সাক্ষাৎকার I দৃপ্ত চলাচল I নারীর সার্বিক উন্নয়নে পাশে আছে ‘সিটি আলো’—মারিয়াম জাভেদ জুহি
চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
নারীর সার্বিক উন্নয়নে পাশে আছে ‘সিটি আলো’
—মারিয়াম জাভেদ জুহি
হেড অব সিটি আলো, সিটি ব্যাংক
ক্যানভাস: ‘সিটি আলো’র মূল উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম কী?
মারিয়াম জাভেদ জুহি: ‘সিটি আলো’র মূল উদ্দেশ্য নারীর পাশে থাকা, তাদের আত্মোন্নয়নে সাহায্য করা। বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রোডাক্ট এবং ব্যাংকিংয়ের বাইরেও অনেক সুবিধা এখানে রয়েছে, যেগুলো একজন নারীর অর্থনৈতিকসহ সার্বিক উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে তার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে।
ক্যানভাস: ‘সিটি আলো’ বিশেষ কী কী সুবিধা দিচ্ছে?
জুহি: ‘সিটি আলো’ নারীদের জন্য একটি পরিপূর্ণ ব্যাংকিং সার্ভিস। আমাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রতি মাসে ইন্টারেস্ট প্রাপ্তি ও জীবনবিমা সুবিধা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি সিটি আলো বিজনেস অ্যাকাউন্টে ১ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও ইন্টারেস্ট পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া আছে সিটি আলো আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড, যেখানে রয়েছে হেলথ ইনস্যুরেন্স এবং প্রতি ট্রানজেকশনে ক্যাশব্যাক ও রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়ার মতো আকর্ষণীয় সব সুবিধা। সিটি আলো ইসলামিক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে মুনাফা প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ সব সুবিধাই রয়েছে। ‘সিটি আলো’ থেকে একজন নারী ইনডিভিজুয়াল লোন ও বিজনেস লোন—দুটোই পেতে পারেন। এ ছাড়া সিটি ব্যাংক বিকাশের সঙ্গে কোলাবরেশনের মাধ্যমে লঞ্চ করেছে ন্যানো লোন, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যেকোনো প্রয়োজনে বিকাশ অ্যাকাউন্টেই তাৎক্ষণিকভাবে ১,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পেতে পারেন। এই ন্যানো লোন নারীদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা ইতিমধ্যে ১৫,০০০ বিকাশ গ্রাহককে লোন প্রদান করেছি, যাদের ৩৫% গ্রাহকই নারী।
ক্যানভাস: নারীদের আত্মোন্নয়নে ‘সিটি আলো’ কী ভূমিকা পালন করে?
জুহি: নারীদের জন্য ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন সেবা ছাড়াও ‘সিটি আলো’ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ সপ্তাহের একটি বিশেষ কোর্স। এ ছাড়া ‘সিটি আলো’র সোশ্যাল মিডিয়া পেজে নিয়মিত উদ্যোক্তাদের সাফল্যগাথা তুলে ধরা হয়। এতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হন। উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমাদের মেলার আয়োজনগুলোতে পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হয়ে থাকেন নারী উদ্যোক্তারা।
ক্যানভাস: নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কী পরামর্শ দিতে চান?
জুহি: আমার পরামর্শ থাকবে, তারা যেন ব্যবসায়ের প্রথম দিন থেকেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখেন। এর ফলে ভবিষ্যতে ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া তাদের জন্য অনেক সহজ হবে।
ক্যানভাস: ‘সিটি আলো’ ব্লগে কারা লিখতে পারে?
জুহি: ‘সিটি আলো’ সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ধারাবাহিকভাবে ‘আজকের উদ্যোক্তা’ নামে একটি ব্লগ প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে ‘সিটি আলো’র সঙ্গে যুক্ত নারী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসায়িক পথচলার নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে থাকেন।
ক্যানভাস: ‘সিটি আলো’র নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
জুহি: চলমান কর্মসূচিগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আমাদের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাগুলোকে একেবারে প্রান্তিক, গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। তাদের জন্য একটা অর্থবহ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
ক্যানভাস: বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর কতটুকু নারীবান্ধব বলে মনে করেন? প্রতিবন্ধকতা কোনগুলো?
জুহি: নারীবান্ধব ব্যাংকিং নিশ্চিত করতেই ‘সিটি আলো’ ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে। নারীদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা নিয়ে, তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ‘সিটি আলো’ কাজ করে যাচ্ছে। এখন অন্যান্য ব্যাংকও ‘সিটি আলো’র পথ অনুসরণ করে নারীবান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। তবে নারীদের আত্মোন্নয়নে আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ এখনো অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নারীদের প্রথমত আত্মনির্ভরশীল হওয়া প্রয়োজন। পরিবার ও পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান যতটা দৃঢ় হবে, তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথও হবে তত মসৃণ।
ক্যানভাস: আপনার ক্যারিয়ার জার্নি সম্পর্কে জানতে চাই।
জুহি: যোগাযোগ দক্ষতা, প্রেজেন্টেশন স্কিলকে আমি আমার শক্তিশালী দিক বলে মনে করি। আমার কর্মজীবন শুরু হয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কল সেন্টারে, মাত্র ৫,০০০ টাকা বেতনে। তারপর ২০০৬ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডে যোগদান করি। ২০০৯ সালে সিটি ব্যাংকে যোগদানের পর থেকে এখানেই কাজ করে যাচ্ছি। নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় এখানেও আমাকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। সিটি ব্যাংকের AMEX কার্ড লঞ্চ, HSI বিমানবন্দরে সিটি AMEX লাউঞ্জ চালু করা, সিটিজেম প্রায়োরিটি ব্যাংকিং এবং সিটি আলো নারী ব্যাংকিংয়ের মতো ৪টি বড় সফল প্রজেক্ট চালু করার সঙ্গে আমি জড়িত থাকতে পেরে গর্বিত। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমি একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে কাজ করছিলাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দায়িত্বের জায়গায় সব সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, একনিষ্ঠতা ও পরিশ্রম আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে।