ই-সোসাইটি I সোয়াইপ রাইট সোয়াইপ লেফট
অচেনা মানুষকে চেনা করে নেওয়ার জনপ্রিয় অ্যাপ। সেই অচেনাকে চিরচেনা নাকি ক্ষণকালীন সঙ্গী বানাবেন, সিদ্ধান্ত আপনার। তবে থাকা চাই সতর্ক
বলা হয়ে থাকে, জীবনযাপন যত আধুনিক হয়ে উঠছে, মানুষ পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তত। অ্যালিয়েনেশন বা বিচ্ছিন্নতাবোধ বাসা বাঁধছে অন্তরমহলে। ইতালিয়ান মাস্টার ফিল্মমেকার মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনির সিনেমাগুলোতে দারুণভাবে দেখা পাওয়া যায় এমন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বাস্তবতার। সে জন্যই ‘মাস্টার অব অ্যালিয়েনেশন’ বলে ডাকা হয় তাকে। কিংবা ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডের বিখ্যাত গানটি নিশ্চয়ই মনে আছে? ওই যে, ‘ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে/ যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে/ ঘুচে গেছে বেশ কাল সীমানার গন্ডি/ আ-হা-হা-হা…/ ভেবে দেখেছ কী/ তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে/ তারও দূরে/ তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে…’!
তবু হাপিত্যেশ করে কী লাভ! আধুনিক জীবনের নানা ব্যস্ততায় দেহ-মনে বাড়তে থাকা বিবিধ চাপ থেকে নিজেকে হালকা করে নিতে হাতের মুঠোতেই রয়েছে হরেক ডেটিং অ্যাপ। ‘টিন্ডার’ এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। অচেনা কাউকে চিরকালের কিংবা ক্ষণিকের জন্য সঙ্গী করে নিতে দারুণ সব ফিচারে সমৃদ্ধ এটি। ফ্রি ব্যবহারের পাশাপাশি বিশেষ সেবা পেতে রয়েছে সাবস্ক্রিপশন অপশনও। বাংলাদেশেও এই অ্যাপের বেশ প্রচলন রয়েছে।
টিন্ডারনামা
২০১২ সালে মূলত আমেরিকান প্রযুক্তি উদ্যোক্তা শন র্যাডের উদ্যোগে টিন্ডারের যাত্রা শুরু। এর মালিকানা মার্কিন ইন্টারনেট ও টেকনোলজি কোম্পানি ম্যাচ গ্রুপের। সামনাসামনি না দেখেই পছন্দমতো সঙ্গী বেছে নেওয়ার এই উদ্যোগ রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেখানে থাকা কাউকে পছন্দ হলে তার প্রোফাইলে গিয়ে ‘রাইট সোয়াইপ’ করলেই ‘লাভ’ রিঅ্যাক্ট পড়ে যায়। আর পছন্দ না হলে করতে পারেন ‘লেফট সোয়াইপ’। দুজনেরই যদি পরস্পরকে ভালো লেগে যায়, তাহলে তো ম্যাচিং হয়ে গেল!
প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যেই প্রতিদিন এক বিলিয়নের মতো ‘সোপাইপ’ রেকর্ড করে টিন্ডার। এর মধ্যে দিনে গড়ে ১১ বার এই অ্যাপে লগ-ইন করেন ব্যবহারকারীরা। ২০১৫ সালে পঞ্চম হায়েস্ট-গ্রসিং মোবাইল অ্যাপ হয়ে ওঠে এটি। ২০১৯ সালে অনলাইন স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের বার্ষিক ব্যয়সীমাও ছাড়িয়ে যায়। এর পরের বছর ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার এবং ৭৫ মিলিয়ন মাসিক অ্যাকটিভ ইউজার দলভুক্ত করে টিন্ডার। গত বছর দুনিয়াজুড়ে রেকর্ড ৭৫ বিলিয়নের বেশি ‘ম্যাচে’ ঘটকের ভূমিকা রেখেছে অ্যাপটি।
ব্যবহারবিধি
আইফোন বা অ্যানড্রয়েডের প্লেস্টোর থেকে ‘টিন্ডার’ অ্যাপ ডাউনলোড করে অ্যাকাউন্ট সেটআপ করুন। এ ক্ষেত্রে আপনার নাম, বয়স, প্রোফাইল ছবি, পেশা ও সংক্ষিপ্ত জীবনীর পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য যোগ করতে পারেন।
‘ম্যাচ’ বা পছন্দের সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রে টিন্ডার শুরুতেই আপনার অবস্থান শনাক্ত করবে। এরপর চেষ্টা চালাবে অন্যদের সঙ্গে ‘ম্যাচ’ ঘটানোর। আপনার সামনে ভেসে উঠবে এ রকমই কিছু প্রোফাইল।
কারও সঙ্গে ‘ম্যাচ’ হয়ে গেলে সেই বার্তা টিন্ডার আপনাকে জানিয়ে দেবে। তখন আপনারা পরস্পর চ্যাট করতে পারবেন। বাদবাকি তো আপনাদের বোঝাপড়ার ওপর! সো সিম্পল!
সাবধানের মার নেই
উন্মুক্ত ডেটিং অ্যাপ অন্ধের মতো ব্যবহার না করে কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। সাধারণত কিছু ব্যবহারকারী এটিকে একটি গুরুতর অনলাইন ডেটিং পরিষেবা হিসেবে ব্যবহার করে ইন্টার্যাক্ট করেন। বাকিরা আসলে স্রেফ বিনোদনের জন্যই বেছে নেন। তাই খেয়াল রাখুন:
টিন্ডারে কারও সঙ্গে ‘ম্যাচ’ হলে তার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করতে বা ডেটিংয়ে যাওয়ার আগে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
প্রথম দেখাটি কোনো পাবলিক প্লেসে হওয়াই ভালো। তারপর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে, বোঝাপড়া শেষে সামনে পা বাড়ানো হবে বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতীর পরিচয়।
স্রেফ ‘মজা করা’র উদ্দেশ্যেও যদি কোনো টিন্ডার ম্যাচের সঙ্গে ডেটিংয়ে যান, তবু তার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য ব্যক্তিজীবনে কাছের কোনো বন্ধু বা স্বজনকে জানিয়ে রাখুন।
ডেটিংয়ে কোনো রকম বিপদের আভাস পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের হেল্পলাইনে কল করুন এবং নিকটজনকে জানান।
অনলাইন ডেটিং অ্যাপ আপনার জন্য আতঙ্ক নয়, বরং আনন্দ ও স্বস্তির মাধ্যম হয়ে উঠুক। শুভকামনা রইল।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট