skip to Main Content

সাক্ষাৎকার I বডি পজিটিভিটি বুঝতে এখনো অনেক দেরি—সোবিয়া আমিন

চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
বডি পজিটিভিটি বুঝতে এখনো অনেক দেরি

—সোবিয়া আমিন
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার

ক্যানভাস: আর্কিটেক্ট থেকে বেকিং ওয়ার্ল্ডে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন কী ভেবে?
সোবিয়া আমিন: আসলে জানতাম না, আমার বেকিং কতটা ভালো, কিংবা ভালো না। প্রথম প্রথম আর্কিটেকচারেরই প্র্যাকটিস করছিলাম। অস্ট্রেলিয়া থেকে আর্টিটেকচারে পড়ে দেশে ফিরে আসার পর নতুন অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাদের জন্য কেক বানিয়ে নিয়ে যেতাম। তারা ভাবত, আমি বোধ হয় কিনে এনেছি কোথাও থেকে। যখন জানত, কেক আমারই বানানো, অনেকেই জানতে চাইত, বিক্রি করি কি না। ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট করলে দরদাম জানতে চাইত। ওখান থেকেই আমার বেকিংয়ে জার্নি স্টার্ট হলো।
ক্যানভাস: এ সেক্টরে আপনার কাজের বিশেষত্ব কী?
সোবিয়া: এই সেক্টরে আর্কিটেকচার ব্যাকগ্রাউন্ডই সম্ভবত আমার স্ট্রং পয়েন্ট। কারণ, এটাই আমাকে ক্রিয়েটিভিটি বা নিডনেস বজায় রাখতে তাড়না জোগায়। কেকের ফ্লেভার থেকে ডিজাইন পর্যন্ত—সবকিছুতে আমি অনেক কাস্টমাইজড করি। যদি ওয়েডিং কেক হয়, বউটা কী পরবে, ওদের ডেকোরেশন কেমন হবে, সারাউন্ডিং…সবকিছু বিবেচনা করে কেক ডিজাইন করি।
ক্যানভাস: কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মডেল হিসেবে আপনার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।
সোবিয়া: কনটেন্ট ক্রিয়েশনে আমার স্টাইলিং থেকে আর্ট ডিরেকশন পর্যন্ত—সব নিজেকেই করতে হয়। সেটও আমিই বানাই। মডেলিং যখন করি, এসব নিয়ে আমাকে তেমন চিন্তা করতে হয় না। জাস্ট লোকেশনে যেতে হয়, কেউ মেকআপ করিয়ে দেন, কেউ ছবি তুলে দেন। তবে কনটেন্ট ক্রিয়েটের জন্য আমাকে প্রচুর খাটতে হয়। এই ফিল্ডে আসার কথা আগে আর্কিটেক্ট হওয়ার কথাই ভাবতাম। বেকিং, মডেলিং, কনটেন্ট ক্রিয়েশন—এসব নিয়ে ভাবতামই না। তাই ব্যাপারটা আমার জন্য এক্সাইটিং ছিল। বাংলাদেশে প্রথম যখন মডেলিং করতাম, পেমেন্ট নিতাম না। কারণ, নিজেকে মডেল ভাবতাম না। তারপর ধীরে ধীরে যখন দেখলাম, আমার ফলোয়ার বাড়ছে, তা ছাড়া কাজটি করতে বেশ সময় ব্যয় হচ্ছে, তখন পেশাদারি হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করি।
ক্যানভাস: এ ক্ষেত্রে স্ট্রাগল কেমন ছিল?
সোবিয়া: আমি যে বার্তা দিতে চাই, আর মানুষ যেটা বোঝে—অনেক সময় তার মধ্যে একটা ফারাক থেকে যায়। এটা আমার জন্য স্ট্রাগল। যেমন অনেকেই আমাকে কাজে নিতে চায় আমি প্লাস সাইজ বলে। ব্যাপারটা আমার একদমই ভালো লাগে না। আমাদের দেশে বুঝতে আরও অনেক সময় লাগবে যে, এটা একটা ট্রেন্ডিং জিনিস বলেই আমি করছি, তা নয়; মানুষকে তার অবস্থান থেকেই নেওয়া উচিত। খুব কম অডিয়েন্সই এটা বোঝে। আশা করি, এ পরিস্থিতি বদলাবে।
ক্যানভাস: বডি পজিটিভিটি নিয়ে আপনার ভাবনা?
সোবিয়া: আমার ধারণা, বাংলাদেশে বডি পজিটিভিটি বুঝতে এখনো অনেক দেরি আছে! কারণ, আমি জাস্ট একজন প্লাস সাইজ, বডি পজিটিভিটি থিং—আমাকে এ রকম টোকেন হিসেবে অনেকে ব্যবহার করতে চায়। এটা আমার কাছে একদমই ভুল ভাবনা মনে হয়। খেয়াল রাখা দরকার, অনেকেই বিভিন্ন ডাইভার্স জায়গা থেকে আসতে পারে। এটাকে কেন কেউ কনসিডার করে না, আমি জানি না। নিজেকে আমি বডি পজিটিভিটির উদাহরণ মনে করি না। কারণ, বাংলাদেশে আমাকে যেভাবে দেখানো হচ্ছে, সেটাতে ভুল আছে।
ক্যানভাস: আপনি যেসব সেক্টরে কাজ করেন, সেখানে বাংলাদেশে নারীদের জন্য বিশেষ প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?
সোবিয়া: আমার ধারণা, এ দেশে আর্কিটেকচারে বেশির ভাগই পুরুষ। তাই নারীদের স্ট্রাগল অনেক বেশি। টপ পজিশন সব সময় অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক ফিল্ড, গ্লোবালি; বাংলাদেশ তো আরও অনেক পরের বিষয়। আপনি নারী হলে অধীনস্থরা কথা কম শুনতে চাইবে। নারীদের কথা অনেকে সিরিয়াসলি নিতে চায় না। টপ পজিশনে নারীদের যেতেই দিতে চায় না। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও মডেলিং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উইমেনসেন্ট্রিক ফিল্ড। তবু সামহাউ যারা আইডিয়াগুলো জাহির করেন, তারা মূলত পুরুষকেন্দ্রিক। যেমন ধরুন, কোনো কোম্পানির অ্যাড বানাতে হবে, নারী দিবসে কোনো মহিলার কাছ থেকে অপিনিয়ন না নিয়ে, পুরুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। নারীকে ওই জায়গাটা দেওয়া হয় না। আমার মনে হয়, এটা ওভারকাম করতে হলে সোসাইটিকে নারীদের জন্য ওই দরজাটা খুলে দিতে হবে, ‘আমি এটা বলতে পারি, এটা করতে পারি।’ ওই রেসপেক্টটা এখনো তেমনভাবে নেই।
ক্যানভাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
সোবিয়া: ভবিষ্যতে নিজেকে আরও গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে আমাকে দেখে আরও অনেক মেয়ে বিশ্বাস করতে পারবে, তাদের পক্ষেও সম্ভব। আমি মনে করি, এই সময়ের সৌন্দর্য হচ্ছে, আমি যে-ই হই না কেন, নিজের পথ নিজেই বেছে নিতে সক্ষম। আশা করি, এভাবেই ইচ্ছেমতো নিজের জীবন কাটাতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top