skip to Main Content

সাক্ষাৎকার I প্যানডেমিকের মধ্যেই ৪৫০% গ্রোথ অর্জন করেছি—রায়ানা হোসেন

চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
প্যানডেমিকের মধ্যেই ৪৫০% গ্রোথ অর্জন করেছি

—রায়ানা হোসেন
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইশো

ক্যানভাস: ফার্নিচার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার আইডিয়া কীভাবে পেলেন?
রায়ানা হোসেন: ডিজাইন ও ইনোভেশনের প্রতি আগ্রহ থেকেই আমি নিজের একটি ব্র্যান্ড গড়ে তোলার প্রেরণা পেয়েছিলাম, যেখানে ফাংশনালিটি ও অ্যাসথেটিকসের ওপর ফোকাস করা হবে। বাজার যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম, আন্তর্জাতিক মানের পণ্যের ব্যাপারে এখানকার গ্রাহকেরা খুব একটা অবগত ছিলেন না। তবে নতুন প্রজন্মের গ্রাহকদের রুচিবোধ যেহেতু ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, তাই তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বাজারে আরও বেশি অপশন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছিল। গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে উন্নত মানের পণ্য দেওয়ার এবং তাদেরকে আধুনিক ও বৈশ্বিক ডিজাইনের সঙ্গে পরিচিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই ‘ইশো’র যাত্রা শুরু।
ক্যানভাস: ‘ইশো’ প্রতিষ্ঠা করার গল্পটি কেমন?
রায়ানা: আমি বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ২০১৭ সালে ‘ইসো’র পথচলা শুরু। এ সময়ে মার্কেটের চাহিদা, ব্যক্তিমানুষের রুচি ও পছন্দ এবং লোকাল মার্কেটে আবেদন তৈরি করতে পারবে—এমন সম্ভাব্য ও মাপযোগ্য কনসেপ্টের ওপর বেশ সময় নিয়ে রিসার্চ করেছি। এমন একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি, যার মাধ্যমে গ্রাহকদের দৈনন্দিন জীবনে স্পেসের ব্যবহার এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতালাভের অনুরণন তৈরি করা যায়। তা ছাড়া আমাদের সব পণ্য স্থানীয়ভাবেই তৈরি করার ব্যাপারে ছিলাম বদ্ধপরিকর।
ক্যানভাস: কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে?
রায়ানা: নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শুরুর কয়েকটি মাস আমাদের সব ধরনের স্ট্রাগলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ফার্নিচার ক্রয়ের প্রশ্নে বাংলাদেশের বাজার ভীষণ ট্র্যাডিশনাল। ক্রেতার পছন্দরুচিতে প্রভাব ফেলতে পারবে, এ রকম বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। ডিজাইনে একেবারেই নতুন কিছু হাজিরের মধ্য দিয়ে গ্রাহকের পারসেপশন পাল্টে দেওয়ার এবং ইনোভেটিভ কিছু করার নিরন্তর চেষ্টা ছিল আমাদের।
ক্যানভাস: অন্যান্য ফার্নিচার ব্র্যান্ডের সঙ্গে ‘ইশো’র পার্থক্য কোথায়?
রায়ানা: একদমই নতুন নতুন ডিজাইন, কনসেপ্ট ও প্রোডাক্ট হাজির করার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার কাজ করছে ‘ইশো’। বাংলাদেশে আমাদের ইনিশিয়েটিভ ও ক্যাম্পেইনের মধ্য দিয়ে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরির কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ডিজাইনের ওপর ফোকাসের পাশাপাশি, পরিবর্তনশীল সমাজের আধুনিক প্রয়োজনীয়তার ওপর তথ্যনির্ভর গবেষণা অন্যদের চেয়ে আমাদেরকে আলাদা করে তুলেছে।
ক্যানভাস: ‘ইশো’ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
রায়ানা: ‘ইশো’কে একটি শীর্ষ ব্র্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছি, যেন বাংলাদেশের পাশাপাশি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মেও জায়গা করে নিতে পারি। আমাদের মূল্যবোধ ও শিকড়ের প্রতি সততা ধরে রেখে নিজেদের ক্রমাগত উন্নতি ঘটানোর পেছনে সময় ব্যয় করছি, যেন এর বার্তা বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে পারি।
ক্যানভাস: বাংলাদেশের ফার্নিচার বিজনেস সেক্টর কতটুকু নারীবান্ধব?
রায়ানা: যেকোনো ধরনের বৈষম্যের উর্ধ্বে এমন একটি ক্ষমতায়ন পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি আমি সব সময় আস্থা রাখি, যেখানে প্রতিভাকে শনাক্ত ও মূল্যায়ন করা হবে। বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসা এখন সময়ের ব্যাপার, বিশেষ করে তরুণীদের সামনে সুযোগ-সুবিধা ও সাপোর্ট বাড়ানোর প্রশ্নে। এটিকে ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে বিবেচনা করাটা লজ্জার। কেননা, তিন ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে ওঠা পরিবারে আমাকে কখনোই আলাদাভাবে দেখা হয়নি। বড় হওয়ার পেছনে লৈঙ্গিক পরিচয় কখনোই বাধা হওয়া উচিত নয়। ব্যক্তিগতভাবে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।
ক্যানভাস: আপনার ক্যারিয়ার জার্নি সম্পর্কে কিছু বলুন।
রায়ানা: আমার সৌভাগ্য, আমি একটি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নিয়েছি। এর ফলে বছরের পর বছর ধরে শিখতে পেরেছি, সফল ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে কী কী বাণিজ্য কৌশলের সাহায্য নিতে হয়। এটি আমাকে নিজের তিনটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে কাজে দিয়েছে। ঢাকায় বড় হয়ে হাইস্কুলের পাঠ শেষ করেছি টরন্টোতে। উচ্চশিক্ষা নিয়েছি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে আর্কিটেকচার ও ভিজুয়াল স্টাডিজে ডিগ্রি নেওয়ার পাশাপাশি হার্ভার্ডে তিন বছর কাটিয়েছি মাস্টার ডিগ্রির জন্য। সেখানে জিডিএস ও এইচবিএসের মাধ্যমে ডিজাইন ও বিজনেসের মধ্যে কোলাবরেশনের ওপর ফোকাস করা প্রোগ্রাম—হার্ভার্ডএক্সডিজাইনের কো-প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেখানেই উপলব্ধি করেছি, ডিজাইন হলো বিজনেসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং এটিকে সব ধরনের অর্গানাইজেশনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কোভিড-১৯-এর আগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু ‘ইশো’র। প্যানডেমিকের মধ্যেই আমরা ৪৫০% গ্রোথ অর্জন করেছি। মানুষের বায়িং প্যাটার্ন, কনজিউমার বিহেভিয়ার, রুচি—রাতারাতি অনেক কিছু বদলে যেতে দেখেছি। আর তা আমাদের আরও এগিয়ে দিয়েছে এবং ‘ইশো’র ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top