সাক্ষাৎকার I প্রযুক্তি খাতে উদাহরণ তৈরি করতে চাই—সামিরা জুবেরী হিমিকা
চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
প্রযুক্তি খাতে উদাহরণ তৈরি করতে চাই
—সামিরা জুবেরী হিমিকা
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বেসিস
ক্যানভাস: বেসিসের নবনির্বাচিত সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সংগঠন নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
সামিরা জুবেরী হিমিকা: নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংগঠনে আমাদের নেওয়া মানে, অনেক বড় একটা দায়িত্বভারের সম্মুখীন হওয়া। আমি মনে করি, ইন্ডাস্ট্রি শক্ত হলে, ইন্ডাস্ট্রি বড় হলে এর যত কোম্পানি আছে, তারা যত বড় হবে, বাংলাদেশের ইকোনমি তত বড় হবে, বাংলাদেশ তত ডিজিটাল হবে। সে জন্য ইন্ডাস্ট্রিকে আরও বড় করার ক্ষেত্রে আমরা টেকনোলজি কোম্পানিগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি, সেগুলো চিহ্নিত করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কাজ করছি, যাতে বাংলাদেশের উন্নতিও হয়, এবং সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার যাত্রায় আমরা যারা টেকনোলজি সেক্টরে আছি, নিজেদের দায়িত্বগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারি। সংগঠন হিসেবে বেসিসের (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) বেশ সুনাম আছে। বিশ্বের যেকোনো আইটি অ্যাসোসিয়েশন সাংগঠনিকভাবে যে উচ্চতায় পৌঁছাতে পেরেছে, আমরা বেসিসকে সেই স্ট্যান্ডার্ড বা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চাই, যাতে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্গানাইজড ও প্রমিজিং অ্যাসোসিয়েশনে পরিণত হয়।
ক্যানভাস: বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে নারী সংগঠকদের জন্য বিশেষ প্রতিবন্ধকতা কোনগুলো?
হিমিকা: টেকনোলজি সেক্টরে নারী উদ্যোক্তা ২-৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে সংগঠনে বা ট্রেড বডিতে আসেন খুবই কমসংখ্যক নারী। গত ৫-৬ বছরে তা-ও প্রতিটি বোর্ডে একজন করে হলেও আমরা নারী সংগঠক পেয়েছি। বাংলাদেশের যেকোনো সেক্টরেরই টপ লেভেলে নারীদের যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, প্রযুক্তি খাতেও একই বিষয়। তার বাইরে, টেকনোলজি ফিল্ডে আসলে আপডেটেড থাকতে হয়। আমি মনে করি, নারী হিসেবে একজন পুরুষের তুলনায় নিজেকে ডাবল প্রুফ করার প্রয়োজনীয়তা সব সময়ই থাকে। এর পাশাপাশি যেকোনো নারীর যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো তো রয়েছেই। এগুলো থেকে উত্তরণের প্রথম উপায় উদাহরণ তৈরি করা। যেমন ধরুন, আমি যদি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি, আরও দশটা নারী প্রেরণা পাবেন। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে সংগঠনে এমন পলিসি রাখা, যার ফলে নারী সংগঠকদের উঠে আসা সহজ হবে।
ক্যানভাস: সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন কীভাবে?
হিমিকা: সংগঠক হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা আমার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই রয়েছে বলে মনে করি। স্কুলের অর্গানাইজেশন বা ক্লাব থেকে শুরু করে, যেখানে আমরা ডিবেট করেছি, মিউজিক করেছি—সব জায়গাতেই আমার সাংগঠনিক গুণগুলো ছিল। তার বাইরে, আমি এর আগেও একবার বেসিসে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সে সময় আমি ছিলাম প্যানেলের সবচেয়ে কম বয়সী এবং একমাত্র নারী সদস্য। সহকর্মীদের কাছ থেকে তখন অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। আমি আসলে ট্রেড পলিটিকস বা ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকলাপ সম্পর্কে দারুণ অভিজ্ঞতা পেয়েছি তখন। তা ছাড়া নিজের কোম্পানি তো আছেই বেশ কয়েকটা, সেখানেও সাংগঠনিক স্কিল অ্যাপ্লাই করতে হয়।
ক্যানভাস: গিগা টেক লিমিটেড গড়ে তোলার গল্পটা জানতে চাই।
হিমিকা: গিগা টেক আমার পঞ্চম কোম্পানি। আগের প্রতিষ্ঠানগুলো কম-বেশি নিজেরাই ভালো করছে। নিজেই চলতে পারে এবং ভালো করে, এ রকম স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আমি সবচেয়ে বেশি এনজয় করি। গড়ে তোলার পর চেষ্টা করি সেখানে যেন এমন একটা টিম থাকে, যারা খুবই টেলেন্টেড। টিম তৈরিতে তাই অনেক বেশি মনোযোগ দিই। তারপরে যে কাজটা করা হবে, সেটার কোয়ালিটি, প্রসেস—এই সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে যখন দেখি, আমার বাইরেও অনেক লিডার বা টিম লিড তৈরি হয়েছে, যারা কোম্পানিটাকে চালাচ্ছেন, তখনই নিজেকে সফল মনে হয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে গিগা টেকেই এখন আমি বেশি সময় দিই। বাকি কোম্পানিগুলোও ভালো চলছে। গিগা টেক শুরু করেছিলাম ২০১৭ সালে। আগের কোম্পানিগুলো করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি, বুঝেছি; নিজে টেকনোলজি ব্যাকগ্রাউন্ডে পড়াশোনা না করলেও ২০০৮ থেকে টেকনোলজি-সংক্রান্ত প্রজেক্ট, প্রোডাক্ট, এমনকি কোম্পানি চালিয়েছি। সেই সব অভিজ্ঞতা গিগা টেকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি, গিগা টেক একটা এক্সাম্পল তৈরি করে বাংলাদেশে টেকনোলজিতে চমৎকার কাজ করবে।
ক্যানভাস: কখন এবং কেন ভাবলেন, এই সেক্টরে কাজ করবেন?
হিমিকা: ২০০৭ সালের কথা। আমি তখন বিবিসিতে ডেপুটি হেড অব কমিউনিকেশন হিসেবে কাজ করি। সে বছর বিবিসি থেকে একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলাম, যেখানে টেকনোলজির ব্যবহার ছিল প্রচুর। সেই প্রজেক্ট করতে গিয়ে দেখলাম, মানুষকে আসলে বাধা-চ্যালেঞ্জ পার হয়ে জীবনের অনেক চাওয়া পূরণ করার ক্ষেত্রে টেকনোলজি দারুণ সাহায্য করে। মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে টেকনোলজি অনেক তাড়াতাড়ি ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারে। এটা বোঝার পরই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যা-ই করব, টেকনোলজির মাধ্যমেই করব।