্বক নয়, গলা, ঘাড়, পিঠসহ পুরো শরীরের অন্যান্য অংশের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন পনেরো দিন অন্তর। বিটা আর আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড পিলের মিশ্রণ তৈরি ও ব্যবহার করা যেতে পারে ঘরে বসে। যা ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। দেবে দীপ্তিময় নতুন ত্বক।
মাসে একবার
অন্তত একবার ফেসিয়াল জরুরি। ভালো কোনো বিউটি স্যালনে হাইএন্ড সব ট্রিটমেন্ট ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সহায়ক। কেমিক্যাল পিল ট্রিটমেন্টও নেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারও হাতে।
উপযোগী উপাদান
স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে উপযোগী উপাদানগুলোর ব্যবহার এবং ক্ষতিকর উপাদানগুলো এড়িয়ে গেলেই ত্বকচর্চা আরও ফলপ্রসূ হবে। তাই পণ্য সংগ্রহের সময় সচেতন হওয়া জরুরি। ডাইমেথিকন স্বাভাবিক ত্বকের কোমল ও মসৃণ ভাব বাড়ায়। বাঁচায় ক্ষতির হাত থেকে। অ্যালগি এক্সট্রাক্ট হচ্ছে সামুদ্রিক উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত একধরনের উপাদান, যা স্বাভাবিক ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে যথেষ্ট কার্যকর। প্যানথেনল একধরনের প্রো-ভিটামিন বি-ফাইভ, যা আর্দ্রতা জোগাতে চমৎকার। বায়ো-অ্যাকটিভ হাইড্রেটিং উপাদান হিসেবে পরিচিত সোডিয়াম হায়ালুরনেটও স্বাভাবিক ত্বকে আর্দ্রতা সঞ্চার করতে সক্ষম। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কাজ করে উজ্জ্বলতা বাড়াতে আর মসৃণ করে তুলতে। তাই এসব উপাদানসমৃদ্ধ স্কিন কেয়ার প্রডাক্টগুলো স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে বেছে নেয়া জরুরি। এড়িয়ে চলা চাই বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল আর ইথানল। সোডিয়াম ও অ্যামোনিয়াম সালফেটও থাকুক বাতিলের তালিকায়। এই উপাদানগুলো ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। পারলে মিনারেল অয়েল সমৃদ্ধ প্রডাক্টও এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ, এটা স্বাভাবিক ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে উজ্জ্বলতা হারায় ত্বক। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের তেলও স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে দারুণ উপকারী। এ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার অয়েল হিসেবে সুইট আমন্ড, জোজোবা, হেম্পাসিড, সানফ্লাওয়ার আর কোকোনাট থাকুক তালিকায়। অন্যদিকে, এসেনশিয়াল অয়েল হিসেবে ল্যাভেন্ডার আর জেরানিয়ামই এ ধরনের ত্বকে বেশি জুতসই।
জাহেরা শিরীন
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস